যেভাবে রাঁধুনী হলাম
নাহিদ ওসমান:
খুব অল্প বয়সে আমার বিয়ে হয়ে যায়। স্বামী ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান। পাশাপাশি বাবার ব্যবসাও দেখছিল। আমি তখন সুইট সিক্সটিন। মেট্রিক পরীক্ষা দেব। আমার স্বামী শওকত ওসমান। ভীষণ সুদর্শন। তার ওপরে আবার শিল্পী সত্ত্বার অধিকারী। তাকে ভালো না বেসে উপায় ছিলনা। অন্যদিকে আমি আবার রান্নার ব্যাপারে ছিলাম খুব আনাড়ি। বিয়ের এক মাস পরে শ্বশুড়ের আদেশে আমাকে রসুই ঘরে ঢুকতে হয়। শাশুড়ির কাছেই আমার রান্নার হাতে খড়ি। আর সেই খড়ি নিতে গিয়ে কতোবার যে হাত কেটেছি, কখনো পুড়িয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। তবে এ ব্যপারে আমার শ্বাশুড়ি কখনো সহনুভূতি দেখাতেন না। তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত প্রশিক্ষক। তখন ভীষণ খারাপ লাগতো। বিরক্ত হতাম। মাঝে মাঝে কাঁদতাম। তবে এখন বুঝি তিনিই সঠিক ছিলেন। যখন পেছনের দিকে তাকাই শ্রদ্ধায় তাঁর প্রতি মাথা নত হয়ে যায়।
আমি ভীষণ মাছ ভালোবাসি। শওকত ভোজন রসিক হওয়ার পরেও মাছ খেত না। তাকে মাছ খাওয়াতে আগ্রহী করার জন্যই আমি মাছ রান্নার রেসেপি সংগ্রহ শুরু করলাম। মা খুব ভালো মাছ রান্না করতেন। তাঁর কাছ থেকেই বেশির ভাগ রেসিপি পেয়েছি। তাই আমার অদম্য উৎসাহের কারণে এক সময় জয়লাভ করেছিলাম। আমার রান্না খেয়ে শওকত মাছের প্রতি আগ্রহী হয়। দু’জনেই তখন ছাত্র ছিলাম বলে আমাদের আয় ছিল কম। এজন্য বন্ধুদের আপ্যায়ন করতে কখনো রেস্টুরেন্টে যেতে পারতাম না। তাই স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে বিভিন্ন রেসিপি যোগাড় করে বাসায়ই নানা খাবার তৈরি করে বন্ধুদের দাওয়াত করতাম। এভাবেই আমাদের রাঁধুনী জীবনের শুরু।
এভাবে চলে গেল সংসার জীবনের ৫টি বছর। আমার কোলে প্রথম সন্তান এল। শ্বশুড়-শাশুড়ির সংসার থেকে আলাদা হলাম। ওই অবস্থায় টের পেলাম শ্বাশড়ির শিক্ষাটা খুব কাজে লাগছে। তবু রান্না তেমন ভালো হতো না। শওকত তো খেতেই পরতো না। আমার চোখের সামনে রান্না করা খাবার গুলোর জায়গা হতো ডাস্টবিনে। খুব কষ্ট হতো।
আমার বাবার বাড়ি ছিল বিক্রমপুরে। সেখানে পদ্মার ইলিশ পাওয়া যেত। মা এর বাড়িছিল বরিশালে যেটা নারকেলের জন্য বিখ্যাত। আবার শ্বশুড় বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় হওয়ার কারণে বিভিন্ন রকম ও বৈচিত্রপূর্ণ রান্নার সঙ্গে আমি পরিচিত ছিলাম। এ বিষয়টি আমার রান্না শেখায় সাহায্য করেছে।
২০০২ সালে বন্ধু সারা যাকের একটি অফার দিলো। কলকাতার তারা টিভিতে একটি রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠানে স্বামী-স্ত্রী দু’জনকে রান্না করতে হবে। অনুষ্ঠানটির নাম ছিল খুন্তি-কড়াই। সেখানে শওকত ও আমি দু’জনে মিলে কাজ শুরু করলাম। পাশাপাশি আমি আর্ট নিয়েও কাজ শুরু করলাম। তো খুন্তি – কড়াই ৫২টি পর্ব সম্পূর্ণ করার পর। আরটিভি থেকে একটি অফার আসলো, ওই সময় আমি এক প্রকার তারা টিভির সিইও রাতিকান্ত বাসুকে কষ্ট দিয়েই চলে আসলাম। আর রান্নাতে প্রায় ৫৮টি পর্বের মতো কাজ করলাম। খুব জনপ্রিয় হলো অনুষ্ঠানটি। সবাই আমাকে জানতে পারল। হয়ে গেলাম আমি সবার নন্দিনী। অগ্নিকাণ্ডের কারণে আরটিভি বন্ধ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আমার অনুষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে তারা পরবর্তী ৫ বছর আমার অনুষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে তারা পরবর্তী ৫ বছর আমার অনুষ্ঠান গুলো প্রচার করে। এরপর অনেক জায়গায় থেকে অফার আসলো তবে আমার একটাই কথা, ইনডোরে থেকে আর কাজ করবো না। পারলে এবার ট্রাভেল শো করবো। বাঙালি খাবারটাকে সবার কাছে পরিচিত করানোটা আমার একটা উদ্দেশ্য হয়ে গেছে। এরই মধ্যে টেলিভিশনে আরও কয়েকটি অফার পেলাম। রাঁধুনী গুড়া মশলার ব্যান্ড এম্বাসেডর হয়ে সারা দেশে খ্যতি অর্জন করলাম। কিন্তু আমার মূল লক্ষ্য আমাদের দেশি রান্নাকে দেশে-বিদেশে জনপ্রিয় করে তোলা।