জালিয়াতির অভিযোগে ঢাবি শিক্ষক চাকরিচ্যুত, ১০২ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
এই দেশ এই সময়,ঢাকাঃ পিএইচডি থিসিস জালিয়াতির অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নূর উদ্দিন আলোকে চাকরিচ্যুত ও ১০২ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জানান, শিক্ষক নূর উদ্দিনের বিরুদ্ধে পিএইচডি থিসিসে (অভিসন্দর্ভ) জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এবং পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে ১০২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
উপাচার্য বলেন, “গবেষণা কর্মে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও ভুল তথ্য দেয়ায় এর আগে সিন্ডিকেট সভায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নূর উদ্দিনের পিএইডি ডিগ্রি বাতিল করা হয়েছিল। রোববারের সভায় একই অপরাধে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে ‘দি প্র্যাকটিসেস অব মার্ক্সসিজম অ্যান্ড দেয়ার ইমপ্যাক্ট অন মডার্ন ওয়ার্ল্ড : দ্য কেস অব অবজেকটিভাইজেশন’ শীর্ষক গবেষণার জন্য নূর উদ্দিনকে পিএইচডি ডিগ্রি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। তার গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক শওকত আরা হোসেন। মূল্যায়ন কমিটিতে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল মান্নান এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মকসুদুর রহমান।
পরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এমরান হুসাইন, দীল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, ফরিদ উদ্দীন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও সাব্বির আহমেদ ২০১২ সালের ১ জুন উপাচার্যের কাছে নূর উদ্দিনের পিএইচডি গবেষণাটি পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরিন আহামদকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। তদন্তে গবেষণায় মনগড়া তথ্য সংযোজনের প্রমাণ পাওয়ায় নূর উদ্দিনের পিএইচডি প্রত্যাহারের সুপারিশ করে কমিটি।
সুপারিশে বলা হয়, নূর উদ্দিন যে ‘মেথোডলজি’ ব্যবহার করে গবেষণাটি করেছেন, তা বাস্তবে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। গবেষণার জন্য প্রায় ১৩ লাখের মতো মানুষের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন বলে দাবি করলেও নূর উদ্দিন তা উপস্থাপন করতে পারেনি। এরপর গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় নূর উদ্দিনের পিএইচডি ডিগ্রি প্রত্যাহার করা হয়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এ এম আমজাদ আলী জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত বিভিন্ন মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বিভিন্নভাবে নকলের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১০২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শাস্তির দাবি জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি।
পরে প্রশাসন বিভিন্ন মেয়াদে ১০২ শিক্ষার্থীকে শাস্তি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের মধ্যে দুই শিক্ষার্থীকে ৩ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।