আজ কবিগুরুর ১৫৩ তম জন্মবার্ষিকী
এইদেশ এইসময়, ঢাকা : ১৫৩ বছর ধরে তার কবিতা, গল্প, গান, নাটক, উপন্যাস আমাদের জাতীয় ও ব্যক্তি জীবনে ক্রমাগত অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
জীবনের নানা দিক নিয়ে তার দর্শন আমাদের জাগিয়েছে। যার সাহিত্যকর্ম আজ দেশ-কাল-পাত্র অতিক্রম করে সর্বজনীনতা পেয়েছে- তিনিই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে বোলপুর হয়ে শান্তিনিকেতন; সেখান থেকেই বিশ্বময় আমাদের রবীন্দ্রনাথ।
আজ তার ১৫৩তম জন্মদিন। ২৫শে বৈশাখ। রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করা হয় সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে সব সময়। আমাদের সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রীয় সঙ্কটে-সম্ভাবনায়।
তার মাঝ থেকেই জেগে ওঠার রসদ নিয়ে বাঙালিরা আবার নিজেদের জাগিয়ে তুলে। তার সৃষ্টিকর্ম আমাদের মর্মে মর্মে ঢেউ তুলে প্রাণশক্তিকে উজ্জীবিত করে; মন ও মননকে সজীব-সতেজ রাখে প্রতি মুহূর্তে, প্র্রতিক্ষণে।
জাতীয় সীমানা পেরিয়েও তার দর্শন ও অস্তিত্বকে প্রত্যাখ্যান করার উপায় নেই আজ। শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, মূল্যবোধ- এসব নিয়ে তার ভাবনার রূপ-রূপান্তর বৈশ্বিক। বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে চিরসুন্দরের এ কবি সবসময়ই অনুপ্রেরণা হয়ে ছিলেন। ঠিক একইভাবে আজও আছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৬৮ বঙ্গাব্দের (১৮৬১ সালে) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শুধু বাংলা সাহিত্যের সর্বকালের সেরা কবিদের একজন নন, অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালিও।
বৃটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সব আন্দোলন-সংগ্রামে তার লেখনী বাঙালিকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। তার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্য বিশ্বসভায় মর্যাদার আসন লাভ করে।
গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি সংস্করণের জন্য ১৯১৩ সালে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নোবেল পুরস্কার লাভ করেন তিনি। কালজয়ী প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ শুধু কবিই ছিলেন না- একাধারে গল্পকার, উপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, গীতিকার, সুরকার, চিত্রশিল্পী, দার্শনিক, সমাজ সংস্কারক এবং শিক্ষাবিদও ছিলেন।
তিনিই বিশ্বের একমাত্র কবি, যার দু’টি কবিতা দু’টি দেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃত। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের শতবর্ষ জন্মবার্ষিকী হয়েছিল পালিত পাকিস্তান আমলে, সেই ১৯৬১ সালে। সে সময় দিনটি পালনে মাথার ওপর ছিল নিষেধাজ্ঞা। ছিল অসংখ্য রাষ্ট্রীয় রক্তচক্ষু।
এক ধরনের বিদ্রোহের মাধ্যমেই পালিত হয়েছিল শততম বার্ষিকী। নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে বছরব্যাপী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এবার নতুন মাহাত্ম্য, নতুন অঙ্গীকার আর নতুন চেতনামন্ত্র নিয়ে পালিত হবে ১৫৩তম জন্মবার্ষিকী ।
জন্মবার্ষিকী পালনে এপার বাংলা-ওপার বাংলা দুই রাষ্ট্রীয় সীমানা ডিঙিয়ে যৌথভাবে পালিত হচ্ছে রবীন্দ্র উৎসব। একে উপলক্ষ করে দু’দেশের শিল্পী-সাহিত্যিক আর রাজনীতিবিদরা অংশ নিয়েছেন উভয় দেশের অনুষ্ঠানমালায়।
সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে বিস্তারিত অনুষ্ঠানমালার। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন উৎসবের আয়োজন করেছে।
রবীন্দ্র সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে ছায়ানট, শিল্পকলা একাডেমী, বাংলা একাডেমীসহ বিভিন্ন সংগঠন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এছাড়া রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থাও পালন করবে উৎসব।