বিএনপির ঈদ-পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা ও কৌশল চূড়ান্ত
মোঃ জাফর ইকবাল, ঢাকা : ঈদ-পরবর্তী আন্দোলন ও দল পুনর্গঠনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। এ সময় তারা আন্দোলনের রূপরেখা ও কৌশল চূড়ান্ত করেছেন বলে জানা গেছে।
সৌদি আরবে সফররত খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান মসজিদে নববীর সন্নিকটে দারুল ইমান হোটেলে অবস্থান করছেন। সঙ্গে রয়েছেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা· জোবায়দা রহমান, কন্যা জাইমা রহমান এবং খালেদা জিয়ার দুই ভাই মরহুম সাঈদ এস্ড়্গান্দার ও শামীম এস্ড়্গান্দারের স্ত্রী-সন্তানরা।
সূত্র মতে, গত রোববার ভোরে মদিনায় পৌঁছার পর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দুই দিনে পারিবারিক সম্মিলনের পাশাপাশি ৪ বার একান্ত বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকের আগে ও পরে তারা দলের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উদ্যোগী হন। এতে সহায়তা করেন তিন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মারুফ কামাল খান এবং সাবেক ছাত্রনেতা রকীবুল ইসলাম বকুল।
সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বৈঠকগুলোতে মূলত দল পুনর্গঠন এবং আন্দোলনের নতুন রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়। দোয়া-মোনাজাতেও স্থান পাচ্ছে আন্দোলনের সফলতা এবং সরকার পতনে আলস্নাহর সহায়তা কামনা।
খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী এবং ওমরাহ করতে আসা দলের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, তারেক রহমান ইবাদতের পাশাপাশি রাজনীতি নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর তিনি নতুন পরিকল্পনায় এগোচ্ছেন। আগামী দিনের আন্দোলন পরিকল্পনায় তা বাস্তবায়ন করতে চান। দলের সিনিয়র একজন নেতা জানান, তারেক রহমান এখন অনেক বেশি পরিণত। তিনি জানেন, কিভাবে সামনে এগোতে হয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনা কেবল নতুন নির্বাচনের মাধ্যমেই সম্্ভব বলে মনে করেন তিনি।
তার ধারণা, সরকার বেশিদিন স্থায়ী হলে তারা আরো বেশি ভয়ঙ্কর হতে পারে। আর এতে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়বে। জুলুম-নির্যাতনের ঘেরাটোপ থেকে তারা সহজে বের হতে পারবে না। এসব কারণেই বৈঠকে খালেদা জিয়া আন্দোলন ইসুøতে প্রথমে আরেকটু সময় দেয়ার পক্ষে অবস্থান নিলেও পরে মত পরিবর্তন করেন।
এদিকে, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান পবিত্র মদিনা শরিফে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সোমবার (২১ জুলাই) প্রথম প্রহরে (রাত ১২টা ১০ মিনিট) তারা মসজিদে নববীতে অবস্থিত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স·)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। সেখানে দোয়া ও মোনাজাতে তারা দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করেন। এ সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা· জোবায়দা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা· এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী এনামুল হক চৌধুরী, সৌদি আরব পশ্চিমাঞ্চল বিএনপির সভাপতি আহমদ আলী মুকিব, সাবেক ছাত্রনেতা রকীবুল ইসলাম বকুল প্রমুখ।
এর আগে গত রোববার মসজিদে নববীর ২২ নাম্বার গেটের সামনের খোলা জায়গায় সৌদি বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে দোয়া, মোনাজাত ও ইফতার করেন তারেক রহমান। মোনাজাত করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের স্থানীয় সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী।
সেখানে সফরসঙ্গী ছাড়াও বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা· এজেডএম জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, জিয়ানগর উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী, বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, বিএনপি নেতা ও সৌদি আরব সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুুর রহমান, সৌদি পশ্চিমাঞ্চল বিএনপির সভাপতি আহমদ আলী মুকিব, তাঁতি দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, যু্বদলের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল জলিল, জেদ্দা মহানগর বিএনপির সভাপতি কেফায়েতউলস্নাহ চৌধুরী ও এম আজাদ চয়ন, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান তপন, যুবদলের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা এরশাদ আহমেদ, বিএনপি নেতা নূরুজ্জামান এবং আবু সাঈদসহ কয়েকশ্থ নেতাকর্মী।
মদিনায় নেতাকর্মীদের সবচেয়ে আকর্ষণের জায়গা হচ্ছে তারেক রহমান। তাকে দেখার জন্য, একটু হাত মিলানোর জন্য প্রবাসী নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ আগ্রহ দেখা গেছে। মদিনায় তারেক রহমান এখনো পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনো বক্তৃতা করেননি। জানা গেছে, তিনি জেদ্দায় একটি সমাবেশে অংশ নিতে পারেন।
তিনি প্রতি ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করছেন এবং নফল ইবাদতের পর বিশেষ মোনাজাত করছেন। পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য আজ সন্ধ্যায় তারা মক্কার উদ্দেশে রওনা হবেন