শপথের আগেই মন্ত্রিসভার রূপরেখা চূড়ান্ত করতে চান মোদী
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতের ভাবি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শপথ নেয়ার আগেই তার মন্ত্রিপরিষদ সাজাতে চাচ্ছেন। এটাকে তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন।
নতুন সরকার গঠন নিয়ে বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ জানান, শপথের দিন এখনও স্থির হয়নি। আগামী ২০ তারিখ নতুন সংসদীয় দলের বৈঠকেই তা ঠিক হবে। তবে শনিবার রাতে বারানসীতে রাজনাথ জানান, শপথ হতে পারে আগামী তিন-চার দিনের মধ্যেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদে ২১ মে শপথ নিতে পারেন মোদী এমন খবর শোনা গেলেও তিনি রোববার বলেন, ২১ মে রাজীব গান্ধীর মৃত্যুদিন। তিনি চান, শপথ অনুষ্ঠানে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীও উপস্থিত থাকুন। ২১ তারিখে যদি সোনিয়া-রাহুল থাকতে রাজি হন, সে ক্ষেত্রেই তিনি ওই দিন শপথ নেবেন। তা না হলে ২২ কিংবা ২৩ মে তার শপথ হতে পারে।
রাজনাথ আরো বলেন, মোদীর ইচ্ছা, শপথের আগেই মন্ত্রিসভার রূপরেখা চূড়ান্ত করা। এজন্য সোমবার থেকেই তিনি আলোচনা শুরু করতে চান।
বিজেপির কয়েকজন নেতা বলেছেন, বিপুল জনমত নিয়ে ক্ষমতায় আসায় মোদীর ইচ্ছাতে বাধা দেবে না দল। আবার ‘ওয়ান ম্যান শো’ গোছের একটা ভাবমূর্তিও রয়েছে মোদীর। তা বদলাতে মোদী আরও বেশি করে সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে মন্ত্রিসভা সাজানোর চেষ্টা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
কেমন হতে পারে মোদীর মন্ত্রিসভা?
বিজেপি সূত্রের মতে, এটি এক সুবিশাল প্রক্রিয়া। বহু সাংসদ এবারে জয়লাভ করেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব¡ রাখতে হবে মন্ত্রিসভায়। যেমন, অসম থেকে অনেক সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। বাজপেয়ী আমল থেকে ওই রাজ্যের পুরনো মুখ বিজয়া চক্রবর্তীকে মন্ত্রী করা হবে, নাকি কোনও নবীনকে আনা হবে এই ধরনের সিদ্ধান্তও নিতে হবে। তাছাড়া, মন্ত্রিসভায় নানা জাতি-ধর্মের প্রতিনিধিত্বও রাখা উচিত।
অর্থমন্ত্রী পদে অরুণ জেটলির সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে। কে ভি কামাথ বা দীপক পারেখের মতো বিশেষজ্ঞদের নামও আলোচনায় রয়েছে।
এক নেতা বলেন, অমিত শাহকে এই দায়িত্ব দিলে সব থেকে সুবিধা হবে মোদীর। কিন্তু তা সম্ভব নয়। তাই কোনও অভিজ্ঞ ও অনুগামী নেতাই মোদীর পছন্দ হতে পারেন। এর কারণ হচ্ছে, মনমোহন সিংহ ও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে যে বিবাদ চলত, মোদী নিশ্চয়ই তার পুনরাবৃত্তি চাইবেন না।
জেটলির পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী হিসেবে যশবন্ত সিনহা, অরুণ শৌরীদের নামও ভাবা হচ্ছে। শৌরীকে ইতিমধ্যেই দিল্লিতে ডাকাও হয়েছে।
মোদীকে প্রথমে স্থির করতে হবে, প্রধান চারটি মন্ত্রণালয়ে (স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, অর্থ ও বিদেশ) কাদের অন্তর্ভুক্ত করবেন?
অনেকে বলছেন সুষমা স্বরাজ বিপুল ভোটে বিদিশা থেকে জিতেছেন। তাই তাকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী দিতেই হবে। এর আগে বিদেশ মন্ত্রী হিসেবে ভাবা হয়েছিল সুষমাকে। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে মোদীর প্রতি সুষমার মনোভাবের বিষয়টিও স্মরণ রাখতে হবে।
প্রণববাবুর পর এস এম কৃষ্ণ যখন বিদেশমন্ত্রী হয়েছিলেন, সেটা মনমোহন সিং-এর জন্য অনেক সুবিধা হয়েছিল। কারণ, বিদেশীদের হাতে রাখতে পেরেছিলেন তিনি। সে হিসেবে সুষমার বদলে অন্য কেউ বিদেশ মন্ত্রী হলে ভালো হয়। তাছাড়া সুষমা নিজেও বিদেশ মন্ত্রী নিতে অনিচ্ছুক।
লালকৃষ্ণ আদভানী স্পিকার হতে রাজি। কিন্তু মোদীর মনে আশঙ্কা, কোনও ভাবে সংসদে কংগ্রেস যদি আদভানীকে ব্যবহার করতে শুরু করে, তা হলে সরকারের পক্ষে তা অস্বস্তি জনক হবে। কারণ বিপুল জয়ের পরেও আদভানী মোদীকে ঢালাও সার্টিফিকেট দেননি।
এদিকে বিজেপি সভাপতি রাজনাথ চান মন্ত্রিসভার দু’নম্বর ব্যক্তি হতে। তার পছন্দ স্বরাষ্ট্র। এজন্য মোদীর ছায়াসঙ্গী হয়ে রয়েছেন রাজনাথ। তবে তাকে স্বরাষ্ট্র না প্রতিরক্ষা কোনটা দেয়া হবে তা রাজনাথের সঙ্গে কথা বলেই ঠিক করতে হবে মোদীকে।
মুরলী মনোহর জোশী সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্বের দাবি জানিয়ে রেখেছেন। তাকে দেওয়া হতে পারে পছন্দের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। প্রাক্তন সভাপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু পেতে পারেন গ্রামোন্নয়ন।
এক্ষেত্রে ইয়েদুরাপ্পার নামও শোনা গেলে দুর্নীতি মামলা থেকে তিনি এখনও নিষ্কৃতি পাননি। শরিক নেতা রামবিলাস পাসোয়ানের বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে। ফলে নীতিগতভাবে তাদের মন্ত্রিত্ব দেয়া প্রশ্নবিদ্ধ। তবে ইয়েদুরাপ্পার বন্ধু শোভা করঞ্জালের মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুব্রহ্মণ্যম স্বামীকে নেওয়ার ব্যাপারে আরএসএসের চাপ থাকলেও দলের অনেকেই তাকে চান না। আদভানী আবার শত্রুঘ্ন সিনহাকে মন্ত্রী করার সুপারিশ করেছেন।
কিন্তু বিহারের অন্য নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদকে কোনও না কোনও মন্ত্রী দিতেই হবে। তার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য হচ্ছে আইন বা কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রশিক্ষিত পাইলট রাজীবপ্রতাপ বিমান বা বাণিজ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পেতে পারেন। দিল্লির নেতা হর্ষবর্ধনকে ভাবা হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রী হিসেবে। কিন্তু দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন হলে হর্ষবর্ধনই একমাত্র ভরসাযোগ্য মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী। সেটাও চিন্তার বিষয়।
আর এক প্রাক্তন সভাপতি নিতিন গডকড়ীকে রেল বা অন্য পরিকাঠামো সংক্রান্ত মন্ত্রী দেয়ার কথা চলছে। সুষমাকে বিগ-ফোরে না আনলেও রেলের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।
আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেত্রী রেলের দায়িত্বে ছিলেন। তাই সুষমাকে রেলে আনলে মোদীর অস্বস্তি কিছুটা দূর হতে পারে। সুষমার ঘনিষ্ঠ নেতা সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া জিতেছেন দার্জিলিং থেকে। রাজ্যসভায় বিরোধী দলের উপনেতা থাকাকালেই তিনি মন্ত্রীর ন্যায় ভূমিকা পালন করেছেন। কাজেই এ বার তাকে মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত করতে সুষমার তরফ থেকে চাপ থাকবে। অহলুওয়ালিয়ার জন্ম আসানসোলে। সে ক্ষেত্রে ইস্পাত মন্ত্রী পেতে পারেন তিনি।
অন্যদিকে আবার আসানসোলের সদ্য-নির্বাচিত সাংসদ, গায়ক বাবুল সুপ্রিয় সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী পদে বিবেচিত হতে পারেন।
বিদ্যুৎ কয়লা, শ্রম বা উত্তর-পূর্বের মতো কোন মন্ত্রিত্ব পেতে পারেন পূর্ণ সাংমা। এক্ষেত্রে আবার সুরেশ প্রভুও বিদ্যুৎ মন্ত্রী হওয়ার দাবিদার। মন্ত্রী হতে আদভানী ও গডকড়ীর কাছে তদবির করেছেন উমা ভারতী। দিল্লিতে জয়ের পর মন্ত্রী হতে ইচ্ছুক মীনাক্ষী লেখিও।
মেনকা গান্ধীকেও মন্ত্রী করতে আগ্রহী মোদী। গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে কেন্দ্রিয় মন্ত্রিসভায় আনা হতে পারে মনোহর পারিক্করকে। উত্তরাখন্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভুবনচন্দ্র খান্ডুরিও আসতে পারেন মন্ত্রিসভায়। দৌড়ে রয়েছেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহও।
নির্বাচিত হওয়ার পর মোদী বারবার বলছেন, এবারই প্রথম স্বাধীন দেশে জন্মানো কোনও ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। ফলে মন্ত্রিসভাতেও এক ঝাঁক নতুন মুখ থাকা অসম্ভব নয়। রামবিলাসকে মন্ত্রী করা না হলে তার ছেলে চিরাগ প্রতিমন্ত্রী হতে পারেন। আইআইটি-হার্ভার্ডের প্রাক্তন ছাত্রকেও প্রতিমন্ত্রী করতে পারেন মোদী। মন্ত্রীর দৌড়ে আরো আছে অনেক নাম। যেমন, অলিম্পিকে রূপাজয়ী শ্যুটার রাজ্যবর্ধন রাঠৌর, প্রয়াত প্রমোদ মহাজনের মেয়ে পুনম, বসুন্ধরা রাজের ছেলে দুষ্মন্ত, প্রেমকুমার ধুমলের ছেলে অনুরাগ ঠাকুর।
নবীন-প্রবীণ সব মিলিয়ে জটিল অঙ্কটা দ্রুতই কষে ফেলতে চান নরেন্দ্র মোদী। সূত্র: আনন্দবাজার