বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, December 22, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » ভণ্ড নবীর ফাঁসির দাবিতে উত্তাল রংপুর

ভণ্ড নবীর ফাঁসির দাবিতে উত্তাল রংপুর 

index
রংপুর
রংপুর

রংপুর প্রতিনিধি : নিজেকে নবী দাবিকারী ভণ্ড পীর ফিরোজ কবিরের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে পড়েছে রংপুর। সোমবার দুপুরে রংপুর সিটি বাজারের সামনে হাজারো মানুষ একত্রিত হয়ে ভণ্ড নবী ফিরোজ কবিরকে গ্রেফতার করে ফাঁসিতে ঝুলানোর দাবি জানান। বিক্ষোভ শেষে স্থানীয়রা ডিসি, এসপির কাছে স্মারকলিপি দেন।

ঈমান আকিদা সংরক্ষণ কমিটি ব্যানারে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের আহবায়ক ইউনুস আলী, যুগ্ম-আহবায়ক মোহাম্মদ আলী, সদস্য সচিব এটিএম গোলাম মোস্তফা, সদস্য মাহমুদুর রহমান রিপন,  খায়রুল ইসলাম, নাজমুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, আতাউল হক আল হক্কানী ও ইদ্রিস আলী প্রমুখ।

এসময় বিক্ষুব্ধরা ভণ্ড নবী ফিরোজ কবীরকে গ্রেফতার এবং তার দরবার স্থায়ীভাবে সিলগালা করে দরবারের সকল সম্পত্তি সরকারি কোষাগারে নেয়ার দাবি জানান।

স্থানীয়রা জানান, নিজেকে নবী দাবিকারী ব্যক্তি অগ্নিপূজারী। তিনি নিজেকে নবী-রাসুল দাবি করে নিজের নামে কালেমা পাঠ করে ধৃষ্ঠতা প্রদর্শন করেছেন। তিনি নিজের মুত্যুর তারিখ জনসম্মুখে ঘোষণা করে নিজেকে ভবিষ্যৎ বক্তা হিসেবে উপস্থাপন করে সহজ সরল মানুষকে ঠকাচ্ছেন। এছাড়া কোরআন হাদিসের বিকৃত অর্থ উপস্থাপন করে সে দুই ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য জনগণকে আহ্বান জানিয়েছে। এমনকি নিজেকে শেষ জামানার শেষ নবী ও জামানার মোজাদ্দেদ মাহবুবে সোবহানি বলেও দাবি করেছেন।

পরে ঈমাদ আকিদা সংরক্ষণ কমিটির প্রধান ইউনুস আলীর নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রথমে ডিসি অফিস ও পরে এসপি অফিস ঘেরাও করে স্মারক লিপি দেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, নিজেকে নবী দাবিকারী ফিরোজ কবিরকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

নবী দাবিকারী ফিরোজ কবীরের বিরুদ্ধে রংপুরের মাহিগঞ্জের বড় হাজরায় কবিরিয়া দরবার শরীফ স্থাপন করে অগ্নিকুণ্ডলী বানিয়ে কাঁচা কাঠ পুড়িয়ে অগ্নিপূজার মাধ্যমে রোগব্যাধী ভালো করা, নিজেকে বাংলাভাষাভাষিদের জন্য নবী রাসুল দাবি, সালামের পরিবর্তে দুই হাতের তালু একত্রিত করে বুকের মাঝে নিয়ে এসে (বৌদ্ধর্ধর্মের অনুকরণে) মাথা নোয়ানোর পদ্ধতি চালু করা, কালেমা তাইয়েবার সাথে নবীর নাম বাদ দিয়ে নিজের নাম সংযুক্ত করে ভক্তদের (নাউযুবিল্লাহ) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ফিরোজ কবির রাসুলুল্লাহ বলতে বাধ্য করা,  সুরা ইখলাসসহ বিভিন্ন আয়াতের মধ্যে যেখানে ‘আল্লাহ’ আছে সেখানে আল্লাহ না বলে ‘আনতাল্লাহ’(নাউযুবিল্লাহ) বলাসহ কোরআন ও হাদিসের অর্থ বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা, কোরআনের অর্থ বিকৃত করে সৃষ্টিকর্তা একাধিক বলে দাবি করা, হাদিসকে ভিত্তিহীন দাবি করে তার তরজমাকৃত কোরআনের অর্থই সঠিক বলে দাবি করা, এক হাতে কোরআন রেখে অন্যহাতে অনর্গল সিগারেট খাওয়া, পৃথিবীতে মুসলমান হিন্দু বলে কিছু নেই, সবাই সমান বলে দাবি করাসহ বিভিন্ন অনৈসলামিক কর্মকা-ের অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নারী শিষ্যদের যৌন নির্যাতন, আল্লাহকে পাওয়ার জন্য শিষ্যদের কুমারী ভোগে উদ্ধৃদ্ধ করা ও দরবার নির্মানের নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে নিজেকে নবী ঘোষণাকারী ফিরোজ কবীরের বিরুদ্ধে নিজের মৃত্যুর তারিখ হিসেবে ২০৩৪ সালের ১১ আগস্ট সকাল ৭ টা ২৫ মিনিটে ৬৬ বছর বয়সে ঘোষণা করা। মৃত্যুর পর  লাশ কবর না দেয় ও ৬ বা ৮ মাস লাশ কফিনে রাখার পর কফিন খুলে মৃতদেহ না পচে গেলে তা দিয়ে মাজার তৈরির নির্দেশ দেয়ার অভিযোগও এসেছে।

ফিরোজ কবীর দাবি করেন, তার নির্দেশ মানলে নামাজ-রোজা, হজ-যাকাত ছাড়াই মানুষ বেহেশতে যেতে পারবে। তার পায়ে সেজদা দিলেই পরকালের আজাব থেকে মুক্তি মিলবে। আয়ু বাড়বে। এমনকি যাকে খুশি ফিরোজ কবির আয়ু বৃদ্ধি ও হরণ করতে পারে বলেও জানা যায়। তিনি কোরআন শরীফকে শুধুমাত্র আরবী ভাষার একটি বই হিসেবে দাবি করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউনিয়নের জনৈক তৈয়বুর রহমানের পুত্র ফিরোজ কবির। তিনি বিমান বাহিনী থেকে চাকুরীচ্যুত হয়ে প্রথমে লালমনিরহাটের হাড়াঠি ইউনিয়নের শাহ আহম্মেদ কবির (র) এর নামে শহরের মিশন মোড়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে নিজেকে পীর বলে দাবি করে ব্যবসা করে আসছিলেন।

সেখানে অনৈসলামিক কর্মকা- ও অপকর্মের অপরাধে এলাকাবাসী ২০১০ সালে ফিরোজ কবীরকে স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর মোস্তফার নেতৃত্বে আটক করে গণধোলাই দিয়ে থানায় সোপর্দ করে। পরে সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে তিনি রংপুর মহানগরীর শালবনে এসে বসবাস শুরু করেন। এরপর ২০১১ সালের ১১ আগস্টে রংপুরের স্টেশন রোডের শাহী মসজিদের পাশে একটি তিনতলা ভবনের তৃতীয় তলায় আস্তানা গেড়ে আবারও পীর ব্যবসা শুরু করেন। এসময় তিনি নিজের নাম পরিবর্তন করে হযরত শাহ ফিরোজ কবীর (রহমতউল্লা) ওরফে দয়াল বাবা রাখেন।

সেখানে নিজস্ব কিছু লোকজনের মাধ্যমে কিছুদিনের মধ্যেই শহরের বিভিন্ন স্তরের প্রভাবশালী লোকদের ভক্ত বানান। এরপর ২০১২ সালের ১ মে রংপুর মহানগরীর সেন্ট্রাল রোডের ৯৬ নম্বর বাসা ভাড়া নিয়ে শাহানশাহ কবীরিয়া নামে দরবার শরীফের কার্যক্রম শুরু করেন। এক পর্যায়ে মাহিগঞ্জের বড় হাজরায় মাহিগঞ্জের এক হিন্দু ব্যক্তির ২৪ শতক জমি ক্রয় করে সেখানে গড়ে তোলেন শাহানশাহ কবীরিয়া নামের দরবার শরীফ। ২০১৩ সালের ১১ মার্চ দরবারটি আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভক্তদের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়।

২০১৩ সালের মাঝামাঝি কবীরিয়া দরবার শরীফের পীর ফিরোজ কবীরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্ম ও অনৈসলামিক কর্মকান্ডের বিষয়ে প্রথম বিরোধিতা করে দরবার শরীফের সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফিজ, সেক্রেটারি জিয়াউল হায়দার খান টিপু ও সদস্য সাদেকুল আলম। তারা বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, ডিসি, এসপি, র‌্যাবসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে সকল অপকর্মের বর্ণনা দিয়ে লিখিতভাবে আবেদন ফিরোজ কবীরের অপকর্ম বন্ধের দাবি জানান।

এ নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে তৎকালীন মাহিগঞ্জ পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এসআই আফওয়াজুল ইসলামকে তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে এসআই আফওয়াজুল ফিরোজ কবিরের বিরুদ্ধে আল্লাহ, ইসলাম ও হযরত মোহাম্মদ (স.) সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর উক্তি এবং তার অগ্নিপূজাসহ বিভিন্ন অনৈসলামিক কাজের সত্যতা পেয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর ফিরোজ কবির প্রশাসনের মধ্যে থাকা তার ভক্তদের দিয়ে তদন্ত রিপোর্টটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone