কোন পথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি
এইদেশ এইসময়, ঢাকা : রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়ার একীভূত হওয়াকে স্বীকৃতি না দিতে গত শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ১০০টি এবং বিপক্ষে ১১টি ভোট পড়ে। চীন, ভারত ও বাংলাদেশসহ ৫৮টি দেশ এই ভোটদানে বিরত থাকে। ভোটদানে বিরত থেকে বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ যোগ না দেওয়ায় সোমবার দুঃখ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র।
যদিও বাংলাদেশের প্রচলিত পররাষ্ট্রনীতি আমেরিকা ও ইউরোপমুখী। তাই পর্যবেক্ষক মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তা হলে কোন পথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম মনে করেন, রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়ার একীভূত হওয়ার বিরোধিতা করে সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবে ভোট না দিয়ে বাংলাদেশ যথার্থ কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এর তীব্র সমালোচনা করেছে।
ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা প্রকাশ্যেই বাংলাদেশের ভূমিকার সমালোচনা করেন। অন্যদিকে ভোটদানে বিরত থাকায় এর এক দিন আগে, অর্থাৎ রোববার, বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানায় রাশিয়া। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভূমিকা কোন দিকে যাচ্ছে, এর ফল কী হতে পারে তা নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি তার দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘‘রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়ার একীভূত হওয়ার বিরোধিতা করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবে ভোট না দিয়ে বাংলাদেশ যথার্থ ভূমিকা নিয়েছে। এ অবস্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশ পররাষ্ট্রনীতি থেকে বিচ্যুত হয়নি’’। তিনি বলেন, ‘‘জি-৭৭ ও জোট নিরপেক্ষ দেশের সদস্য হিসেবে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমরা কারও পক্ষে অবস্থান নেই না। কাজেই এ নীতি থেকে আমরা সরে আসিনি। তাই আমরা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভোটদানে বিরত থেকেছি’’।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার অবস্থানের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে কোন দেশ খুশি হলো, কিংবা কোন দেশ নাখোশ হলো তা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই’’।
ওদিকে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্ট্যাডিজ-এর প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) এম মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘‘ক্রিমিয়া ইস্যু নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে একটি মেরুকরণ স্পষ্ট হচ্ছে। আর বাংলাদেশ রাশিয়া এবং ভারতের দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রচলিত পররাষ্ট্রনীতি আমেরিকা ও ইউরোপমুখী। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ হয়েও আরেকটি ছোট রাষ্ট্রের অখ-তার পক্ষে অবস্থান নেয়নি, যা নতুন করে ভাববার বিষয়’’।
তিনি বলেন, ‘‘আমেরিকা এরই মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখালেও বাংলাদেশের এই অবস্থানকে ইউরোপ এবং আমেরিকা কিভাবে নেবে তা বুঝতে আরো কিছুটা সময় লাগবে’’। তার মতে, ‘‘এর ফলে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক এবং সমন্বিত সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রধানত ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে। তাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে ক্রিমিয়া নিয়ে বাংলাদেশের ভূমিকা নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।