রাজস্থানের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য জয় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স
স্পোর্টস ডেস্কঃ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে বাঁচা মরার ম্যাচে রাজস্থানের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য জয় পেয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। কোরে অ্যান্ডারসন ভেল্কিতে ১৯০ রানের পাহাড় সমান রান মাত্র ১৪ ওভার ৪ চার বলেই করেছে নীল জার্সির মুম্বাই।
কোয়ালিফাই রাউন্ডে খেলার জন্য উভয় দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ম্যাচটি। রাজস্থানের জয় পেলেই চলতো। তবে মুম্বাইকে পরবর্তি পর্বে খেলার জন্য শুধু জয় পেলেই চলবে না। রান রেটেও পেছনে ফেলতে হবে প্রতিপক্ষকে। বলতে গেলে শিল্পা শেঠির রাজস্থানের জয় অনেক সহজ ছিল ম্যাচটি। প্রথমে ব্যাট করে রাজস্থান। শুরুটা ধীরলয়ে হলেও শেষ পর্যন্ত ১৮৯ রানের পাহাড় গড়ে তারা। দলীয় মাত্র ৩৪ রানেই অস্ট্রেলীয় ওপেনার ওয়াটসনকে হারিয়ে বিপদে পড়ে রয়্যালসরা। এরপর দলকে খাদের কিনারা থেকে তুলে আনেন নায়ার ও স্যামসন। ১০০ রানের দ্রুত এবং কার্যকরী পার্টনারশিপ গড়েন তারা। নায়ার ২৭ বলে ৫০ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেও ব্যাটিং তাণ্ডব চালাতে থাকেন স্যামসন। স্যামসন ৪৭ বলে ৭৪ রানে ফিরে গেলেও হজ এবং ফকনারের দৃঢ়তায় ১৯০ রানের টার্গেট দেয় তারা।
বিশাল সংগ্রহকে তাড়া করতে মুম্বাইয়ের সামনে বেঁধে দেয়া হয় মাত্র ১৪ ওভার ৩ বল। ঘরের মাঠ মুম্বাইয়ে তখনো নীলের জয়গান। প্যাভিলিয়ন থেকে নিজদলকে উৎসাহ দিতে এসেছেন ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তী, ব্যাটিং লিজেন্ড শচীন টেন্ডুলকার। অসম্ভব একটি রানকে তাড়া করতে নেমে শুরুতেই খোলস খুলে খেলতে থাকে মুম্বাই। ক্রিকেট বোদ্ধারা হয়তো ধরেই নিয়ে ছিলেন যে ২০ ওভারে ১৯০ রান করা সম্ভব হলেও ১৪.৩ ওভারে সেটা করতে হলে ব্যাটিং ম্যাজিক দেখাতে হবে মুম্বাইকে।
দলকে জয়ের বন্দরে পৌছাতে ব্যাট হাতে নামেন দুই বিদেশি খেলোয়াড় হাসি ও সিমন্স। শুরুটা দুর্দান্ত হলেও মাত্র ১৯ রানেই ১ম উইকেট হারায় মুম্বাই। রান তোলার গতি ঠিক থাকলেও ৬১ রানের মধ্যে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান হাসি, সিমন্স ও ভয়ঙ্কর পোলার্ড। যারা তখন ম্যাচের আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন তাদের জন্য বিস্ময় ছিল তখনো। কেবল যে উইলো চওড়া করতে শুরু করেছেন এ সময়ের অন্যতম বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান কোরে অ্যান্ডারসন। এই সেই অ্যান্ডারসন যে এ বছরই মাত্র ৩৬ বলে সেঞ্চুরী করে পাকদের সর্বশেষ ব্যাটিং রেকর্ডটিও কেড়ে নেন।
ফকনার, কুপার, ওয়াটসনদের বিরতিহীনভাবে নির্দয়ের মতো মাঠ ছাড়া করেছেন এই বা হাতি ব্যাটসম্যান। মাঠে এসেই চার ছক্কা হাঁকাতে শুরু করেন রোহিত শর্মা, রাইডুরা। আর অপর প্রান্তে চলতেই থাকে অ্যান্ডারসন ঝড়। ২০ ওভারের খেলায় মুম্বাইয়ের জয় নিশ্চিত হলেও ১৪.৩ বলে ম্যাচ জিততে পারবে কী না সেটা নিয়ে মাঝে-মধ্যেই মুম্বাই মাঠে নেমে আসে পিনপতন নিরবতা। স্ক্রিনে ভেসে ওঠে চিন্তিত শচীন-শিল্পার ছবি।
টানটান উত্তেজনার ম্যাচে অধিনায়ক রোহিত শর্মা ফিরে যান দলীয় ১০৮ রানে। এরপর চাপ সামলান রাইডু ও অ্যান্ডারসন। শেষ পর্যন্ত সমীকরণটা দাঁড়ায় মুম্বাইকে কোলালিফাই পর্বে যেতে মাত্র ৫ বলে করতে হবে ১৪ রান। এ পর্যায়ে চার মারেন অ্যান্ডারসন। পরের বলে সিঙ্গেল নিলে প্রয়োজন হয় ৩ বলে ৯ রান।
ওভার শেষে স্ট্রাইকে যান ফের অ্যান্ডারসন আর বোলিংয়ে ফকনার। প্রথম বলেই সিঙ্গেল নেন অ্যান্ডারসন। তখনও ম্যাচ পেন্ডুলামের মতো দুলছে। মুম্বাইকে জিততে হলে করতে হবে ২ বলে ৮ রান। সেই মুহুর্তে দর্শনীয় একটি ছক্কা মারেন রাইডু। নির্ধারিত ওভারের শেষ বলে প্রয়োজন ১ বলে ২ রান। স্ট্রাইকে দুর্দান্ত খেলতে থাকা রাইডু। কিন্তু ক্রিকেট যে চরম অনিশ্চয়তার খেলা সেটি যেন আবারো প্রতিয়মান হলো, নির্ধারিত ওভারের শেষ বলে ব্যাটে বলে করতে না পেরে দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হলেন রাইডু।
নির্ধারিত ওভারে অর্থাৎ ১৪.৩ বলে ম্যাচ টাই। রাজস্থান অলরেডি তখন বিজয় উদযাপন করতে শুরু করেছে। কিন্তু বিধিবাম, ক্যালকুলেশন বলছে ম্যাচে তখনও মুম্বাইয়ের সম্ভাবনা আছে। অর্থাৎ ১৪ ওভারের ৪ নম্বর বলটিকে বাউন্ডিারি বা ওভার বাউন্ডারি মারতেই হবে। মাঠে নামলেন লোকাল বয় আদিত্য তারে। প্রার্থনায় উভয়দলের সমর্থকরা, কী হবে এই বলে। অবশেষে ফকনারের করা লেগস্ট্যাম্পের বাইরের ফুলটস বলটিকে সীমানা ছাড়া করলেন তারে। ছক্কা মেরেই দিলেন এক ভো-দৌড় আর তার পিছনে মুম্বাইয়ের পুরো টিম, মাঠে নামলেন মহারথী টেন্ডুলকার, টিমমেটসহ অনেকেই। গ্যালারী জুড়ে তখন মুম্বায়ের আতসবাজির ঝলকানি।
প্রায় শুরু শেষ পর্যন্ত দানবীয় তাণ্ডব চালিয়ে ৪৪ বলে ৯৫ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন কোরে অ্যান্ডারসন। এরমধ্যে ছিল ৬টি দর্শনীয় ছক্কা আর ৯ টি বাউন্ডারি। পুরো ক্রিকেট বিশ্ব উপভোগ করলো এক অবিশ্বাস্য ক্রিকেটীয় প্রদর্শনী।
রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ৫ উইকেটের অবিশ্বাস্য জয়ে শেষ চারে পৌছেছে মুম্বাই। আইপিএলের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব ও কলকাতা নাইট রাইডার্স খেলবে ‘কোয়ালিফায়ার’ ম্যাচে। তিন ও চার নম্বরে থাকা চেন্নাই সুপার কিংস ও মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স খেলবে এলিমিনেটর ম্যাচে। পরে ‘কোয়ালিয়ার’ ম্যাচের পরাজিত দল ও এলিমিনেটর ম্যাচের জয়ী দল খেলবে দ্বিতীয় ‘কোয়ালিফায়ার’ ম্যাচে। দুই কোয়ালিফায়ার ম্যাচের জয়ী দল ফাইনালে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।