জাকারবার্গের পৃথিবীতে বাস করছি আমরা
প্রযুক্তি ডেস্ক : মার্ক জাকারবার্গ ও ফেসবুক। নাম দুটো অতোপ্রতোভাবে জড়িত। জাকারবার্গের বয়স তখন ১৯, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনা করছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের মধ্যে ব্যবহারের জন্য ২০০৪ এর ৪ই ফেব্রুয়ারী তিনি তৈরি করেন একটি সোশ্যাল প্লাটফর্ম। তখন এটা পরিচিত ছিল “thefacebook” নামে। আজ ১০ বছর পর এটা পরিচিত “Facebook” নামে।
১৯ বছর বয়সী জাকারবার্গের বয়স এখন ২৯। কিশোর জাকারবার্গ কি জানতেন তিনি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং জগতে কত বড় প্রভাব ফেলবেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রজেক্ট এখন বিশ্বের ১ নম্বর সামাজিক প্লাটফর্ম। আপনি জানেন এর ব্যবহারকারী কত? ১.২৩ বিলিয়ন। যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭ বিলিয়ন। আর বর্তমানে ফেসবুকের ব্যবহারকারী বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে জাকারবার্গ কিনছেন একের পর এক কোম্পানি।
তার এই কোম্পানি অধিগ্রহণ আজ থেকে নয়, এটা শুরু হয়েছে জুলাই ২০০৭ থেকে। ফেসবুকের প্রথম অধিগ্রহণকৃত কোম্পানিটি ছিল “Parakey”। কত অর্থের বিনিময়ে তিনি এটা কিনেছিলেন তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। এই কোম্পানিটির কাজ ছিল ওয়েবের জন্য অফলাইন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি। এইতো শুরু! এর পর একের পর এক কিনেছেন সর্বমোট ৪৬ টি কোম্পানি।
বর্তমানে ফেসবুকের রেভিনিউ ৭.৮৭২ বিলিয়ন ডলার। এবং ক্রমেই তা বেড়ে চলেছে। এ পর্যন্ত ফেসবুকের বড় ধরণের অধিগ্রহণ গুলো হলো:
১। ConnectU (সোস্যাল নেটওয়ার্কিং) – ২০০৮ সাল – বিনিময় মূল্য ৩১ মিলিয়ন ডলার
২। FriendFeed (সোস্যাল নেটওয়ার্কিং অ্যাগ্রিগেটর) – ২০০৯ সাল – বিনিময় মূল্য ৪৭.৫ মিলিয়ন ডলার
৩। Spaptu (মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার) – ২০১১ সাল – বিনিময় মূল্য ৭০ মিলিয়ন ডলার
৪। Instagram (ফটো শেয়ারিং) – ২০১২ সাল – বিনিময় মূল্য ১ বিলিয়ন ডলার
৫। Face.com (ফেস রিকগনিশন প্লাটফর্ম) – ২০১২ সাল – বিনিময় মূল্য ১০০ মিলিয়ন ডলার
৬। Whatsapp (মোবাইল ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজিং) – ২০১৪ সাল – বিনিময় মূল্য ১৯ বিলিয়ন ডলার
৭। Oculus VR (ভার্চুয়াল রিয়্যেলিটি প্রোডাক্ট প্রস্তুতকারক) – ২০১৪ সাল – বিনিময় মূল্য ২ বিলিয়ন ডলার
zuck
দেখা যাচ্ছে ফেসবুকের জন্য অর্থ কোন বিষয় নয়। জাকারবার্গ চিন্তা করছেন ইন্টারনেটের ভবিষ্যত। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজিং অ্যাপ্লিকেশন হোয়াটসঅ্যপ কে জাকারবার্গ কিনেছেন ভবিষ্যত চিন্তা করেই। ১৯ বিলিয়ন ডলারের এই অধিগ্রহণ এ যাবত তাদের অধিগ্রহণ করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়। হবেই বা না কেন? এই ইনসট্যান্ট ম্যাসেজিং এর ব্যবহারকারী এখন বিশ্বে ৪৫০ মিলিয়ন।
হ্যাঁ, হতে পারে জাকারবার্গ প্রতিযোগিতায় নেমেছেন গুগলের সাথে। এটা এক দিক থেকে সত্যি বটে। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যবহৃত ১ নম্বর ওয়েব সাইট গুগলের। ২য় অবস্থানে জাকারবার্গের ফেসবুক। তবে সোস্যাল নেটওয়ার্কিং এর কথা চিন্তা করলে ফেসবুকের ধারে কাছেও কেউ নেই।
একটা সময় ছিল যখন ফেসবুকে নিজের প্রোফাইল থাকা না থাকা প্রেস্টিজ ইস্যু ছিল। এখন কিন্তু এটা নেই। জাকারবার্গ ও তার ফেসবুক এমনই ভেলকি দেখিয়েছে যে আশেপাশে আপনি যাকে দেখবেন তারও ফেসবুক প্রোফাইল খুঁজে পাওয়া যাবে। মানুষ ফেসবুক থেকে নিউজ আপডেট নিচ্ছে, গ্রুপ তৈরি করে গুরুত্বপূর্ণ ডিসকাশন করছে, পেজ তৈরি করে শেয়ার করছে নানা রকম তথ্য। ভেবে দেখুন, জীবনের সবকিছুই ফেসবুকের সাথে জড়িত। এখন আর কেউ ভাবে না, এটা না থাকলে কি হত বা কাউকে জিজ্ঞাসাও করে না তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে নাকি। এটা হয়ে গেছে জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ। অন্যদিকে ফেসবুকের নতুন নতুন অধিগ্রহণ বাড়াচ্ছে এর পরিধি। বাড়ছে এর জনসংখ্যা ১৮০৪ সালে পৃথিবীর যত জনসংখ্যা ছিল বর্তমানে ফেসবুকে তারও অধিক জনসংখ্যা রয়েছে।
পৃথিবী ও মানুষের ২ লক্ষ বছর লেগেছে জনসংখ্যা ১ বিলিয়ন করতে। সেখানে ১০ বছরে ফেসবুকের জনসংখ্যা ১.২৩ বিলিয়ন। বলা চলে পৃথিবীটা জাকারবার্গের। আমরা তার পৃথিবীতে বাস করছি মাত্র। আর ক্রমান্বয়ে বড় হচ্ছে জাকারবার্গের পরিধি।