ভ্যাটের মাশুল গুনবে জনগণ
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ নতুন মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আইন অনুশীলনের প্রস্তুতি হিসেবে এক বছর আগে থেকেই বেশ কিছু পণ্য ও সেবার উপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আবার একাধিক খাতকে ভ্যাট অব্যাহতির তালিকা থেকে বাদ দেয়ায় নতুন করে ভ্যাট দিতে হবে। ফলে স্বভাবতই এসব পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়ে যাবে। একটি সাধারণ মানের রেস্টুরেন্টে খেতেও ভোক্তাকে ভ্যাট আকারে বাড়তি টাকা গুণতে হবে।
এতদিন বাসায় তৈরি করা বিস্কুট ও কেক জাতীয় খাবারের উপর ভ্যাট ছিল না। নতুন বাজেট প্রস্তাবে এসব খাবারকে অব্যাহতির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে এসব খাদ্যের ভোক্তা স্বল্প আয়ের মানুষ এমনটি একজন দিনমজুরকেও ১৫ শতাংশ হারে বাড়তি টাকা গুণতে হবে
অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে জ্বালানি তেলনির্ভর সব গণপরিবহনে ব্যয় বাড়বে। যার মাশুল গুণতে হবে সব শ্রেণির জনসাধারণকে। জ্বালানি তেল নির্ভর শিল্পের ব্যয় বাড়লে পণ্যমূল্যও বাড়বে। অন্যদিকে সব ধরনের পরিবহনের উপর ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে তিন শতাংশ হারে।
অর্থমন্ত্রী ২৩ ধরনের পণ্য ও সেবার উপর সরাসরি ভ্যাটের হার বাড়িয়েছেন। এর বাইরে বেশ কয়েক খাতে ট্যারিফ মূল্য বাড়ানোরও প্রস্তাব করেছেন। এর কয়েকটি বিত্তবানদের টার্গেট করে করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বল্প আয়ের মানুষকেই বাড়তি টাকা গুণতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইও বর্ধিত ভ্যাট ও ট্যারিফ মূল্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। শুক্রবার সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দ্রব্য বা সেবামূল্যের উপর যা প্রকারান্তরে সব শ্রেণির ভোক্তার স্বার্থের পরিপন্থি। এসব পণ্য বা সেবায় বিদ্যমান ভ্যাট ও ট্যারিফ মূল্য বহাল রাখার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি
সংগঠনটির ভ্যাট বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক সঙ্কুচিত ভিত্তিমূল্যে (ভিন্ন ভিন্ন হার) ভ্যাট প্রদানের ব্যবস্থা তুলে দেয়ার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘পরিবহন ব্যবস্থায় ভ্যাট তিন শতাংশ হারে বাড়ানোয় পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাবে। এর প্রতিক্রিয়ায় সব ধরনের পণ্যমূল্য বেড়ে যাবে। ফলে বিশাল সংখ্যক স্বল্প আয়ের মানুষের উপর এই চাপ পড়বে।
এছাড়া কেক আর বিস্কুটের উপর ভ্যাট আরোপ করায় স্বল্প আয়ের মানুষের উপর চাপ পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজধানীসহ দেশের আনাচে-কানাচে ফুটপাথে ছোট ছোট দোকানে মানুষ, লঞ্চ, বাস বা রেলস্টেশনে স্বল্প আয়ের যাত্রীরা এসব খাবার খেয়ে থাকেন। এসব মানুষের কাছ থেকে ভ্যাট নেয়ার কোন যুক্তি থাকতে পারে না।
এছাড়া ভ্যাট বিষয়ে ব্যবসায়ীদের বেশ কিছু দাবি উপেক্ষিত হওয়ায়ও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ক্ষুদ্র শিল্প মালিকদের উপকরণ রেয়াত নেয়ার ক্ষেত্রে মূসক-১১ চালান দেখানের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়নি এ বাজেটেও। তিনি বলেন, দেশীয় শিল্পের ৭০ শতাংশ ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র। তারা স্থানীয় পর্যায়ে কাঁচামাল সংগ্রহ করে। তাদের লেনদেনের ক্ষেত্রে চালানপত্র প্রথা বাস্তববিবর্জিত। এই ব্যবস্থা রাখায় মাঠ পর্যায়ের রাজস্ব কর্মকর্তাদের দুর্নীতি করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আখেরে পণ্যমূল্য বাড়ছে আর ভোক্তার উপর চাপ পড়ছে।
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী, উল্লিখিত পণ্য বা সেবার বাইরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস, লঞ্চ ও রেল সেবার উপর বিদ্যমান ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ, গাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কসপ, ডক ইয়ার্ড, ফটো নির্মাতা ও পরিবহন ঠিকাদারের উপর ভ্যাট সাড়ে ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের উপরও বাড়তি তিন শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া ডেভেলপারদের ভ্যাট দ্বিগুণ, জুয়েলারি সেবার ভ্যাটও প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, ভ্যাট আরোপ, ভ্যাটের হার বাড়ানো বা নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হলে ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যের একটা প্রতিক্রিয়া হবে। তবে এই চাপের একটি অংশ উত্পাদক পর্যায়েও পড়বে। তিনি বলেন, এসব কারণে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতিতেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
অন্যদিকে জ্বালানি তেলে বিপিসি’র (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন) ভর্তুকির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনলে বর্ধিত মূল্যের চাপ ভোক্তা পর্যায়ে চলে যাবে। এসব প্রতিক্রিয়ায় বিদ্যুতের মূল্যও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে ভোক্তার ভোগ ব্যয় বা চাহিদা বাড়ানোর লক্ষ্য সফল নাও হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
Posted in: জাতীয়