মধ্যপ্রাচ্য থেকে কমছে রেমিটেন্স
এই দেশ এই সময়ঃ রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকারের কূটনৈতিক যোগাযোগে ব্যর্থতা, পররাষ্ট্রনীতিতে অতিমাত্রায় ভারতমুখী হওয়া, মুসলিম দেশ হিসেবে মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্কের অবনতি এবং সর্বশেষ ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন ইত্যাদি কারণে ক্রমেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। এর বিরূপ প্রভাব এবার পড়ল প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর।
সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ কমে গেছে। রেমিটেন্স পাঠানোর তালিকা অনুযায়ী দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে ক্রমেই কমছে এ হার। ১৯৭৫ সালের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো অর্থবছরে রেমিটেন্স কমলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে এক হাজার ৪২২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছে। যা ২০১২-১৩ অর্থবছরের চেয়ে ২৪ কোটি ডলার বা ১ দশমিক ৬ শতাংশ কম। তখন রেমিটেন্স এসেছিল এক হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার।
তবে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স কমেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব থেকে। এ বছর সৌদি থেকে রেমিটেন্স এসেছে ৩১১ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। অথচ গত বছর ছিল ৩৮২ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। শুধু এ দেশ থেকেই এক বছরে রেমিটেন্স কমেছে ৭১ কোটি ডলার।
রেমিটেন্স প্রবাহের হার কমার কারণ উল্লেখ করে সিপিডির নির্বাহী পরিচলক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিনটি কারণে রেমিটেন্স প্রবাহে ভাটা পড়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডিজিটাল পাসপোর্ট নিয়ে সমস্যা এবং সৌদি আরবে আকামা সমস্যার কারণে শ্রমবাজারে প্রভাব পড়েছে। তবে আশা করা যায় আগামী বছরে রেমিটেন্সের এ ঘাটতি কাটিয়ে উঠা যাবে।
সৌদি আরব থেকে ২০০৯-১০ অর্থ-বছরে রেমিটেন্স এসেছে ৩৪২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১০-১১ অর্থ-বছরে এর পরিমাণ ছিল ৩২৯ কোটি ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে দাঁড়ায় ৩৬৮ কোটি ৪২ লাখ ডলারে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে এসে দাঁড়ায় ৩৮২ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে।
বৈশ্বিক মন্দাতে বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকে ছিল রেমিটেন্সের ওপর ভর করে। সেই রেমিটেন্স কমার কারণ খতিয়ে দেখছে বিশ্লেষকরা। বর্তমানে বাংলাদেশের সাথে মুসলিম বিশ্বের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না। একারণেই সৌদি আরব, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশেই বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
রেমিটেন্স পাঠানোর তালিকায় সৌদি আরবের পরের অবস্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশটি থেকে রেমিটেন্স এসেছে ২৬৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। যা গত বছরের চেয়ে ১৪ কোটি ডলার কম। একই ভাবে রেমিটেন্স কম এসেছে কাতার ও কুয়েত থেকে।
এ বছর রেমিটেন্স কমেছে যুক্তরাজ্য থেকেও। দেশটি থেকে গত বছরের চেয়ে এ বছর ৯ কোটি ডলার রেমিটেন্স কমেছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে এ বছর কমেছে ৫৭ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে জানাগেছে, ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছিল ১ কোটি ডলার। এরপর থেকে রেমিটেন্স প্রবাহের হার শুধু বেড়েছে কমেনি। ২০১২-১৩ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে রেমিটেন্স বেড়েছিল ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ বছরে কমল দেড় শতাংশের চেয়েও বেশি।
বর্তমানে রেমিটেন্স পাঠানোর তালিকায় থাকা শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে সৌদি আরব থেকে ২২ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১৯ শতাংশ ও আমেরিকা ১৬ শতাংশ, কুয়েত ৮ শতাংশ, মালয়েশিয়া ৭ শতাংশ, অন্যান্য দেশ থেকে আসে ২৮ শতাংশ।