সরিয়ে নেয়া হতে পারে জিয়ার কবর
এই দেশ এই সময়,ঢাকাঃ বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যান ও জাতীয় সংসদ ভবনের পাশ থেকে সরিয়ে নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। সেক্ষেত্রে জিয়ার কবর প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে নেয়া হতে পারে। আর সরকারের এ পরিকল্পনায় বিএনপির তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়।
দলটির বড় একটি অংশ মনে করছে আওয়ামী লীগ গত ৫ বছরে বিএনপির প্রতি যে বিরুপ আচরণ করেছে তাতে সরকার এ পরিকল্পনারও বাস্তবায়ন করতে পারে। তাই তারা আগেভাগেই সরকার এহেন ন্যাক্কারজনক কাজ যেনো করতে না পারে সে বিষয়ে পরিকল্পনা মাফিক এগুতে বলছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ধর্মীয় মতে, মাজার সরানো যায় কী না তা আমার জানা নেই। তবে এইটা জানি মাজারের সম্মানার্থে তা সরানো হয়না। ব্যস্ততম গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার তো রাস্তার মাঝখানে। ৪ পাশ দিয়েই তো রাস্তা। ওই মাজারটিকে তো সরানো হয়নি।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশের জনগণ কী আ’লীগ সরকারকে মাজার সরানোর দায়িত্ব দিয়েছে। এটা কী সরকারের কাজ। সরকারের তো উচিত জনগণের জন্য কাজ করা। এ রকম হলে তো পরবর্তী সরকার এসে শেখ মুজিবের মাজার সরানোর কথা বলবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. মাহবুবুর রহমান বলেছেন, জিয়াউর রহমানের কবর সরিয়ে সচিবালয় করার চিন্তা অবাস্তব। এরকম কোনো চিন্তার প্রতিফলন ঘটাতে চাইলে জনগণ তা প্রতিহত করবে।
জিয়ার মাজার সারানোর চেষ্টা করলে তা স্ট্রংলি প্রটেস্ট করা হবে বলে বলেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ উদ্দীন আহমেদ বীর বিক্রম।
জনগণকে বিভ্রান্ত করতে ও বিএনপিকে ধ্বংস করতেই এ বক্তব্য দেয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, এটা পাগলের প্রলাপ। সরকার জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলাসহ জিয়া পরিবারের ওপর নানা চক্রান্ত করে যাচ্ছে। জিয়ার মাজার সরানোর কথা বলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।
দলটির দায়িত্বশীল এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একনেক বৈঠকে হঠাৎ করে এ আলোচনা অবশ্যই উদ্দেশ্য প্রণোদিত। বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন সিনিয়র নেতা বৈঠক করবেন। ম্যাডামও সেখানে থাকবেন। যদি সরকার এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় তবে তা প্রতিহত করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন নি দলের দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্মমহাসচিব রুহল কবীর রিজভী। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনার পরই কথা বলবো। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফোন রিসিভ করেন নি।
মঙ্গলবার শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেক সভায় এক অনির্ধারিত আলোচনায় জিয়ার মাজার সরানোর বিষয়টি উঠে আসে।
সচিবালয় স্থানান্তর প্রসঙ্গে একনেক সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই জায়গা যদি সচিবালয়ের জন্য নির্ধারিত থাকে এবং সবাই যদি একমত পোষণ করেন তাহলে কবর সরানো যেতে পারে।’
তবে এ বিষয়ে বৈঠকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
একনেকের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয় আগারগাঁওয়ে ডাক অধিদপ্তরের সদরদপ্তর নির্মাণ নিয়ে। সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প তুলে ধরেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, অনেক সরকারি অফিস এরইমধ্যে শেরে বাংলানগরে চলে গেছে। কিন্তু নতুন কোনো সরকারি অফিসের জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না। জায়গার অভাবে সচিবালয়কেও শেরে বাংলানগরে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘লুই আই কান যে নকশা করেছিলেন, সে নকশায় জিয়াউর রহমানের মাজারের জন্য আলাদা জায়গা ছিল না। সেখানে সচিবালয় করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সেখানে জিয়াউর রহমানের মাজার করা হয়েছে। এর ফলে ক্রিসেন্ট লেকের সৌন্দর্যও নষ্ট হয়েছে।’
সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের বরাতে তিনি বলেন, ওখানে আসলে জায়গাটা খালি ছিল। সেখানে মাজার করার কোনো পরিকল্পনাই ছিল না। নিয়ম না মেনেই এই মাজার করা হয়েছে।
দেশের স্বার্থে সবাই যদি একমত পোষণ করেন এবং ওটা যদি সচিবালয়ের জন্য নির্ধারিত থাকে তাহলে মাজার সরানো যেতে পারে বলেও এসময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজধানীর শেরে বাংলানগরে সংসদ ভবন, পরিকল্পনা কমিশন, নির্বাচন কমিশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ আরো অনেক সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিস রয়েছে। অনেক আগেই শেরে বাংলানগর এলাকায় সচিবালয় স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা আর হয়নি।
ক্রিসেন্ট লেকের ওপর দিয়ে তৈরি একটি বেইলি ব্রিজ দিয়ে সরাসরি জিয়াউর রহমানের কবরে যাওয়ার পথ করা হয়েছিলো। এর আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা কালে সেই ব্রিজটি সরিয়ে ফেলা হয়।