ভালই কাটছিল সেই দিনগুলো,নীলা
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিঃ আমাদের মধ্যে ভাল সম্পর্ক ছিল। ভালই কাটছিল সেই দিনগুলো। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনাও কম ছিল না। তেমন একটা গায়ে মাখিনি। কারণ আমরা তো জানি আমাদের মধ্যে কি সম্পর্ক। তবে বেশি দিন সেই সম্পর্ক স্থায়ী হয়নি। তার অন্যায় কর্মকাণ্ড আমাকে তার কাছ থেকে দূরে সরে আসতে বাধ্য করেছে। এতে কষ্ট পেয়েছি, মানসিকভাবে অশান্তিতে ছিলাম। কিন্ত সেটা সাময়িক। এখন ভাল আছি। আল্লাহ ভাল রেখেছেন। কিন্তু সম্পর্ক ছিন্ন করলেও সে আমাকে ফোন করতো। আমি কখনও তাকে ফোন করতাম না। সে-ই আমাকে ফোন করতো। নানাভাবে বিরক্ত করতো। এক পর্যায়ে তার তিনটা নম্বর ব্লক করে দিই। কথাগুলো বলছিলেন সময়ের আলোচিত সেভেন মার্ডারের মূল হোতা নূর হোসেনের ‘বান্ধবী’ হিসেবে পরিচিত নাসিক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা। সেভেন মার্ডারের হুলিয়া মাথায় নিয়ে নূর হোসেন আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর নতুন করে আলোচনায় উঠে আসেন তিনি। রোববার নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউজে আদালতের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির গণশুনানিতে অংশ নিতে এলে তাকে ঘিরে ধরেন গণমাধ্যমকর্মীরা। মুখ খোলেননি তাদের কাছে। তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিয়ে বাসায় ফেরার পথে ডিবি পুলিশ তাকে আটক করে। নূর হোসেনের অবস্থান জানতে ৪৫ মিনিট ডিবি কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। যেভাবে নূর হোসেনের নজরে আসেন নীলা ২০১১ সালের ৩০শে অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে আমি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড (৪, ৫ ও ৬) থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিই। দলের সকল নেতার কাছ থেকে দলীয় সমর্থন নেয়ার জন্য যাই। যেহেতু নূর হোসেন চেয়ারম্যান ও দলের লোক তাই তার কাছেও যাই। তার অফিসের ভেতর গিয়ে বললাম ‘কাকা’ আমি নির্বাচন করতেছি। দোয়া কইরেন। নির্বাচনে আমি বিজয়ী হই। নূর হোসেন চেয়ারম্যানও ৪নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর হয়। নির্বাচনের এক মাস পর থেকে তার (নূর হোসেন) সঙ্গে আমার ভাল একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে আমাকে সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করতো। ওই ওয়ার্ডের সব উন্নয়ন কাজ আমাকে দিয়ে করাতো। ধীরে ধীরে আমরা ঘনিষ্ঠ হই। ৪ থেকে ৬ মাস সম্পর্কটা খুব গভীর ছিল। এ নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা-সমালোচনা ছিল। যে যা-ই বলতো তেমন একটা গায়ে মাখিনি। স্বাভাবিকভাবেই একসঙ্গে ঘোরাঘুরি করেছি। বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু লাক্সারিয়াস সম্পর্কটা বেশি দিন স্থায়ী হলো না। তার (নূর হোসেনের) অন্যায় কর্মকাণ্ড আমি সহ্য করতে পারিনি। প্রতিবাদ শুরু করলাম। ব্যস্। মধুর সম্পর্ক তিক্ততায় পরিণত হয়। বিশেষ করে শিমরাইলের নজরুল ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনকে মারধরের ঘটনা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। আমি সালাউদ্দিনের পক্ষে কথা বলেছি। তাই আমার বিরুদ্ধে নূর হোসেনের কাছে তার লোকজন নানা কথা বলেছে। মিথ্যা কথা বলে আমাদের সম্পর্কে ফাটল ধরিয়েছে। এতে আমাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আমাকে দেয়া তার ২৭ লাখ টাকার প্রিমিও প্রাইভেট কার ফেরত দিই। তবে মাঝে মধ্যে আমাদের মধ্যে কথা হতো। স্বামী-সন্তানের কথা চিন্তা করে সম্পর্কটা টিকিয়ে রেখেছিলাম। কারণ নানাভাবে সে আমাকে ভয় দেখাতো। প্রথম প্রথম অনেক ভয় পেয়েছি। আমার স্বামীর কোন ক্ষতি করে ফেলবে। আমার জন্য তারা যেন কোন বিপদে না পড়ে। তাই সম্পর্কটা নষ্ট করিনি। একটা সময় ভয়টা ভেঙে গেছে। ও আমাকে কি করবে? মানুষ মেরে ফেলা ছাড়া তো আর কিছু নেই। মরতে হয় মরলাম। তাকে ছেড়ে চলে আসি। আমার স্বামী সায়েম একটু ভীতু টাইপের ছিল। ও ভয় পাইতো। তাই ওর (স্বামী) কাছে যেতাম না। এখন ভয় আছে? না, এখন তো আর সে নাই। আমার স্বামীর সঙ্গেই আছি। সে আমার পাশে আছে। তাছাড়া সায়েমের (স্বামী) সঙ্গে আমার সম্পর্ক সব সময়ই ভাল। নীলা বলেন, ১০/১১ মাস ধরে তার (নূর হোসেন) সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। কিন্তু সে আমাকে ফোন করতো। নিয়মিত করতো। কখনও গ্রামীণ নম্বর, কখনও এয়ারটেল, কখনও টিএনটি নম্বর থেকে। অনেক বিরক্ত করতো। মাঝে মাঝে ফোন ধরতাম না। আবার ভয়ে ভয়ে ধরতাম। যদি কোন ক্ষতি করে ফেলে। মানসিক যন্ত্রণা দিতো। এক সময় আমার মনে হলো নূর হোসেন আমার বড় ধরনের কোন ক্ষতি করে ফেলতে পারে। থানায় গিয়েছি মামলা করতে। কিন্তু সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ নূর হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি। পরে থানা কার্যালয়ের সামনে গাড়ির নিচে পড়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। পরে পুলিশের সহযোগিতায় এসপির কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু এসপি-ও নূর হোসেনের লোক। তাই সে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তাই নিরুপায় হয়ে একটি এসএমএস লিখে পরিচিত অনেকের মোবাইলে পাঠিয়েছি। তাতে লিখেছি, নূর হোসেন ও তার লোকজন আমার ক্ষতি করতে পারে। আমার মৃত্যুর জন্য নূর হোসেন ও তার লোকজন দায়ী থাকবে। ওই এসএমএস হয়তো আমার পরিচিত অনেকের মোবাইলে আছে। কিন্তু এত কিছুর পরও নূর হোসেন আমার পিছু ছাড়েনি। আমাকে ফোন দিতো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতো। মানসিক যন্ত্রণায় টিকতে না পেরে তার ৩টা নম্বরই ব্লক করে দিই। সেটা কবে- এমন প্রশ্নের জবাবে নীলা বলেন, মনে নেই। তবে এক-দেড় মাস হয়তো হবে। ডিবি অফিসে যা বলেছেন নীলা রোববার বিকালে নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণের ভেতর নারায়লগঞ্জ সার্কিট হাউজে আদালতের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির গণশুনানিতে অংশ নিয়ে সাক্ষ্য দিয়ে বাসায় ফেরার পথে আটক হন জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। নীলা বলেন, ডিবি অফিসে নিয়ে আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে আপা আপনার কয়টা নম্বর। আমি বলেছি একটা নম্বর। তারা বলে না আরেকটা সিম আছে, সেটা দেন। আমি বলেছি আরেকটা নম্বর আছে সেটা আমি তেমন একটা ব্যবহার করি না। নূর হোসেনের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক অনেকে বলে। আমি বলেছি অনেকে বলে বলুক তাতে সমস্যা কি? কাউন্সিলর হিসেবে উনার (নূর হোসেন) সঙ্গে ভাল সম্পর্ক থাকতেই পারে। শুধু আমার সঙ্গে কেন সব কাউন্সিলরের সঙ্গে সব কাউন্সিলদের ভাল সম্পর্ক। আর যেহেতু উনি আমার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সেহেতু আমার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক থাকাটাই স্বাভাবিক। তাহলে আপু আপনি কোন তথ্য দিতে পারলেন না। আমি বললাম আমি যতটুকু জানার ততটুকু জানি। নূর হোসেন কোথায় আছে? জানি না। আল্লাহ জানে আর আপনারা জানেন। নূর হোসেন ফোন দেয় না? আমি বলেছি না, দেয় না। তাছাড়া ফোন দেয় কিনা তা আপনারা আমার ফোনের কল লিস্ট চেক করেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন। পরে তারা আমার কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন, অনুরোধ করেছেন নূর হোসেনের কোন সন্ধান পেলে যেন তাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করি। আমি বলেছি অবশ্যই করবো। আল্লাহকে হাজির নাজির রেখে বলেন, আল্লাহকে হাজির নাজির করে বললাম আমি সহযোগিতা করবো। যেভাবে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে আমি এর বিচার চাই। আর কেউ যেন সন্তানহারা না হয়। বাবাহারা না হয়। কোন বউ যেন বিধবা না হন। হত্যাকারীদের এমন শাস্তি হওয়া উচিত যেন বাংলাদেশে সেটা নজির হয়ে থাকে।