বিশ্বব্যাপী শান্তির জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করার আহবান
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ হিরোশিমা দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা বিশ্ব শান্তির জন্য লড়াই করার আহবান জানিয়েছেন। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের নৃশংসতার কথা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, বর্তমান বিশ্বে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের ঐক্যবদ্ধ হওয়া সবচেয়ে বেশি জরুরি।
আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘হিরোশিমা দিবস ও প্যালেস্টাইনে ইসরাইলী-মার্কিন হামলা বন্ধ কর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ আয়োজিত এ আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানী, সাবেক আইন মন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী ও শান্তি আন্দোলনের অন্যতম নেতা ড. রফিকুল ইসলাম।
সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ও বিশ্ব শান্তি পরিষদের সহ-সভাপতি রাজনীতিক মোজাফফর হোসেন পল্টু।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. এম. আকাশ।
কামাল লোহানী বলেন, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেনি। যারাই বলার চেষ্টা করেছে, তাদের উপর বোমা হামলা বা যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ দেখেছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ঔদ্ধত্ব। সে সময় আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে তারা সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়েছিল। কিন্তু তারপরও তারা পরাজিত হয়েছিল।
কামাল লোহানী বলেন, মার্কিন মদদে গাজায় ফিলিস্তিনবাসীদের উপর ইসরাইলের নৃশংসতা ও হত্যাযজ্ঞ প্রতিরোধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের লড়াই করতে হবে। এ জন্য এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
তিনি বলেন, শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়া একটি মানুষ আমাদের দেশেও আছে। ড. ইউনুস নামের সেই মানুষটি এখন কেন কোন কথা বলছেন না? নারী ও শিশুসহ গাজার নিরীহ মানুষদের উপর ইসরাইলের বর্বরতা কি তার হৃদয়কে নাড়া দিচ্ছে না?
কামাল লোহানী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের পর মৌলবাদ ও সন্ত্রাস বিরোধী এবং রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধ মুক্ত বাংলাদেশ গঠনে চেষ্টা করছি। আজও সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধ মুক্ত বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন যারা দেখছেন, আসুন তারা সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। তাহলেই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, বিশ্ব শান্তির জন্য মার্কিন শক্তি আজ হুমকি স্বরূপ। তাদের প্রতিহত করতে বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আসুন, বিশ্ব শান্তির সপক্ষের সে ডাক বাংলাদেশ থেকে তুলি। বাংলাদেশ সব সময় শান্তির সপক্ষে রয়েছে।
তিনি বলেন, ধর্মের নামে যে জামায়াত ইসলাম সোচ্চার, আজ তারা নিশ্চুপ কেন? ফিলিস্তিন মুসলমানদের ইসরাইলি ইহুদীরা হত্যা করছে, জামায়াত ইসলাম ও ইসলামের হেফাজতকারীরা কি এখন তা দেখছেন না? কোথায় তারা এবং নিশ্চুপ কেন?
পল্টু বলেন, জাতিসংঘ ঠুঁট জগন্নাথ হিসেবে কাজ করছে। মার্কিন আধিপত্য কমাতে জাতিসংঘের সদর দফতর আমেরিকা থেকে অন্যত্র সরিয়ে আনারও তিনি দাবি জানান।
আবদুল মতিন খসরু বলেন, গত ৭০ বছরে প্যালেস্টাইনের ন্যায্য দাবির বিরুদ্ধে বহুবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেটো পাওয়ার প্রয়োগ করেছে। তিনি জাতিসংঘের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে এই ভেটো পাওয়ার রহিত করার দাবি জানান।
তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের অস্ত্র উৎপাদন, বিক্রি ও তার ব্যবহার বন্ধে চাপ প্রয়োগের জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান।
যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত স্টিফেন র্যাপ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিশেষ কোন দলের বিচারের বিরোধীতা করায় আবদুল মতিন খসরু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আমাদের হেদায়েত করবেন না। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তখন আপনাদের মানবতা কোথায় ছিল?
ফিলিস্তিনের গাজা সংকটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনের অবস্থানের প্রতিবাদ জানিয়ে ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী ব্যারনেস সাইয়েদা ভার্সি পদত্যাগ করায় মতিন খসরু তাকে ধ্যন্যবাদ জানান।
ডা. সারোয়ার আলী বলেন, আমরা একটি অন্যায্য বিশ্বে বসবাস করছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে পারমানবিক বোমা বানাতে দিচ্ছে না। অথচ ইসরাইলের কাছে ২০০ পারমানবিক বোমা রয়েছে, য্রা ৫০টি আবার এ্যাকটিভ অবস্থায় আছে। সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
তিনি বলেন, বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আমাদের বলতে হবে সকল পারমানবিক বোমার ধ্বংস চাই। বিশ্ব সভ্যতার জন্য এখন এটা জরুরি।