পদ্মা সেতুতে ব্যয় বাড়ছে তিন হাজার কোটি টাকা
রোকন উদ্দিনঃ পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণের কাজ পাচ্ছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। আর্থিক প্রস্তাবনা মূল্যায়নশেষে গত রোববার এ সংক্রান্ত প্রস্তাব ক্রয় কমিটিতে পাঠায় সেতু বিভাগ। তবে নানা জটিলতায় ঠিকাদার নিয়োগ এরই মধ্যে পিছিয়ে গেছে তিন বছর। এতে মূল অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় বাড়ছে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি।
জানা গেছে, ২০১০ সালের ১১ মে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণে প্রাথমিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। চূড়ান্ত মূল্যায়নশেষে ২০১১ সালের মাঝামাঝি ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। সে সময় মূল সেতুর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় নয় হাজার ১২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। তবে বিশ্বব্যাংকের আপত্তিতে ২০১১ সালের আগস্টে প্রকল্পের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
নানা জটিলতায় প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালের ২৬ জুন চূড়ান্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। আর গত ২৪ এপ্রিল মূল সেতুর আর্থিক প্রস্তাব জমা পড়ে। এতে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা দর প্রস্তাব করে চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি। অর্থাৎ মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় বাড়ছে তিন হাজার ছয় কোটি ২২ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১১ সালের মাঝামাঝি পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল অবকাঠামোর ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও তা তিন বছর পিছিয়ে গেছে। এতে ব্যয় বৃদ্ধি স্বাভাবিক বিষয়। তবে চূড়ান্ত দরপত্র আহ্বানের সময় মূল সেতু নির্মাণে যে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় তার চেয়ে কম দর প্রস্তাব করেছে চায়না মেজর ব্রিজ।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন চূড়ান্ত দরপত্র আহ্বানের পর মূল সেতু নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ১৩ হাজার ৮৮৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি এ ব্যয় প্রাক্কলন করে। এ হিসেবে, চায়না মেজর ব্রিজ প্রায় ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ বা ১ হাজার ৭৫২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা কম দর প্রস্তাব করেছে।
আর কারিগরিভাবে যোগ্য অপর দুই প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং সিএন্ডটি করপোরেশন ও ডেলিম-এলএন্ডটি জেভি আর্থিক প্রস্তাব জমা দেয়নি। ফলে চায়না মেজর ব্রিজের আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নশেষে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, ১০টি প্রতিষ্ঠান প্রাক-যোগ্যতা বাছাই দরপত্রে অংশ নিলে ৫টি যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। পরে বিশ্বব্যাংক কালো তালিকাভুক্ত করায় চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে বাতিল করা হয়। ২৬ জুন চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছে চূড়ান্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে তিন প্রতিষ্ঠান অংশ নিলে সবগুলোই কারিগরিভাবে যোগ্য বিবেচিত হয়।
৬ মার্চ আর্থিক প্রস্তাব চাওয়া হলে ২৪ এপ্রিল তা জমা দেয়নি দক্ষিণ কোরিয়ার দুই প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে স্যামসাং সিএন্ডটি করপোরেশন ১০ সপ্তাহ ও ডেলিম-এলএন্ডটি জেভি ১১ সপ্তাহ সময় বাড়ানোর দাবি জানায়। তবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ক্রয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মনসেল-এইকম ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) তাতে সম্মত হয়নি। সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে চায়না মেজর ব্রিজকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করে মনসেল-এইকম ও টিইসি।
মূল সেতু নির্মাণের জন্য চায়না মেজর ব্রিজকে মোট চুক্তি মূল্যের ২৫ দশমিক ৬০ শতাংশ বা ৩ হাজার ১০৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা দেশিয় অর্থে ও ৭৪ দশমিক ৪০ শতাংশ বা ৯ হাজার ২৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা বৈদেশিক মুদ্রায় (ডলারে) পরিশোধ করতে হবে।
গত সোমবার যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে পদ্মা সেতুর কাজ দেয়া হচ্ছে। পরামর্শক ও স্থানীয় মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তাদের এ কাজ পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে এর কার্যাদেশ দেয়া হবে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর বা ২০১৮ সালের প্রথম দিকে এ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতুর নদী শাসন অংশে কারিগরিভাবে যোগ্য পাঁচ প্রতিষ্ঠানের কাছে আর্থিক প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। মূল অবকাঠামো ও নদী শাসনের পরামর্শক নিয়োগ কারিগরি দরপত্র মূল্যায়ন চলছে। আর পদ্মা সেতু প্রকল্পের অপর তিন অংশ- জাজিরা সংযোগ সড়ক, মাওয়া সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকা ২-এর নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। এ তিন অংশের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের প্রতিষ্ঠান এএমএল-এইচসিএম। অংশ তিনটির পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। আর প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।