অনলাইন গোপনীয়তা রক্ষার হাতিয়ার ডিএনটি
অনলাইন ডেস্ক : ডু নট ট্র্যাক’ বা ডিএনটি৷ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে এটা একটা ভাল অস্ত্র৷ তবে ইন্টারনেট জগতের পুরোটা এখনো এই হাতিয়ারের আওতায় আসেনি৷
আজকাল কোনো কিছু খুঁজতে আমরা গুগলে চলে যাই৷ যেমন ধরুন, আপনার একটা ভাল কফি মেশিন দরকার৷ সেজন্য আপনি গুগলে গিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করলেন৷ হয়তো আপনি পেয়েও গেলেন অনেক তথ্য৷ এরপর বেরিয়ে গেলেন গুগল থেকে৷ ঘটনাটা এখানেই শেষ হতে পারতো৷ কিন্তু দেখা গেল, পরদিন আপনি যখন ফেসবুক ব্যবহার করতে গেলেন তখন আপনার চোখের সামনে আগের দিনের খোঁজা কফি মেশিন!
ভাবছেন, ফেসবুক কীভাবে বুঝতে পারলো যে, আপনি এই মেশিনটিই খুঁজছেন? উত্তরটা খুব সহজ৷ গুগলে যখন আপনি সার্চ করছিলেন তখন আপনার পছন্দের এই বিষয়টা চলে গেছে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থার কাছে৷ ফলে তারাই আপনাকে ঘুরে ফিরে এই পণ্যটা দেখাতে থাকে৷
ব্যবসা-বাণিজ্যের এই যুগে সবাই চাইবে তার পণ্য বেশি বেশি বিক্রি করতে৷ তাই তারা আশ্রয় নেবে বিভিন্ন পন্থার, এটাই স্বাভাবিক৷ সেটা হয়তো আপনার ভাল নাও লাগতে পারে৷ কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনি কী করতে পারেন?
একটা উপায় হতে পারে এই, আপনি ইন্টারনেট ব্রাউজারে গিয়ে ‘ডু নট ট্র্যাক’ অপশনটা চালু করে দিতে পারেন৷ তাহলেই আর আপনার যাবতীয় তথ্য বেচাকেনা করতে পারবেনা কেউ৷
২০০৯ সালে কয়েকজন গবেষক প্রথম এই ধরনের হাতিয়ারের কথা বলেন৷ এর পরের বছর মাইক্রোসফট তাদের ‘ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৯’ ভার্সনে এই ডিএনটি ব্যবস্থা চালু করে৷ পরবর্তীতে মোজিলা ফায়ারফক্স, সাফারি এবং অপেরা’ও এই ব্যবস্থা চালু করেছে৷
কিন্তু তারপরও পুরো ইন্টারনেট জগত এখনো সুরক্ষিত নয়৷ ফলে চিন্তিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিজিটাল অ্যাজেন্ডা বিষয়ক কমিশনার নেলি ক্রুস৷ তিনি এ বিষয়ে একটা সর্বজনীন নীতি তৈরির পক্ষে৷ এবং এজন্য তিনি ‘ডাব্লিউ৩সি’কে দায়িত্ব দিয়েছিলেন৷ ডাব্লিউ৩সি’র পুরোটা হচ্ছে, ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কনসোর্টিয়াম’৷ এটা ইন্টারনেটের মানরক্ষাকারী একটা আন্তর্জাতিক সংস্থা৷ প্রায় ৫০টি কোম্পানি ও ডাটা প্রাইভেসি বিশেষজ্ঞ এই সংস্থার সদস্য৷
ইইউ কমিশনার ক্রুস ডাব্লিউ৩সি’কে নীতিমালা তৈরির জন্য এ বছরের জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন৷ এরপর সেটা বাড়িয়ে অক্টোবর পর্যন্ত নেয়া হয়৷ এ সময়ের মধ্যে ডাব্লিউ৩সি নীতিমালার একটা খসড়া তৈরি করে৷ কিন্তু সেটা মনঃপূত হয়নি ইইউ কমিশনার সহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইইউ কর্মকর্তাদের৷
খসড়াটা দেখে সন্তুষ্ট নন জার্মানির কেন্দ্রীয় তথ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থাও৷ ডিডাব্লিউ’র কাছে প্রেরিত এক লিখিত বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, খসড়ায় নানা ফাঁক-ফোকর রাখা হয়েছে৷
জার্মানির এই প্রতিক্রিয়ার চেয়ে যেন এক ডিগ্রি উপরে মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশনের চেয়ারম্যান জন লিবোভিৎসের বক্তব্য৷ তিনি বলেন, ঐ খসড়ার ফাঁকটা এতো বড় যে, সেখান দিয়ে একটা ভার্চুয়াল ট্রাক চলে যেতে পারবে!
মাইক্রোসফট সহ অন্যান্য যারা ইতিমধ্যে ডিএনটি ব্যবস্থা চালু করেছে তাদের স্বাগত জানিয়েছেন ইইউ কমিশনার ক্রুস৷ তিনি বলেন, ‘‘গোপনীয়তা একটা মৌলিক বিষয়৷ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলি যদি এটাকে বিবেচনায় না নেয় তাহলে মানুষও তাদের বিশ্বাস করবে না৷ আর সেটা যদি হয় তাহলে তা ব্যবসায়ীদের জন্য বরং ক্ষতিরই কারণ হবে৷ কেননা অনলাইন ব্যবসার বাজারটা অনেক বড়৷ তাই অনলাইন প্রাইভেসি আর অনলাইন ব্যবসাকে একসঙ্গে হাতে হাত রেখে চলতে হবে৷”
আগামী বছরের শুরু থেকেই সার্বজনীন ডিএনটি ব্যবস্থা চালু হওয়ার কথা৷ কিন্তু সেটা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে৷ জার্মানির কেন্দ্রীয় তথ্য নিরাপত্তা সংস্থা মনে করছে, সময়সীমাটা ঠিক রাখা সম্ভব হবে না৷ ডাব্লিউতসি’র মধ্যে থাকা বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর লবি’র কারণে এই বিলম্ব হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
যদি শেষ পর্যন্ত এই সময়সীমা মানা সম্ভব না হয়, তাহলে ইইউ’র বর্তমান ইপ্রাইভেসি নির্দেশনায় পরিবর্তন আনা হতে পারে৷ ফলে কোনো ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহের আগে তার কাছ থেকে অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক করা হতে পারে৷ আর এর ব্যতিক্রম হলে এখন যেখানে একটা দেশের সরকার কোনো ওয়েবসাইটকে জরিমানা করতে পারে, পরিবর্তিত আইনে সে ক্ষমতা পাবে ইউরোপীয় কমিশনও৷