সারাদেশ অচল করার পরিকল্পনায় এগুচ্ছে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি কিছুটা সময় হাতে রেখে ফের ঈদের পর রাজপথে নামবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগে রাজধানী ঢাকা থেকে সারাদেশকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে অচল করে রাখা হতো; এবার ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে চাচ্ছে বিএনপি। ঢাকাসহ সারাদেশ অচল করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে দলটি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আসছে ঈদের পর ঢাকায় একটি বিশাল জনসমাবেশের আয়োজন করবে বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন দলটির চেয়ারপারসন ও ১৯ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আর সেই জনসমাবেশে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে শেষবারের মতো সংলাপের আহ্বান জানানো হবে। একইসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে পুনঃনির্বাচন দেয়ারও আহ্বান জানানো হবে।
সেক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে সংলাপ-সমঝোতায় সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচন ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ না করা হলে আন্দোলনের বিকল্প থাকবে না। দেশে গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধার করার মাধ্যমে ভোটের অধিকার রক্ষায় সমগ্র দেশ অচল করার আন্দোলন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হতে পারে ওই সমাবেশে।
বিএনপি’র দফতর সূত্রে জানা গেছে, রমজানের মধ্যে বিএনপি আন্দোলনের জন্য তাদের সাংগঠনিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করবে। নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবি আদায়ে বিএনপি এবার উত্তাল আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ আন্দোলনে শুধু বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটেই নয়, বরং সরকার বিরোধী ভিন্ন মত পোষণকারী সর্বস্তরের রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সমাজের বিশিষ্ট নাগরিক, সুশীল সমাজ, পেশাজীবীদের শরিক করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। এ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে ক্ষমতা থেকে হঁটানো হবে বলে বিশ্বাস করে বিএনপি।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের আলোচনা সাপেক্ষে সব সময়ই সংলাপের বিষয়ে প্রস্তুত ছিল। এখনো রয়েছে। পক্ষান্তরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী জনসমর্থন ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সংলাপের বিষয়টি বারবার এড়িয়ে চলেছে। তাই বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ মনে করেন দেশের বিরাজমান সংকট থেকে উত্তরণে ক্ষমতাসীন দলকেই সংলাপের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় ক্ষমতাসীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কাল বিলম্ব করবেন না। অপহরণ, গুম ও খুন বন্ধ করে সুস্থ মন নিয়ে আলোচনার টেবিলে আসুন। অসুস্থ মন নিয়ে আলোচনায় আসবেন না। আসুন গণতন্ত্র রক্ষায় সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে রক্ষা করি।’
তিনি বলেন, ‘সংলাপ, আলোচনা ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে আমরা নির্বাচন চাই। কারণ, নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্রকে রক্ষা করা যাবে না। গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে দেশের সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি’র একজন নেতা বলেন, ‘রাজনীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেই। এটা যেমন সত্য। ঠিক তেমনি সত্য অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকারের স্বঘোষিত প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বিএনপি’র নির্বাচনে না যাওয়া।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি গণমানুষের রাজনীতি করে। যে সরকার শুধু নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে সংবিধান পরিবর্তন করে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়। আর যাই হোক তাদেরকে ক্ষমতায় রেখে তাদের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া বোকার স্বর্গে বসবাস করা ছাড়া কিছু হতে পারে না।’
এদিকে, মঙ্গলবার বিএনপি সমর্থিত নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী মতবিনিময় করেন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে খালেদা জিয়া বলেছেন, ঈদের পর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আর এমন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে যে ক্ষমতাসীন সরকারের অস্ত্র স্তব্ধ হয়ে যাবে।’
বেগম জিয়া বলেন, ‘এই সরকার অবৈধ। সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। আপনারা হচ্ছেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। কাজেই ব্যক্তিগত কাজের অজুহাতে ঢাকায় বসে না থেকে জনগণের পাশে দাঁড়ান। তাদের পক্ষ হয়ে এই জুলুমবাজ সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।’
তিনি বলেন, ‘আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রাম শতভাগ সফল করে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিজেদের ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অবৈধ আওয়ামী সরকারের পতন নিশ্চিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।