আইপিএল-এ আলো ছড়াতে চান সাকিব
স্পোর্টস ডেস্ক : ২০১১ সাল থেকে কোলকাতা নাইট রাইডার্সের ঘরের ছেলে হয়ে গেছেন সাকিব আল হাসান। ইনজুরির কারণে আইপিএল’র সর্বশেষ মওশুমে খেলতে পারেননি। তারপরও আইপিএল’র ৭ম সংস্করণে কোলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর) নিলামে রেখে দিয়েছে সাকিবকে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি দিল্লি ডেয়ার ডেভিলসের সাথে নিলাম যুদ্ধে জিতে সাকিবকে কিনে নিয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখ রুপিতে। আইপিএল’র নিলামে ওঠা ৪ বাংলাদেশীর মধ্যে একমাত্র বিক্রি হয়েছেন সাকিব আল হাসানই।
আইপিএল-এ ২০১১ ও ২০১২ এই দুই মওশুমে সাকিব আল হাসান ১৫ ম্যাচে শিকার করেছেন ২৩ উইকেট, সেখানে রান তার ১২০! কেকেআর এর বিদেশি রিক্রুটদের মধ্যে ক্যারিবিয়ান সুনিল নারিন (৩১ ম্যাচে ৪৬ উইকেট) এবং প্রোটিয়া অল রাউন্ডার জ্যাক ক্যালিসের (৪৮ ম্যাচে ৩৮ উইকেট) পর তিনিই বোলিংয়ে সফল। ওয়ানডে এবং টেস্টের সেরা অল রাউন্ডার সাকিব সদ্য সমাপ্ত টি-২০ বিশ্বকাপে ৮ উইকেট এবং ১৮৬ রান করায় সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে অল রাউন্ডারদের র্যাংকিংয়ে উঠে এসেছে ২ এ। সে কারণেই আইপিএলএ এই বাঁ-হাতি অল রাউন্ডারকে ঘিরে বাংলাদেশ সমর্থকদের প্রত্যাশা একটু বেশিই। আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু হওয়া আইপিএল’র ৭ম সংস্করণে অংশ নিতে গতকাল ঢাকা ছাড়ার প্রাক্কালে আশার বাণীই শুনিয়েছেন সাকিব- ‘বড় একটা টুর্নামেন্টে সবারই প্রত্যাশা থাকে। খেলার মধ্যে আছি, তাই সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
আইপিএল-এ রাজ, মাশরাফি, আশরাফুল এবং তামিমের পর বাংলাদেশী ক্রিকেটার তিনি। তবে আইপিএল-এ বাংলাদেশের অন্য ক্রিকেটারদের যেখানে নেই কোন সুখস্মৃতি, সেখানে কোলকাতা নাইট রাইডার্সের সাফল্যে রেখেছেন অবদান সাকিব। ২০১১’র আইপিএলএ কেকেআর সেমিফানাইনালিস্ট, ২০১২ তে চ্যাম্পিয়ন শাহরুখ খানের দল- সাকিবের বোলিং পারফরমেন্সের কারণেই। এবার অপেক্ষাকৃত কম বাজেটে দল গঠন করেও দারুণ কিছুর প্রত্যাশা করছে কেকেআর সাকিব আছেন বলেই। আইপিএলএ বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার বলেই বাংলাদেশ সমর্থকদের চোখ থাকবে কেকেআর এবং সাকিবের ওপরই। সে প্রত্যাশা মেটানোর চেষ্টা করবেন বলে আবুধাবি যাত্রার প্রাক্কালে জানিয়েছেন সাকিব- ‘দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা গর্বের ব্যাপার। আমার মতো আরো কয়েকজন করতে পারলে ভালো হতো। তারপরও চেষ্টা থাকবে আগের দুইবারের চেয়ে আরো ভালো করার। এর আগে যে দুই আসরে খেলেছি, তাতে খারাপ করিনি, চেষ্টা থাকবে আরো যতটা ভালো করা যায়।’
এর আগে যে দুই মওশুমে কেকেআর-এ খেলেছেন, সেই দুই মওশুমে অধিকাংশ সময়ে কোলকাতাতে কেটেছে সাকিবের। ভারতের লোক সভা নির্বাচনের কারণে এবার আইপিএলএ’র ভেন্যু সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে ভিন্ন পরিবেশ এবং সংস্কৃতিতে খেলা কঠিন হবে না বলে মনে করছেন সাকিব- ‘আইপিএলে এর আগে বেশিরভাগ সময় কোলকাতাতেই থাকতে হয়েছে। মানিয়ে নিতে কোনো সমস্যা হয় না। সংস্কৃতি এক, ভাষাও এক। তবে অন্য ভেন্যুতেও কোনো সমস্যা হয় নাই। সবখানেই বাংলাদেশীদের পেয়েছি। ভিন্ন এই সংস্কৃতি আমার কাছে মজাই লাগছে। সবকিছু থেকে দূরে, মনে হয়েছে চাপ মুক্ত একটা জায়গা। মানিয়ে নিতে কোনো সমস্যা হয়নি কোথাও।’
আইপিএল-এ এবারো কোলকাতা নাইট রাইডার্সে বিদেশি কোটায় বোলার আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিন বিস্ময় সুনিল নারিন, সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো প্রোটিয়া অল রাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস। অধিকাংশ ম্যাচে সেরা একাদশে সুযোগ পাওয়ার দিকেই তাই তাকিয়ে সাকিব- ‘আমাদের মধ্যে ভাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সব ম্যাচে খেলতে পারলে সেটা হবে আমার জন্য ভাল।’
গত বছর ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (সিপিএল) খেলেছেন, এ বছর খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ এ। আইপিএলএ খেলে উড়াল দিতে হবে তাকে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগে। তবে আইপিএল-এ ম্যাচ উত্তেজনার সঙ্গে অন্য কারো মিল খুঁজে পাচ্ছেন না সাকিব- ‘পার্থক্য তো অবশ্যই আছে। আইপিএলের সঙ্গে তুলনা করা মুশকিল। আর অন্যান্য দেশে যেগুলো হয় সেগুলো খুব গোছানো। ওরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এই টি-টোয়েন্টিকে খুব প্রাধান্য দেয়।’ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছেন সাকিব- ‘বিপিএলটা হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি দলে চার-পাঁচজন বিদেশি খেলোয়াড় খেলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলা, এক সঙ্গে ড্রেসিং রুমে কাটানোর অভিজ্ঞতা বাড়বে ক্রিকেটারদের। যারা আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলেনি এখনো, তাদের জন্য সেই সুযোগ তৈরি হবে।