সাকিব মুখে নয়, কাজে বিশ্বাসী
স্পোর্টস ডেস্কঃ আইপিএলে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি, কলকাতা নাইট রাইডার্সের একাদশে একমাত্র বাঙালি—সাকিব আল হাসানের জন্য বাংলাদেশ তো বটেই, গোটা পশ্চিমবঙ্গের ভালোবাসা পেতে এ পরিচয় ছিল যথেষ্ট। কিন্তু সাকিব মুখে নয়, কাজে বিশ্বাসী। তাই ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে জয় করেছেন সবার মন। বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার এখন কলকাতার শিরোপা-স্বপ্নের অন্যতম প্রধান কারিগর। এ কারণে ওপার বাংলার গণমাধ্যমে জোরেশোরে শুরু হয়েছে সাকিব-বন্দনা।
কলকাতার ‘এই সময়’ পত্রিকায় সাকিবকে দিয়েছে ‘মিস্টার ডিপেনডেবল’ তকমা। ‘মেজাজটা ধরে রেখেই রাজা ওপার বাংলার সাকিব’ শীর্ষক লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘আইপিএল সেভেনে দুই বাংলার সাঁকো তিনিই!’
পত্রিকাটি লিখেছে, ‘বাংলাদেশের খবরের কাগজে তো রীতিমতো পাঠকদের মতামত নেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে, “ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় সাকিবকে কেকেআরের আরও বেশি সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন কি?” উত্তরে প্রায় ৯৩ শতাংশ পাঠকই “হ্যাঁ” বলেছেন৷ যাঁকে নিয়ে এত কথা চালাচালি, সেই সাকিব আল হাসানকে কিছুই স্পর্শ করছে না৷ বাংলাদেশ থেকে কোনো শুভেচ্ছা পেলেন কি না জিজ্ঞেস করতেই জবাব এল, ‘‘বাংলাদেশের কারও কাছে আমার এখানকার নম্বর নেই!’’ এটাই সাকিব আল হাসান৷ মেজাজটাই যাঁর আসল রাজা৷’
‘আনন্দবাজার পত্রিকা’য় সাকিবকে নিয়ে করা বিশেষ প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে মনন সাময়িক সরেছে বাংলাদেশ জনতার। সিএসকে ও আরসিবি ম্যাচে তাঁর ব্যাটিং বিস্ফোরণের পর ব্রাজিলমুখী বাংলাদেশ জনতা আবার সাকিব-মুখী।’ পত্রিকাটি আরও লিখেছে, ‘সাকিব আল হাসান আবার কলকাতাকে জিতিয়ে দেশে ফিরবেন কি না, সময় বলবে। কিন্তু তাঁর বর্তমান প্রাপ্তিও খুব খারাপ নয়। সোনালি-বেগুনি জার্সিতে তিনি নামলেই ঢাকায় টিভি শোরুমের সামনে আবার গিজগিজে ভিড়, এফএম চ্যানেলের ম্যাচের কমেন্ট্রি জোরে বাজিয়ে দেওয়া, তিনি বাউন্ডারি মারলে তুমুল উল্লাস, চায়ের দোকানে-আড্ডায় আবার তিনি তর্কের বিষয়বস্তু। বৃহস্পতিবারের ঢাকায় যা ঘটল। দেড় মাস আগে ওপার বাংলার ক্রিকেট-বন্দীর কাছে এ-ও বা কম কী?’
অন্যদিকে পৃষ্ঠাজুড়ে সাকিবের স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরের ছবি ছেপেছে ‘এবেলা’ পত্রিকা। ছবিটি তোলা হয়েছে কলকাতা বিমানবন্দরে। ছবির ইনসেটে দেখা যাচ্ছে, বিমানবন্দর থেকে স্ত্রীকে নিয়ে টিম হোটেলে ফিরছেন সাকিব। এছাড়া ২১ মে একই পত্রিকায় জগমোহন ডালমিয়ার কন্যা বৈশালী ডালমিয়া সাকিবকে নিয়ে লিখেছেন বিশেষ কলাম। ‘নায়ক এল না, নতুন নায়কের নামে জয়ধ্বনি’ শিরোনামে লেখায় সাকিবে-মুগ্ধ বৈশালী লিখেছেন, ‘মঞ্চটা হয়তো সাজানো ছিল এক নায়কের জন্য। শাহরুখ এল না। কিন্তু নতুন নায়ক পেল ইডেন। সাকিব আল হাসান!’
২০১২ সালেও কলকাতা নাইট রাইডার্সের শিরোপা জয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন সাকিব। আট ম্যাচে ওভারপ্রতি ৬.৫০ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১২ উইকেট। ব্যাট হাতেও খেলেছিলেন বেশ কয়েকটি সময়োচিত ইনিংস। আইপিএল সাতে ১৯৬ রান ও ৯ উইকেট হয়ে গেল৷ এবারও কলকাতাকে শিরোপা জিতিয়েই দেশে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিশ্ব-সেরা এই অলরাউন্ডার। প্রথম সাত ম্যাচের পাঁচটিই হার দিয়ে শুরুটা ভালো না হলেও শিরোপা জয়ের ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসীই শোনাল সাকিবকে। ‘এই সময়’কে বাংলাদেশের অলরাউন্ডার বলেছেন, ‘২০১২ সালেও আমরা এ রকমই করেছিলাম। টানা সাতটা ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। বিশ্বাস ছিল, দুই বছর আগে পারলে দুই বছর পরেও পারব। আশা করি, কাপটাও জিততে পারব।’
কেকেআরের সমর্থকেরা তো চাইবেনই, বাংলাদেশের অগণিত সাকিব-ভক্তের চাওয়া এ রকম। আইপিএলে যে সাকিব বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই বিজ্ঞাপন।