দ্রুতগতি সম্পন্ন নতুন গ্রহ বেটা পিকটোরিস বি.
প্রযুক্তি ডেস্ক : ঘূর্ণিচক্র দেখলে কি আপনার মাথা ঘুরে যায়? যদি হ্যাঁ হয় তবে কখনো বেটা পিকটোরিস বি. নামের অদ্ভুত একটি গ্রহে যাওয়ার কথা চিন্তাও করবেন না। কারণ এই গ্রহ প্রায় উন্মাদের মতো ঘোরে!
বিজ্ঞানীরা বলেন যে, প্রথমে তারা পৃথিবী থেকে অপেক্ষাকৃত ৬৩ আলোকবর্ষ দূরে সৌরজগতের বাইরে একটি বৃহৎ গ্যাস গ্রহের ঘূর্ণন পরিমাপ করেন। তাদের সুস্পষ্ট দাবী, এই গ্রহটি সৌরজগতের যেকোনো গ্রহের চেয়ে অত্যধিক জোরে ঘুরছে। বিষুবরেখা বরাবর যার গতি ঘণ্টায় ৫৬,০০০ মাইল (প্রায় ১০০,০০০ কিলো/ঘণ্টা)।
সৌরজগতের সবচেয়ে বড় ও দ্রুতগতিসম্পন্ন গ্যাস গ্রহ বৃহস্পতি। যা প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২৯,০০০ মাইল (৪৭,০০০ কিলো/ঘণ্টা) বেগে কক্ষপথে ঘুরছে, যেখানে পৃথিবী প্রায় ১০০০ মাইল/ঘণ্টা (১,৭০০কিলো/ঘণ্টা) বেগে কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে। বেটা পিকটোরিস বি. একবার নিজ অক্ষে আবর্তন করতে সময় লাগে ৮ ঘণ্টা, যেখানে বৃহস্পতি ১০ ঘণ্টা ও পৃথিবীর সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা।
বিজ্ঞানীরা সৌরজগৎ ছাড়াও ১,৮০০ টি গ্রহকে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু এই গ্রহগুলোর গাঠনিক উপাদান এবং নক্ষত্রদের ঘিরে এদের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে খুব কম তথ্যই জানা আছে তাদের। বেটা পিকটোরিস বি. এই গ্রহগুলোর মধ্যে অন্যতম সুপরিচিত একটি গ্রহ। কেন্দ্র নক্ষত্রের প্রভাবকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা খুব সহজেই এই গ্রহটি খুঁজে পায়।
নেদারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব লিডেনের জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষক প্রোফেসর বার্নহার্ড ব্রান্ডল বলেন, ‘যদি কেবল তাপমাত্রা, বায়ুমণ্ডল এবং আবর্তনের উপর ভিত্তি করে আরও কয়েকটি গ্রহের সাথে তুলনা করি তবেই আমরা বলতে পারি যে মহাবিশ্বে কি এক অনন্য গ্রহে আমাদের বসবাস!’
বেটা পিকটোরিস বি. একটি বৃহৎ, উত্তপ্ত এবং নবীন গ্রহ। এটি পৃথিবীর চেয়ে ৩,০০০ গুণ এবং সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতির চেয়ে ৭ গুণ ভারী। এই গ্রহটির বয়স মাত্র ২০ মিলিয়ন বছর যেখানে পৃথিবী প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছরের পুরনো। এবং এটা এখন পর্যন্ত অতি উত্তপ্ত গ্রহ।
বেটা পিকটোরিস বি. এর দ্বিগুণের কাছাকাছি ভারি এবং ১০ গুণ বড় এর কেন্দ্র নক্ষত্র লুমিনাস।
বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘বেটা পিকটোরিস বি.য়ের ঘূর্ণন বেগ থেকে ধারণা করা যায় যে একটি গ্রহের বেগ এটার আকৃতির সাথে খুব সম্পর্কিত: যার আকৃতি যত বড় তার বেগ তত বেশি ।’
‘হ্যাঁ, জানা আছে যে ভর এবং ঘূর্ণন বেগ পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত’, অন্য একজন গবেষক ইউনিভার্সিটি অব লিডেনের জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রোফেসর ল্যাগ্নাস স্নিলেন বলেন ।
‘এই সম্পর্ক যে এখানেও খাটবে তা নির্ণয়ে আমরা এটাকে এখন আরও বড় একটি গ্রহের ক্ষেত্রে চিন্তা করি। এটাকে একটি সর্বজনীন সূত্র হিসেবে নিশ্চিত করতে আরও অনেক গ্রহই পর্যবেক্ষণ করা দরকার।’ স্নিলেন আরও বলেন ।
ডপলার ইফেক্টের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা গ্রহের ঘূর্ণন বেগ পরিমাপ করেন। রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সের শোঁ শোঁ শব্দ করে সাইরেন বাজিয়ে চলার সময় শব্দের ক্রমশ পরিবর্তনের একটি সুপরিচিত ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়। এটিই সেই ডপলার ইফেক্ট।
‘আমরা যখন একটি ঘূর্ণায়মান গ্রহ দেখি, তখন আমাদের দিকবর্তী তার অর্ধেক আলো থাকে, বাকি অর্ধেকের তুলনায় যার কম্পাঙ্ক, অথবা রংয়ের সামান্য তারতম্য হয়। এই দুই অংশের মধ্যে রঙ ও কম্পাঙ্কের পার্থক্যের ভিত্তিতে ঘূর্ণন বেগ পরিমাপের করা হয়।’ ব্রান্ডল বলেন।
বেটা পিকটোরিস বি. দক্ষিণ নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত যা ছয় বছর আগে আবিষ্কৃত হয়েছিল। সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর আবর্তনের চেয়ে এই গ্রহটি এর কেন্দ্র নক্ষত্রের চারপাশে ৮গুণ বেশি প্রদক্ষিণ করে।
বিজ্ঞানীরা মেঘের প্যাটার্ন ও ঝড়কে অন্তর্ভুক্ত করে ভবিষ্যতে গ্রহটির একটি সাধারণ মানচিত্র করার আশা করছেন।