মার্কিন সেনাবাহিনীতে যৌন নিগৃহীত হয় নারী সেনারা
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সেনাবাহিনীতে ভর্তি হওয়ার আগ মুহূর্তটি পর্যন্ত মার্কিন নারী সেনারা জানবার সুযোগ পান না যে একসঙ্গে কতগুলো ফ্রন্টে তাদের যুদ্ধ করতে হবে। সেনাবাহিনীতে নাম লেখানোর পর মার্কিন নারীদের জানিয়ে দেওয়া হয় সম্ভাব্য দুটো ফ্রন্টে তাদের লড়তে হবে। এর একটি হচ্ছে যুদ্ধকবলিত দেশের চরম বৈরী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করা। অন্যটি হচ্ছে যুদ্ধাঞ্চলের মানুষের বৈরী আচরণ সহ্য করা ও পরিস্থিতি মোকাবিলা করে টিকে থাকা। এসব কৌশল খুব ভালোভাবে রপ্ত করতে হয় মার্কিন নারী সেনাদের। তাদের জন্য রয়েছে ভালো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। তবে মার্কিন নারী সেনাদের আরো একটি চরম বৈরিতার বিরুদ্ধে সমানে যুদ্ধ করে যেতে হয়। সেটি হলো সহযোদ্ধা পুরুষের যৌন লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।
মার্কিন সেনাবাহিনীতে যৌন লাঞ্ছনাবিষয়ক একটি বিশদ প্রতিবেদন সম্প্রতি দেশটির প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। উদ্বেগজনক তথ্য হলো, ইরাক ও আফগানিস্তানের মতো ভয়াবহ ও দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধকবলিত দেশগুলোয় নিয়োজিত মার্কিন নারী সেনারা যৌন লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন বেশি। এই হার শতকরা ১৬ ভাগ। এই প্রতিবেদন নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। কীভাবে নারী সেনাদের যৌন লাঞ্ছনা প্রতিরোধ করা যায়, তার উপায় ও কৌশল বের করতে একটি কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে। এই কারণে মার্কিন নারীরা সেনাবাহিনীতে যোগদানে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বড় উদ্বেগের বিষয়ও হচ্ছে সেটাই। সময় সংবাদ ডটকম ডেস্ক।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সমরাভিযানগুলো পরিণত হয়েছিল বর্ণবিদ্বেষী যুদ্ধে। সৈনিক শিবিরগুলোও পরিণত হয়েছিল বর্ণবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের আখড়ায়- এ খবর পুরোনো। পরবর্তীকালে সেনাসদস্যদের মধ্যে শ্রেণিগত অবস্থানের দ্বন্দ্ব ও তার সঙ্গে যুক্ত বর্ণবিদ্বেষ মার্কিন সেনাবাহিনীর সংহতিকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করে। এখন মার্কিন সেনাবাহিনীতে পুরুষ সেনাদের হাতে নারী সেনাদের যৌন নিগৃহের ঘটনা প্রকট হয়ে উঠেছে। দেশটির সমর বিশেষজ্ঞরা নতুন এই উপসর্গ নিয়ে রীতিমতো বিচলিত। পরিস্থিতি সামাল দিতে খুঁজছেন কৌশল। তবে সমালোচকরা বলছেন, অতি আধুনিক ও উন্নত সমরাস্ত্রের জোরে দেশে দেশে আগ্রাসন চালিয়ে বিজয় প্রতিষ্ঠার ঝোড়ো হাওয়ায় বেমালুম চাপা পড়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে সংঘটিত এসব ভয়াবহ কুকীর্তি। তারা জোর দিয়ে বলছেন, সভ্য জীবনাচার ও নৈতিকতার ওপর নির্ভরশীল মানবসভ্যতায় যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তৃত সামরিক ও বেসামরিক পরিসরে এমন অনৈতিকতা ও অবমাননায় আশাহত বিশ্ববিবেক গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক টম মায়ারি ডল বলেন, বিশ্বমানবতার দোহাই দিয়ে যারা দেশে দেশে গিয়ে যুদ্ধ করছে, তারাই আবার নিজের নারী সহযোদ্ধাকে ধর্ষণ করছে। তারা অন্য দেশের নারীদের সম্ভ্রম কীভাবে রক্ষা করবে। মার্কিন প্রতিরক্ষাবিষয়ক ‘ট্রুথ আউট’ নিবন্ধের লেখক এইম এভ্রইট বলেছেন, লোভ, লুণ্ঠন, খুন, বিনাশ, অপহরণ , ধর্ষণ ও যৌনাচারে মগ্ন মার্কিন সেনাদের ভাবমূর্তি নিয়ে নাগরিকরাই বেশি উদ্বিগ্ন। এসব মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড যেন মার্কিন সেনাবাহিনীর অঙ্গ হয়ে গেছে।