স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোর নাটকে আপত্তিকর উপস্থাপনে চরম ক্ষুব্ধ সৌদি প্রবাসীরা
বেশ কয়েকবছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, দেশিয় টিভি চ্যানেলগুলোতে বেশিরভাগ ধারাবাহিক, প্যাকেজ নাটকে সৌদি প্রবাসীদের আপত্তিকরভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সেখানে দেখানো হচ্ছে সৌদি প্রবাসী মানেই ক্লিনার, ঝাড়ুদার, মরুভূমিতে ছাগল চরানো ও খেজুর গাছ পরিচ্ছন্ন কর্মী ।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে দেখানো হয় সৌদি প্রবাসী মানেই ক্লাস ফাইভ ফেইল অশিক্ষিত। প্রবাসীরা সৌদি আরবে রাস্তা ঝাড়ু, মরুভূমিতে ছাগলের রাখালের কাজ করে। আর বাংলাদেশে গিয়ে রঙিন শার্ট-প্যান্টের সঙ্গে সাদা ক্যাডস পরে গায়ে সুগন্ধি মেখে এলাকায় চাপাবাজি করে বেড়ায়। আর পাত্রী খোঁজে।
জনপ্রিয় অভিনেতা মোশারফ করিম অভিনীত ধারাবাহিক নাটক ‘মাইক’ এর বেশ কয়েকটি পর্বে বেশ কয়েকবার মোশারফ করিমের কমন একটি সংলাপ ছিল ‘ফকিরনির পোলারা সৌদি আরব যায়’। পুরো নাটকটিতে সৌদি প্রবাসীদের দেখানো হয়েছে আনকালচার্ড, গেঁয়ো ভূত হিসেবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক ‘নজিরবিহীন নজরআলী’। সেখানে জনপ্রিয় কমেডিয়ান অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমানকে সৌদি প্রবাসী ফেরত বাংলাদেশি চরিত্রের যে গেটআপ, যে সংলাপ দেওয়া হয়েছে তা খুবই আপত্তিকর।
এসব কারণে চরম ক্ষুব্ধ সৌদি প্রবাসীরা। সৌদি আরবের অন্যতম ব্যস্ত শহর দাম্মামের একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফরহাদ হোসাইন ফেসবুকে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘আমি নাটক কম দেখি এখন। তবে যখন প্রবাসীদের হেয় করা নাটক চোখে পড়ে, তখন মাথার চুল পর্যন্ত দাঁড়িয়ে যায় জিদে। একটা নাটকে দেখলাম বিদেশ থেকে বিয়ে করতে যাওয়া একজনকে দেখিয়ে নাটকের অন্য চরিত্রে থাকা আরেকজন বলছে, গাধারা বিদেশ থেকে আইসা আমাগো গ্রামের মাইয়া বিয়া কইরা নিয়া যাইব! এত্ত সহজ?’
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশে হিন্দী স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর সিরিয়ালের আগ্রাসনে দেশিয় চ্যানেলগুলোর নাটক তেমন একটা দর্শক টানতে পারছে না।
বাংলাদেশি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোর প্রতি সপ্তাহে যে টিআরপি রিপোর্ট প্রকাশ হয় তাতে দেখা যায় টকশো, নিউজের ভিত্তিতেই শীর্ষ ১০ চ্যানেলের তালিকা করা হয়।
স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর টিআরপি রিপোর্টই প্রমাণ করে দেশের দর্শকরা খবর, টকশোর বাইরে অন্য অনুষ্ঠানগুলো বিমুখ।
দেশের টিভি দর্শকরা যেখানে দেশিয় টিভি চ্যানেলগুলোর নাটক, বাংলা সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে হিন্দী চ্যানেল নির্ভর হয়ে পড়ছে, সেখানে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা বাংলাদেশি চ্যানেলগুলোর নাটক, টেলিফিল্ম, বাংলা সিনেমার সঙ্গেই থাকছে অবসরে।
এরপরও প্রবাসীদের এমন অবমাননায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সৌদি আরবে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ বলেন, হালাল পথে রোজগার করা কোনো কাজকেই কটাক্ষ করা উচিত না। হোক সে ক্লিনার কিংবা সুইপার। দেশে রাজনীতির নামে দুর্নীতি করছে যারা, তাদের বিরুদ্ধে একটি নাটক বানানোর মুরোদ নেই, আর যারা হালাল পথে রোজগার করে সেই প্রবাসীদের ছোটভাবে উপস্থাপন করছে। ওই সমস্ত নির্মাতাদের স্রেফ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, গর্দভ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩৪২ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩২৯ কোটি ৩ হাজার, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩৬৮ কোটি ৪৩ লাখ ৬ হাজার, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৮২ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছে সৌদি প্রবাসীরা।
এদিকে, প্রবাসীদের অভিযোগ, দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখা আর সুখ-দুঃখের কথা নাটকে তুলে না ধরে উল্টো জঘন্য মিথ্যাচারের মাধ্যমে হাস্যকরভাবে উপস্থাপন করাটা চরম দুঃখজনক।
তাই প্রবাসীদের দাবি নাটক-টেলিফিল্মে যাতে তাদের হ্যাসকর ও অপমানজনকভাবে উপস্থাপন করা না হয়। যে কোনো দেশের প্রবাসীদের সুখ, দুঃখ, আনন্দ-বেদনার চিত্র তুলে ধরবে দেশের টিভি মিডিয়া এমন প্রত্যাশার কথাই জানিয়েছেন রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষে থাকা সৌদি প্রবাসীরা।