ভিমরুল কামড়ালে কী করবেন
খবরটা ভীষণ মর্মান্তিক। ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ভিমরুলের কামড়ে বাবা ও বোনের পর সাড়ে তিন বছর বয়সী সিফাত উল্লাহ মারা গেছে। গত ১২ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। পোকামাকড়ের কামড় আগে খুব একটা গুরুত্ব পেত না, তবে ইদানীং এ ধরনের ঘটনা গুরুত্ব পাচ্ছে এমন প্রাণহানির কারণে। জেনে রাখুন, ভিমরুল কামড়ালে কী করবেন।
ভিমরুলের বিষ আদতে কী
এটা একধরনের অ্যালক্যালাইন পদার্থ। এসিটাইলকোলিন ও হিস্টামিনের সঙ্গে আরও কিছু রাসায়নিক দিয়ে এই বিষ সৃষ্টি হয়। একটা ভিমরুল প্রতিবার হুল ফোটালে ২-৫ মিলিগ্রাম বিষ ছাড়ে। বয়সভেদে প্রতি কেজিতে ৫-১০ মিলিগ্রাম বিষ শরীরে ঢুকলে নির্ঘাত মৃত্যু। মানে কারও শরীরে ভিমরুল ১৫ বারের বেশি কামড়ালে তার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে যেতে পারে। ১০০-১৫০ গ্রামের বেশি বিষ শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকেজো করে ফেলতে পারে। আরেকটা ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, একটা মৌমাছি একবারই হুল ফোটাতে পারলেও একটা ভিমরুল কয়েকবার হুল ফোটাতে পারে।
ভিমরুল কামড়ালে কী হয়
আক্রান্ত স্থান ফুলে যায়, লাল হয়, ফুসকুড়ি ওঠে, দাগ হয়, ব্যথা হয়—এসব হচ্ছে প্রাথমিক লক্ষণ। তবে বিপজ্জনক লক্ষণগুলো হলো—
- ঘুম ঘুম ভাব হওয়া
- মাথা ঝিমঝিম করা
- সারা শরীরে চুলকানি
- শরীরে জ্বালাপোড়া
- সারা শরীরে বড় বড় বা ছোট ছোট লাল লাল চাকার মতো হওয়া
- চোখ লাল হওয়া
- বেশি বেশি ঘাম হওয়া
- ঠোঁট-জিব ফুলে যাওয়া
- শ্বাসকষ্ট
- ডায়রিয়া
আবার বিষের কারণে তীব্র অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ায় অ্যানাফাইলেকটিক শকও হতে পারে, তখন নিচের জরুরি লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়—
- রক্তচাপ আকস্মিক কমে যাওয়া
- দ্রুত হৃৎস্পন্দন
- পেটে-বুকে-মাথায় ব্যথা
- জ্ঞান হারিয়ে ফেলা
-
কী করতে হবে
- আক্রান্ত স্থানে হুল থাকলে তা খুব সাবধানে উঠিয়ে ফেলতে হবে
- জীবাণুনাশক সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে
- জ্বালা কমানোর জন্য ঠান্ডা সেঁক দেওয়া যেতে পারে
- জীবাণুনাশক ক্রিম লাগিয়ে রাখতে হবে
- ওপরে দেওয়া লক্ষণের যেকোনো একটি দেখা দিলে বা শিশু, বৃদ্ধ ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের বেলায় একটি ভিমরুল কামড়ালেও হাসপাতালে নেওয়া বাধ্যতামূলক
ভিমরুল ১-২ বার কামড়ালে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাড়িতে চিকিৎসা নিলেই ঠিক হয়ে যায়। তবে তিন বা তার বেশিবার কামড়ালে হাসপাতালে নেওয়া জরুরি। কারণ, বোলতা, মৌমাছি, ভিমরুল বা এ-জাতীয় পতঙ্গের মধ্যে ভিমরুলের বিষ সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক। এসব ক্ষেত্রে কোনো ঝাড়ফুঁক কিংবা কোনো ওঝা-কবিরাজের কাছে গিয়ে সময় নষ্ট না করাই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত।
ডা. হিমেল বিশ্বাস, নিউরোলজি বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, পান্থপথ, ঢাকা