বীভৎস ছবি প্রকাশ বন্ধ করার নির্দেশঃপ্রধানমন্ত্রী
এই দেশ এই সময়,ঢাকাঃ গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রীদের পরামর্শের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রেস কাউন্সিল নিজেই একটা নখদন্তহীন প্রতিষ্ঠান। গণমাধ্যম বিষয়ে দেখভাল করার জন্য জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালাটি আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রণয়ন করতে হবে।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্ধারিত এজেন্ডার বাইরে গণমাধ্যম, ভারতের নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে একাধিক মন্ত্রী জানিয়েছেন।
এছাড়া গণমাধ্যমে দুর্ঘটনাসহ সহিংসতার বীভৎস ছবি প্রকাশ বন্ধ করার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন।
ঢাকা শহরের চার পাশের (বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, ধলেশ্বরী, বালু এবং শীতলক্ষ্যা) নদী দূষণ রোধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি নদীর তীর যেই দখল করুক না কেনো তাদের উচ্ছেদ করে পথচারীদের জন্য ওয়াকওয়ে করার জন্যও কড়া নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মন্ত্রী জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা শহরের চার পাশের (বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, ধলেশ্বরী, বালু এবং শীতলক্ষ্যা) নদী দূষণ রোধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি নদীর তীর যেই দখল করুক না কেনো তাদের উচ্ছেদ করে পথচারীদের জন্য ওয়াক ওয়ে করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আলোচনায় অংশ নিয়ে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান জানান, নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের প্রধান আসামি নুর হোসেন মেঘনার তীরে দখল করে অবৈধ বালু ব্যবসা করছে। বুড়িগঙ্গায় হাজী সেলিম, তুরাগে ইলিয়াস আলীসহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান দখল করে রাখছে। এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। এসময় আরো কয়েকজন মন্ত্রী নদী দখল ও দূষণের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে আনেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দখলদাররা যত বড় এবং ক্ষমতাধর হোক না কেন, তাদের উচ্ছেদ করতে হবে। নদীকে বাঁচাতে হবে। পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া যাবে না। আমি চাই নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে যে টাস্কফোর্স রয়েছে তারা অতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিবে। এজন্য তিনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যৌথভাবে তদারকি করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্ত্রীরা জানান, গৃহস্থালী বর্জ্য নদীসহ আশপাশের জলাশয় নষ্ট করে ফেলছে। এ জন্য বর্জ্য নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা এবং এসব বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকারের যে প্রকল্প রয়েছে তার কাজ দ্রুত শুরু করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে বৈঠকে কয়েকজন মন্ত্রী জানান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সহযোগিতা না পেয়ে এসব বর্জ্য কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা সিটির বর্জ্যগুলো বর্জ্য শোধানাগারে নিয়ে যেতে বলেছেন। যার মাধ্যমে বিদ্যুৎসহ অন্যান্য জিনিস উৎপাদন করা যায়। বৈঠকে জাইকার অর্থায়নে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত করার পরামর্শ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
সূত্র আরো জানায়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্ঘটনাসহ সহিংসতার বীভৎস ছবি প্রকাশ বন্ধ করার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা সংশোধনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলা হয়েছে। গণমাধ্যমের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বলছে এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফল ভালো হলেও শিক্ষার মান বাড়েনি। তারা শহরে না থেকে গ্রামে গিয়ে শিক্ষকতা করলে ভালো হয়। ভারতে বিজেপি সরকার গঠনের বিষয়ে বাংলাদেশের বিএনপি বেশি খুশি হয়েছে। এ জন্য তাদের সমালোচনাও করা হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রীরা বলেন, যারা বেশি খুশি হয়েছে তারাই ভারত বিরোধী। মন্ত্রিসভার প্রায় সব মন্ত্রীই এ বিষয়ে বিভিন্ন কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সভায় এসব বিষয় ছাড়াও কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাছাড়া চীন, জাপান ও ভারতকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।