ঘুম ঘরে নাক ডাকার ১১ স্বাস্থ্য ঝুঁকি
লাইফস্টাইল ডেস্ক : ঘুমের মধ্যে ঘর কাঁপিয়ে নাক ডাকা শুধুই একটি সমস্যা নয়। এটার পেছনের কারণগুলোর ফলশ্রুতিতে যেসব স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে তা আপনার আয়ু অর্ধেকে নামিয়ে দিতে পারে। এই সমস্যা হৃদরোগ বা বিষণ্ণতার মতো ভয়াবহ রোগ তৈরি করতে পারে। এমনি কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা জেনে নিন।
স্ট্রোক
স্ট্রোকের সঙ্গে নাক ডাকার পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। ঘুম নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, যারা উচ্চ শব্দে নাক ডাকেন তাদের ঘাড়ের প্রধান দুই ধমনী- যে দুটো মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ করে সেগুলোর ছিদ্র অতিরিক্ত চর্বির কারণে ছোট হয়ে যায় যাকে বলে ক্যারোটিড অ্যাথেররোসক্লেরোসিস। এর ফলে ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে। ঘুমের মধ্যে যারা যতো জোরে এবং যতো দীর্ঘ সময় নাক ডাকেন তাদের এরকম স্ট্রোকের ঝুঁকি ততো বেশি।
এই ঝুঁকি থেকে বাঁচতে আপনার সঙ্গীর মাধ্যমে জানতে চেষ্টা করুন- দিনের বেলা আপনি কতো ঘুমাচ্ছেন, ঘুমের মধ্যে আপনার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় কি না অথবা উচ্চরক্ত চাপের মতো অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে কি না।
হৃদরোগ
ঘুমের মধ্যে কিছু সময়ের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ থাকার সঙ্গে হৃদরোগ যেমন: উচ্চ রক্তচাপ, মহাধমনীতে সমস্যা ইত্যাদির সম্পর্ক রয়েছে। আর এর পরিণতি হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের মধ্যে যাদের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার সমস্যা রয়েছে তাদের ছোটখাট বা কখনো মারাত্মক হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি রয়েছে। তবে ফুসফুসে বাতাস চলাচল স্বাভাবিক করার নানা চিকিৎসার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
হৃদপেশীর অনিয়মিত সঙ্কোচন
ঘুমের মধ্যে যারা দীর্ঘ সময় নাক ডাকেন বা শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন তাদের হৃদপেশীর অনিয়মিত সঙ্কোচন প্রসারণের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা হৃদপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত করে। এ সমস্যা দীর্ঘ দিন ধরে চললে বাম অলিন্দ অস্বাভাবিক স্ফীত হয়ে যেতে পারে।
মুটিয়ে যাওয়া
শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যার কারণে মুটিয়েও যেতে পারেন। ঘুমের মধ্যে যখন বাতাস ভেতরে যেতে বা বের হতে চায় তখন গলা বন্ধ হয়ে যায়। এতে পাকস্থলির ভেতরে চাপের ভারসাম্য থাকে না।
দুর্ঘটনা
নাক ডাকা বা ঘুমের সমস্যার এটা সবচেয়ে মারাত্মক ঝুঁকি। নাক ডাকা বা ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার সমস্যার কারণে অনেকে একেবারে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পড়েন। দিনের বেলা স্বাভাবিক চলাফেরা বিঘ্নিত হয়। বিশেষ করে ড্রাইভিংয়ের সময় ঘুমিয়ে পড়লে তো সর্বনাশ! এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের দিনের বেলাটা ঘুম ঘুম কাটে তাদের গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কা বেশি।
মানসিক সমস্যা
ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার ফলে ভালো ঘুম হয় না। এ কারণে অনেকেই বিষণ্ণতায় ভোগেন, মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে ঘুমের মধ্যে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়া, নাক ডাকা এবং বিষণ্ণতা এই তিন সমস্যা প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত।
মাথাব্যথা
আপনি কি নিয়মিত মাথাব্যথা নিয়েই ঘুম থেকে জাগেন? তাহলে নিশ্চিত হোন যে, আপনি ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন। যারা অতিমাত্রায় নাক ডাকেন এবং সকালবেলা মাথাব্যথা নিয়ে বিছানা ছাড়েন তাদের ঘুমের নানা ধরনের সমস্যা, যেমন: অনিদ্রা এবং ঘুমের মধ্যে হঠাৎ শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো সমস্যা বেশি হয়।
বহুমূত্র
রাতে শোয়ার পর বার বার প্রস্রাবের বেগ- এই সমস্যাকেই বলে নকচুরিয়া বা নিদ্রাকালীন বহুমূত্র। মূত্রথলীর নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে অনেকের বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ মানুষের এ সমস্যা বেশি হয়। এটার সঙ্গে নাক ডাকারও সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া ৫৫ বছরের বেশি বয়সী যারা প্রস্রাবের জন্য বারবার ঘুম থেকে জাগেন তাদের প্রোস্টেট স্ফীত হওয়া এবং ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে।
যৌন সম্পর্কে অতৃপ্তি
নাক ডাকা লোকেরা যৌন জীবনে তৃপ্ত নন। এমনকি তাদের অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকলেও এই অতৃপ্তি হতে পারে শুধু নাক ডাকার সমস্যার কারণে। এমনকি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কেও অনীহা তৈরি হতে পোরে।
ভ্রুণে সমস্যা
ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণে শেষ তিন মাস নাক ডাকেন অনেক গর্ভবতী। তবে এসময় সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হলো- এতে করে ভ্রুণে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত ওজন
মোটা লোকের অর্ধেকই ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন। গলার চারপাশে মাংস বেড়ে যাওয়ার কারণে এ সমস্যা দেখা দেয়। তবে তাদের জন্য সুসংবাদ হচ্ছে, ওজন কমাতে পারলে এ থেকে মুক্তি মিলবে।
যারা হালকা নাক ডাকেন যাদের নাক ডাকার শব্দ সমধুর, ঐক্যতানের মতো তারা একটু চিকিৎসা নিলেই ফিরে পাবেন সুন্দর ঘুম।