অপেক্ষা নিজামীর রায়ের
এই দেশ এই সময়,ঢাকাঃ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর রায় আজ ঘোষণার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তা হয়নি। মেডিকেল প্রতিবেদন অনুযায়ী শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা সম্ভব হয়নি। জেল কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন পাওয়ার পর ফের তারিখ নির্ধারণ করা হবে বলে জানানো হয়।
মঙ্গলবার আসামিপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।
বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘কারাকর্তৃপক্ষ আমাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, মতিউর রহমান নিজামী অসুস্থ। তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা যাচ্ছে না। এ কারণে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ শুনানি শেষ করলেও তার (নিজামী) অনুপস্থিতিতে রায় ঘোষণা সমীচীন মনে করছি না।’
গতকাল সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রায়ের জন্য আজ মঙ্গলবার ধার্য করেছিলেন।
জানা গেছে, উচ্চ রক্তচাপের কারণে গতকাল রাত থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে পাঠানো মেডিকেল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২৩ জুন (সোমবার) দিবাগত রাত ১টা ২০ মিনিটে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন কেন্দ্রীয় কারাগারের চিকিৎসকরা।
এ সময় তার অস্বাভাবিক উচ্চরক্তচাপ ধরা পড়ে। সকালে তাঁকে আবার পরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা। এ সময়ও তাঁর অস্বাভাবিক উচ্চরক্তচাপ ধরা পড়ে। ফলে, এমতাবস্থায় মাওলানা নিজামীকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা যাচ্ছে না, চিকিৎসকরা তাকে পুরো বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মর্মে উল্লেখ করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলছে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে মামলাটির বিচার। ২০১২ সালের ২৮ মে ট্রাইব্যুনাল-১ নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন। একই দিনে ট্রাইব্যুনাল-২ এ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলার বিচার শুরু হয়েছিল। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর ওই মামলার আপিল নিষ্পত্তি ও রায় কার্যকর হয়ে গেছে।
মামলাটির দীর্ঘসূত্রতার কয়েকটি কারণও রয়েছে। এ মামলায় ১৭ মাস ধরে ৩০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। নিজামী ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলারও আসামি হওয়ায় গত বছর ওই মামলার জন্য তাঁকে সপ্তাহে দু’দিন চট্টগ্রামে নেওয়া হতো। ওই মামলায়ও তাঁর দণ্ড হয়েছে। ১৩ নভেম্বর প্রথম দফায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাটির রায় অপেক্ষমাণ রাখা হলেও ট্রাইব্যুনালের আদেশে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন চলে। রায় ঘোষণার আগেই ৩১ ডিসেম্বর অবসর নেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর। ২৩ ফেব্রুয়ারি চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে ১০ মার্চ থেকে দ্বিতীয় দফায় সমাপনী যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়, শেষ হয় ২৪ মার্চ। নিজামীর বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন প্রভৃতিসহ ১৬ অভিযোগ রয়েছে।