বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, December 22, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » প্রযুক্তি » তারবিহীন বিদ্যুৎ সরবরাহের আদ্যোপান্ত

তারবিহীন বিদ্যুৎ সরবরাহের আদ্যোপান্ত 

140417124509-large

প্রযুক্তি ডেস্ক : ওয়্যারলেস বা তারবিহীন প্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বে খুবই পরিচিত একটি শব্দ। বিদ্যুৎ শক্তি ব্যতিত আর প্রায় সকল প্রকার শক্তিই বিগত কয়েক দশকেই তার ছাড়াই (ওয়্যারলেস) এক যন্ত্র থেকে অন্য যন্ত্রে স্থানান্তর বা সরবরাহ করা সম্ভবপর হয়েছে। কেবল বাকী ছিল তাার বিহীন বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ। বিজ্ঞানীরা এবার তারবিহীন বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহের প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করে ফেলেছেন।

প্রায় সব ধরণের নিত্য ব্যবহার্য ইলেকট্রনিকস্ সামগ্রীই বর্তমানে তার ছাড়া শক্তি গ্রহণ করতে পারে। টেলিফোন, সেল ফোন, স্থানান্তরযোগ্য ডিসপ্লে, ট্যাবলেট পিসি, স্মার্ট ফোন এমন কি ব্যাটারীর মত নানান উদাহরণ রয়েছে আমাদের আশেপাশেই। ইন্টারনেটেও চলছে তারবিহীন (ওয়্যারলেস) পদ্ধতিতে। বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীরা বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহের ক্ষেত্রেও তারকে উপেক্ষা করার চেষ্টায় সফল হয়েছেন। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন ৫ মি দূরত্বের দুটি বিশেষভাবে তৈরী কয়েলের মধ্যে তার ছাড়াই আবেশ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ স্থানান্তর করা সম্ভব।

দ্যা কোরিয়া এডভান্সড ইনিস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনলজি (KAIST)এর নিউক্লিয়ার এবং কোয়ান্টাম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক চুন টি. রিম এবং তার দল ১৬ই এপ্রিল ২০১৪ তারিখে তারবিহীন বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ প্রযুক্তি প্রদর্শন করে দেখিয়েছেন। তারা একধরনের ‘ডাইপল কয়েল রেসোনেন্ট সিস্টেম (DCRS) তৈরী করেছেন যার মাধ্যমে আবেশিত বিদ্যুৎ শক্তি ৫ মিটার দূরত্বের ট্রান্সমিটার এবং রিসিভারের মধ্যে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়েছে।

অবশ্য আমেরিকার ম্যাসাচুটস ইনিষ্টিটিউস অব টেকনলজি (MIT)’র বিজ্ঞানীরা ২০০৭ সালে ‘কপল ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স সিস্টেম (CMRS)’ এর মাধ্যমে একটি ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরী করে ২.১ মিটার দূরত্বে তার বিহীন বিদ্যুৎ শক্তি স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়েছিলো । যার ফলশ্রুতিতেই বিজ্ঞানীরা তারবিহীন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে গবেষণায় আরও বেশি অগ্রসর হবার সুযোগ পায়।

তারবিহীন দূরত্বে বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহে CMRS পদ্ধতি ব্যবসায়িক ভাবে ব্যবহারে প্রযুক্তিগত কিছু সীমাব্ধতা ছিলো। এর কয়েল ষ্ট্রাকচার ছিলো বেশ জটিল যাতে আলাদা আলাদা চারটি কয়েল ব্যবহার করা হয়েছিল ইনপুট, ট্রান্সমিট, রিসিভ এবং লোড এর জন্য। আকার ছিল বড়, ট্রান্সমিটার এবং রিসিভারকে রেসোনেট করার জন্য উচ্চ তরঙ্গের (১০ মেগাহার্জ) প্রয়োজন হয়েছিল যার কারণে ট্রান্সফার এফিসিয়েন্সি গিয়েছিল কমে। তাছাড়া ২০০০ পরিমাণের কিউ ফ্যাক্টর রেসোনেন্ট কয়েলকে নিকটের তাপমাত্রা, আদ্রতা এবং মানুষের জন্য বিপদজনক করে তুলেছিলো।

অধ্যাপক রিম DCRS পদ্ধতি ব্যবহার করে এইসকল সমস্যার মোটামুটি একটা অর্থবহ সমাধানের চেষ্টা করেছেন। DCRS একটি স্বল্প সংখ্যাক কয়েল ব্যবস্থা যেখানে মাত্র দুটি ম্যাগনেটিক ডাইপল কয়েল থাকে। এর একটি হলো প্রাথমিক কয়েল যা একটি ম্যাগনেটিক ফিল্ডকে আবেশিত করে এবং অন্যটি সেকেন্ডারি কয়েল যা বিদ্যুৎ শক্তি গ্রহণ করে। জটিল ধরণের ফেরাইট কোর রডের মাঝে কয়েল প্যাচানো হয়। প্রাইমারি কয়েলে উচ্চ তরঙ্গের এসি কারেন্ট প্রবাহিত করলে ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরী হয় এবং তারপর লিংকেজ ম্যাগনেটিক ফ্ল্যাক্স সেকেন্ডারী কয়েলে ভোল্টেজ আবেশিত করে। এই ক্ষেত্রে কিউ ফেক্টরের পরিমাণ হয় মাত্র ১০০ এবং মাত্র ১০০ কিলোহার্জ তরঙ্গেও এটি কাজ করে।

গবেষক দলটি বেশ অনেকগুলি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বেশ সফল ফল পেয়েছেন। তারা ২০ কিলোহার্যের এসি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ৩ মিটার দূরে ১,৪০৩ ওয়াট বৈদ্যুতিক শক্তির সরবরাহ পান। তাছাড়া ৪ মিটার দূরত্বে পান ৪৭১ ওয়াট এবং ৫ মিটার দূরত্বে পান ১০০ ওয়াট বিদ্যুৎ শক্তির সরবরাহ। যথাক্রমে ৩ মিটার , ৪ মিটার এবং ৫ মিটার দুরত্বে প্রাপ্ত শক্তির ইফিসিয়েন্সি হলো ৩৬.৯%. ১৮.৭% এবং ৯.২%।

অধ্যাপক রিম দাবী করেছেন এই ডিসিআরএস পদ্ধতিতে ৫ মিটার দূরত্ব থেকেই তার ছাড়া একটি বড় এলইডি টিভি বা ৪০ ওয়াটের ফ্যানে বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন যদিও ব্যাবসায়িকভাবে বেশি দূরত্বে তার বিহীণ বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ এখনও খুব প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এই ব্যবস্থা বেশ ব্যয়বহুলও বটে, তথাপি ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ শক্তি সরবারহের এটাই হয়ে উঠবে সঠিক পদ্ধতি। আজকাল যেমন আমরা সর্বত্র দেখছি ‘ওয়াই-ফাই জোন (Wi-fi zone)’ ঠিক তেমনি আমরা একদিন অবশ্যই দেখবো বিভিন্ন স্থানে যেমন রেস্তোরায় বা রাস্তায় ইলেকট্রনিসক যন্ত্রপাতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য থাকবে ‘ওয়াই-পাওয়ার জোন (Wi-Power Zone)’। যেকোন স্থানে আমরা ইলেকট্রনিকস ডিভাইসগুলো ব্যবহার করতে পারব তারের ঝামেলা ছাড়াই এবং বারবার ব্যাটারী ব্যবহারের ঝামেলা থেকেও মুক্ত হয়ে।

অধ্যাপক রিমের দলটি গত মার্চে কোরিয়া হাইড্রো এন্ড নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানী লিঃ এর সাথে একটি গবেষণা প্রকল্প সম্পাদন করেছেন যেখানে তারা নিউক্লিয়ার পাওযার প্ল্যান্টে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং কন্ট্রোল ইকুইপমেন্টে দূর থেকে রিমোটলি বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছেন। তারা পাওয়ার বেস হতে ৭ মিটার দূরত্বে ১০ ওয়াট বিদ্যুৎ শক্তি সরবারহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই গবেষনার ফলাফল IEEE Transactions on Power Electronics এর মার্চ ২০১৪ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone