বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, December 22, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন রানা

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন রানা 

rana
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিঃ  নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারের সঙ্গে এবার নিজের সম্পৃক্ততার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিচ্ছেন র‌্যাবের চাকরিচ্যুত  ranaআরেক কর্মকর্তা এম এম রানাও।এ নিয়ে র‌্যাবের চাকরিচ্যুত দুই কর্মকর্তা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রানা নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজির হয়ে স্বীকরোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া শুরু করেন।
আগের দিন র‌্যাবের চাকরিচ্যুত র‌্যাব কর্মকর্তা মেজর (অব.) আরিফ হোসেন প্রথমবারের মতো সাত খুনের দায় স্বীকার করে একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে তিনি র‌্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদসহ র‌্যাবের প্রধান কার্যালয়ের এক শীষ কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেন।তিনি জানান, এই সাত খুনে র‌্যাবের ১১জন সদস্য অংশ নেন।
নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কে এম মহিউদ্দীন গতকাল বুধবার দুপুরে আরিফ হোসেনের জবাববন্দি গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ৪ ঘণ্টার জবানবন্দিতে আরিফ হোসেন ৭ জনকে অপহরণের পর কোথায়, কিভাবে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয়েছে তার বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি ছাড়াও আরও কারা কারা জড়িত তাদের নামও বলেছেন। এর মধ্যে র‌্যাবের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও একাধিক শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার নাম রয়েছে।
এ ছাড়া জবানবন্দিতে আরিফ হোসেন ৭ জনকে অপহরণ ও হত্যার প্রধান আসামি আলোচিত নাসিক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তার কয়েকজন লোকের নামও বলেছেন। এদিকে আইনজীবী চন্দন সরকার হত্যা মামলায় লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদকে চতুর্থ দফায় ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। সেভেন মার্ডার মামলার আসামি রিমান্ডে থাকা মেজর (অব.) আরিফ হোসেনকে কঠোর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইন থেকে গতকাল সকাল ৮টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দীনের আদালতে হাজির করা হয়। জবানবন্দি দানে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বেলা ১১টা পর্যন্ত আরিফ হোসেনকে সময় বেঁধে দেন আদালত। বেলা ১১টার পর আরিফকে বিচারকের খাসকামরায় নেয়া হয়। সেখানে ৪ ঘণ্টাব্যাপী দীর্ঘ জবানবন্দি দেন আরিফ হোসেন
সূত্র মতে, দু’টি হত্যা মামলার মধ্যে নাসিক প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৫ জনকে অপহরণ ও হত্যা মামলায় ২০ পৃষ্ঠা এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অপহরণ ও হত্যা মামলায় ১৭ পৃষ্ঠার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে আদালত
এ ছাড়া শীর্ষ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা এবং নাসিক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তার কয়েক সহযোগীর নাম বলেছেন। তবে নূর হোসেনকে ঘটনার পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম সংলগ্ন (ময়লা ফেলার স্থান) এলাকা থেকে ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। গাড়িতে তুলেই তাদের প্রত্যেকের শরীরে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করা হয়। এতে তারা অচেতন হয়ে পড়ে। কয়েক ঘণ্টা অচেতন অবস্থায় তাদের কয়েক ঘণ্টা গাড়িতে রাখা হয় এবং হত্যার পর কাঁচপুর ব্রিজের নিচ থেকে নৌকাযোগে লাশগুলো নিয়ে শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীর মোহনায় ফেলে দেয়া হয়
এর আগে লাশ যাতে ভেসে না ওঠে এ জন্য প্রত্যেকটি লাশের সঙ্গে ইট বাঁধার পর লাশের পেট ফুটো করে দেয়া হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ওসি মামুনুর রশিদ ম-ল বলেন, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ৭ হত্যাকান্ডের সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘স্বীকারোক্তিতে মেজর (অব.) আরিফ হোসেন নিজের সম্পৃক্ততার পাশাপাশি বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছেন। তদন্তের স্বার্থে তা বলা সম্ভব নয়।’ এ ছাড়া কিভাবে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয়েছে তার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা এ ৭ হত্যাকাণ্ড নিয়ে এতদিন যা বলে এসেছি এবং যাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার ৯৫ ভাগই আরিফের স্বীকারোক্তিতে উঠে এসেছে।
আদালত সূত্র মতে, সেভেন মার্ডারের ঘটনার পর করা দু’টি মামলাতেই জবানবন্দি দিয়েছেন আরিফ হোসেন। দু’টি মামলার মধ্যে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৫ জনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে একটি মামলা করেছিলেন। এ মামলায় নাসিক কাউন্সিলর নূর হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়াসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এডভোকেট চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম অপহরণ ও পরে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে চন্দন সরকারের মেয়ের জামাতা বিজয় পাল বাদী হয়ে অপর মামলাটি করেন
আরিফ কারাগারেতারেক চতুর্থ দফায় রিমান্ডে
এদিকে নজরুল ইসলামসহ ৫ জনকে অপহরণ ও হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার বিকালে তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও আরিফ হোসেনকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদের আদালতে হাজির করে আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার হত্যা মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত চতুর্থ দফায় তারেক সাঈদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে এবং আরিফ হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

 

 

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone