বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Friday, October 18, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » ১২ হাজার ভরি সোনা যেভাবে গায়েব হলো

১২ হাজার ভরি সোনা যেভাবে গায়েব হলো 

1

সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি সোনার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। এদিকে, সোনা গায়েবের এ ঘটনায় আগে থেকেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলা চলমান রয়েছে। সেখানে সাত হাজার ভরির কিছু বেশি সোনার খোঁজ না পাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। মামলায় সোনা প্রকৃত গ্রাহককে না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় খোঁজ না পাওয়া সোনার প্রকৃত পরিমাণ নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর কুমিল্লায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমির (বার্ড) ৫৭তম বার্ষিক পরিকল্পনা সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, ‘সমবায় দাঁড়াতে পারছে না, কারণ সমবায়ীদের মধ্যে সমবায়ের মনমানসিকতার অভাব। সমবায়ীরা শুধু কমিটিতে ঢুকতে চায়, কী উন্নয়ন হলো সেটির দিকে তাদের লক্ষ্য নেই। তাছাড়া গ্রাহকের রাখা ১২ হাজার ভরি সোনার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’

ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ঘটনাটি তিন বছর আগের এবং প্রায় আট হাজার ভরি সোনা কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া গ্রাহকরা তুলে নিয়েছিল। পরে এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করে, যা এখনো বিচারাধীন আছে।

ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসানুল গনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ওই ঘটনায় ব্যাংকের একটি চক্র জড়িত ছিল এবং তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি সত্যি। ব্যাংকের কিছু লোক ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা এখন আদালতে বিচারাধীন আছে।

প্রসঙ্গত, সমবায় ব্যাংক মূলত একটি বিশেষায়িত ব্যাংক। সমবায় আইনের বিধান অনুযায়ী এটি সমবায় খাতে অর্থ সরবরাহকারী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি সমবায় সমিতির ছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে ঋণ দিতে পারে।

উপদেষ্টা কী বলেছেন?

কুমিল্লায় বার্ডের অনুষ্ঠানে গিয়ে এলজিআরডি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, সমবায় ব্যাংকের বহু সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে। যারা একসময় ব্যাংকে ছিলেন তারাই এগুলো বেদখল করে রেখেছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর কোথায় কী অবস্থা রয়েছে সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। সমবায় ব্যাংকের অবস্থা দেখতে গিয়ে জানলাম ১২ হাজার ভরি সোনার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তার বক্তব্য দেওয়ার পরপরই বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। নতুন তথ্য মনে করে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই কৌতূহলী হয়ে ওঠেন।

পরে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এর কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন, ঘটনাটি ২০২০ সালের এবং এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে ব্যাংকেরই আটজন কর্মকর্তার নামে মামলা করেছে দুদক, যা এখন আদালতে বিচারাধীন আছে।

কীভাবে গায়েব হলো এতো সোনা

ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর ব্যাংকের তরফ থেকে দুদককে জানানো হলে তারা তদন্ত শুরু করে।

তদন্তের পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তখনকার চেয়ারম্যানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সংস্থাটির একজন উপ-পরিচালক। এরপর পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়।

তখন মামলায় অভিযোগ করা হয় এসব ব্যক্তিরা ব্যাংক থেকে ২ হাজার ৩১৬ জন গ্রাহকের বন্ধক রাখা ৭ হাজার ৩৯৮ ভরি ১১ আনা সোনা আত্মসাতের চেষ্টা করেছে, যার তখনকার বাজার মূল্য উল্লেখ করা হয় ৪০ কোটি ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮৮ টাকা।

এর মধ্যে, ভুয়া ব্যক্তিকে গ্রাহক সাজিয়ে প্রায় সাড়ে এগারো কোটি টাকার সোনা তারা আত্মসাৎ করেন। এ মামলা এখনো চলছে।

কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ কোঅপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি নামের একটি সমবায় সমিতির সদস্যরা মোট প্রায় বারো হাজার ভরি সোনা ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণ গ্রহণ করেছিল।

এক পর্যায়ে ওই সমবায় সমিতি দেউলিয়া হয়ে যায়। এর মধ্যে করোনা মহামারি চলে আসে। সবমিলিয়ে যথাসময়ে ঋণ শোধ না করায় এক পর্যায়ে ব্যাংক সেই সোনা নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়।

ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক আহসানুল গনি বলেন, ব্যাংক তখন বলেছিল যে সমিতির সদস্যরা জমা রাখা সোনা লোন পরিশোধ সাপেক্ষে নিতে চাইলে নিতে পারবে। এ সুযোগটি নিয়েছিল কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তারা ভুয়া ব্যক্তিকে ওই সমিতির সদস্য সাজিয়ে ভুয়া রশিদ বানিয়ে লোন হিসেবে নেওয়া টাকা জমা দিয়ে সোনা তুলে নেয়।

মূলত সোনার বাজার দর অনেক বেশি হওয়ায় লোন শোধ করেই ভুয়া ব্যক্তিরা সোনা তুলে নিয়ে লাভবান হয়েছিল বলে জানান গণি।

তিনি বলেন, মামলার চূড়ান্ত চার্জশিটে সাবেক চেয়ারম্যান নাম ছাড়া বাকিদের নাম রেখেছিলো দুদক। চার্জশিটে নাম থাকা ব্যক্তিরা এখন জামিনে আছেন। তবে মামলাটি বিচারাধীন আছে।

অর্থাৎ ওই ব্যাংকের সোনা নিয়ে যা ঘটেছে তা হলো নারায়ণগঞ্জ কোঅপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটির সদস্যরা সোনা বন্ধক রেখে লোন নিয়েছিল।

পরে ওই নামেই ভুয়া রশিদ ও কাগজ তৈরি করে কর্মকর্তাদের যোগসাজশে লোনের টাকা ফেরত দিয়ে সোনা তুলে নেয় একদল ব্যক্তি। প্রায় আট হাজার ভরি তুলে নেওয়ার পর ব্যাংকের মধ্যে প্রকাশ হয়ে যায় ঘটনাটি।

ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক বলেন, তারা যেই নামের বিপরীতে যত টাকা লোন নিয়েছিল সেই টাকা কিন্তু দিয়েছিল ব্যাংককে। কিন্তু যারা এসব নামে এটি করেছেন তারা ছিল ভুয়া।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone