সার্ক দেশের নেতাদের আমন্ত্রণ জানালেনঃমোদি
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানিয়ে সার্ক সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানালেন ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ ভারতীয় কোনো প্রধানমন্ত্রী এযাবৎ যা করেননি, মোদি তা করায় তাঁর সম্ভাব্য বিদেশনীতি নিয়ে দেশে বেশ আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।
আগামী সোমবার সন্ধ্যা ছয়টায় রাষ্ট্রপতি ভবনের বিশাল আঙিনায় দেশ-বিদেশের অন্তত তিন হাজার আমন্ত্রিত ব্যক্তির সামনে নরেন্দ্র দামোদারদাস মোদি প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন। একই সঙ্গে শপথ নেবেন তাঁর মন্ত্রিসভার অন্তত ৩০ জন সদস্য।
শপথ গ্রহণের দিন মোদি তাঁর মা হীরাবেনকে দিল্লি নিয়ে আসবেন কি না, সেই সম্ভাবনা সম্পর্কে বিজেপির কেউ কোনো আভাস না দিলেও সার্ক সদস্যদেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের যে মোদি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, দলীয় মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন গতকাল বুধবার সকালেই তার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন বলেন, আমন্ত্রণপত্র সবার কাছেই পাঠানো হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং সার্কভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রসচিবদের কাছে ভাবী প্রধানমন্ত্রীর হয়ে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন। সরকারিভাবে কারও কাছ থেকে এখনো সম্মতি আসেনি।
এই আমন্ত্রণের সিদ্ধান্ত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাবে কি না জানতে চাওয়া হলে সৈয়দ আকবরউদ্দিন বলেন, ‘এটা প্রথম পদক্ষেপ। আগে উত্তর আসুক, তারপর দেখা যাবে। একটা একটা করে পদক্ষেপ নেওয়াই ভালো।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এর আগে এইভাবে কখনো এত বিদেশি সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সেই দিক থেকে মোদির এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দুই দিক থেকেই চমকপ্রদ ও অর্থবহ। নির্বাচনী প্রচারে মোদি বহুবার ইউপিএ সরকারের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করেছেন। ইউপিএ অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতিকে ‘দুর্বল, অচল ও গতানুগতিক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, কংগ্রেস উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিতে পারেনি। পররাষ্ট্রনীতিতে তিনি রাষ্ট্রীয় ভূমিকার পাশাপাশি রাজ্যস্তরের ভূমিকাকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে তামিলনাড়ুর বিশেষ ভূমিকা যেমন থাকবে, তেমনই বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নীতি নির্ধারণে পশ্চিমবঙ্গকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার মতে, ‘মোদির কাজকর্মে অভিনবত্ব এই আমন্ত্রণের মধ্য দিয়েই প্রতিফলিত।’
ভারতের সাবেক কূটনীতিকেরাও মোদির এই আমন্ত্রণকে ‘অভিনব ও ইতিবাচক’ বলে মনে করছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশগুলো যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অগ্রাধিকার পাবে, সেটা তাঁর এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হচ্ছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
বীণা সিক্রি বলেন, ‘গতানুগতিক ধ্যান-ধারণার বাইরে বেরিয়ে তিনি নতুন প্রথা শুরু করতে চাইছেন। পররাষ্ট্রনীতিতে এটা খুবই কাজের।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম কাজ বাজেট পেশ করা। জুন-জুলাইয়ে তা পাস করানোর পর জুলাই মাসেই তিনি ব্রাজিলে যেতে পারেন ‘ব্রিকস’ (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোট) সম্মেলনে যোগ দিতে। দ্বিপক্ষীয় সফরে তাঁর প্রথম লক্ষ্য হয় জাপান, নতুবা প্রতিবেশী কোনো দেশ। সেটা পাকিস্তান, না বাংলাদেশ, সে বিষয়ে এ মুহূর্তে স্পষ্ট কোনো ধারণা দলের কেউ দিতে পারছেন না। বছরের শেষ দিকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সম্মেলনে যোগ দেবেন মোদি। নভেম্বরে মিয়ানমারে আসিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ায় জি-২০ সম্মেলন রয়েছে। সেখানে মোদির যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।