নগর জীবনে একটু স্বস্তি ও শীতল পরিবেশ দিতে এয়ারকন্ডিশনারের বিকল্প নেই
মোঃ জাফর ইকবাল, ঢাকা : নগর জীবনে একটু স্বস্তি দিতে এয়ারকন্ডিশনার (এসি) বা এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম এর কোনো বিকল্প নেই। সেই প্রভাতে শুরু হয় কর্মজীবনের ব্যস্ততা। আমাদের ব্যস্ত জীবনে কর্ম স্থানটি আরামদায়ক করতে প্রয়োজন একটু শীতল ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। এ ছাড়াও বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠান, পণ্য তৈরী ও পণ্য তৈরীর প্রক্রিয়াতে প্রয়োজন শীতল পরিবেশ।
আর এ সব প্রয়োজনে এয়ারকন্ডিশনার বা এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম এর ক্ষমতা কতটুকু হবে, কি ধরনের এয়ারকন্ডিশনিং যন্ত্র ব্যবহার হবে, যন্ত্রগুলো কিভাবে স্থাপন হবে, এর আনুসাঙ্গিক নির্মাণ কাজ কিভাবে হবে, যন্ত্রগুলো কিভাবে পরিচালিত হবে, কিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হবে এসব বিষয়ে কিছুটা জানা শোনা থাকটা ভালো।
এয়ার-টেক ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালট্যান্টস্ ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, এসির সঠিক ব্যবহার আমাদের সবারই কম বেশি জেনে রাখা উচিত। তাহলে ঘন ঘন সমস্যায় পড়তে হবে না।
তিনি বলেন, কোনো একটি স্থানের জন্য এয়ারকন্ডিশনার বা এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করার পূর্বশর্ত হলো সিস্টেম ডিজাইন। এ কাজটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করতে হয়।
যে জায়গাটি এয়ারকন্ডিশন করা হবে তার কুলিং লোড এস্টিমেট করা হয়। কুলিং লোড এস্টিমেট হল যে জায়গাটি এয়ারকন্ডিশন করা হবে সেখানকার মোট তাপ প্রবাহের পরিমাপ। তাপ প্রবাহের উৎস্য মূলত দুইটি, একটি হল আউটডোর লোড অর্থাৎ যে তাপ প্রবাহ বাইরে থেকে আসে আর অন্যটি হল ইনডোর লোড অর্থাৎ যে তাপ প্রবাহ কোনো স্থানের ভেতর থেকেই আসে। কোনো স্থানের জানালা, দেওয়াল, ছাদ, মেঝে, সিলিং দিয়ে যে তাপের প্রবাহ আসে সেটি হল আউটডোর লোড। আর কোনো স্থানের মানুষ বৈদ্যুতিক বাতি, সরঞ্জাম, মটর থেকে যে তাপের প্রবাহ আসে তা ইনডোর লোড বলে তিনি জানান।
এয়ারকন্ডিশনিং লোড এস্টিমেশনের জন্য আউটডোর ও ইনডোর ডিজাইন কন্ডিশনের প্রয়োজন হয়। ইনডোর ডিজাইন কন্ডিশন হল এমন একটি তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতার অবস্থা যাতে করে অধিকাংশ মানুষ স্বস্তি অনুভব করে।
ইনডোর লোডের ক্ষেত্রে কোনো স্থানের মানুষের কর্মতৎপরতা, বৈদ্যুতিক বাতি ও সরঞ্জামের ওয়াটেজ বিবেচনা করে লোড এস্টিমেশন করা হয়। এ ছাড়াও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানে ফ্রেশ এয়ার বা বাইরের বাতাস সরবরাহের প্রয়োজন হয়। এয়ারকন্ডিশনিং লোড এস্টিমেশনে এর প্রভাবও বিবেচনা করা হয়।
এয়ারকন্ডিশনার বা এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেম এবং আনুসাঙ্গিক নির্মাণ কাজগুলো ডিজাইন ও নকশা অনুযায়ী হচ্ছে কি না তা সুপারভিশন এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়।
এয়ারকন্ডিশনার বা এয়ারকন্ডিশনিং ব্যবস্থার ডিজাইন থেকে শুরু করে এটার কার্যকরভাবে চালু হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে প্রয়োজন ডকুমেন্টেশন। কেননা কোনো এয়ারকন্ডিশনার বা এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেম এর জাতীয় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য এই ডকুমেন্টেশন দরকার।
এয়ারকন্ডিশনার বা এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে
উইন্ডো এয়ারকন্ডিশনার : এটি সাধারণত আবাসিক ভবনে ব্যবহার করা হয় এবং তেমন কোনো আনুসাঙ্গিক নির্মাণ কাজের প্রয়োজন হয় না।
স্পিট এয়ারকন্ডিশনার : এটি আবাসিক ভবন ও ছোট বাণিজ্যিক ভবনে ব্যবহার করা হয়। এটার দুটি অংশ থাকে একটি হল আউটডোর ইউনিট, যা বাইরে স্থাপন করতে হয়। অন্যটি হল ইনডোর ইউনিট, যা যে স্থানটি এয়ারকন্ডিশনিং করা হবে সেই স্থানে স্থাপন করা হয়। এধরনের এয়ারকন্ডিশনার স্থাপনে ও তেমন কোনো আনুসাঙ্গিক নির্মাণ কাজের প্রয়োজন হয় না।
প্যাকেজ এয়ারকন্ডিশনার : এটি সাধারণত বাণিজ্যিক ভবনে ব্যবহৃত হয় এবং এর সঙ্গে আনুসাঙ্গিক নির্মাণ কাজের প্রয়োজন হয়।
সেন্ট্রাল এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেম : এটি বড় ধরনের বাণিজ্যিক বা প্রাতিষ্ঠানিক ভবনে ব্যবহার হয় এবং এই সিস্টেটি বিভিন্ন এয়ার কন্ডিশনিং যন্ত্রের সম্মনয়ে কাজ করে।
এই সিস্টেমের প্রধান যন্ত্রগুলো হলো :
ওয়াটার চিলার : এটি সেন্ট্রাল এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেমের প্রধান যন্ত্র এবং যা সিস্টেমের জন্য ঠান্ডা পানি সরবরাহ করে।
কুলিং টাওয়ার : এটি ওয়াটার চিলাররের কুলিং সিস্টেমের জন্য প্রয়োজন হয়।
ফ্যান কয়েল ইউনিট : এটিই মূলত কোনো স্থানের গরম বাতাসকে ওয়াটার চিলার থেকে সরবরাহকৃত ঠান্ডা পানির সহায়তায় শীতল করে এবং যে স্থানটি এয়ার কন্ডিশনিং করতে হবে তা ওই স্থানে সরবরাহ করে।
পাম্প : এটি ঠান্ডা পানিকে ওয়াটার চিলার থেকে এয়ার হ্যান্ডলিং অথবা ফ্যান কয়েল ইউনিটে এবং পুনরায় ওয়াটার চিলারে সার্র্কুলেশনের কাজ করে।
এয়ারকন্ডিশনার বা এয়ারকন্ডিশন সিস্টেম স্থাপনের খরচ : আবাসিক ভবনের এয়ারকন্ডিশনার স্থাপনের খরচ অপেক্ষাকৃত কম এবং আনুমানিক প্রতি বর্গফুটে ৩৫০ টাকা খরচ হয়, ছোট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে প্রতি বর্গফুটে ৪৫০ টাকা এবং বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে প্রতি বর্গফুটে ৯৭৫ টাকা খরচ হয়। পণ্য তৈরী বা পণ্য তৈরীর প্রক্রিয়ার উপযোগী এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেমের খরচ পণ্য বা প্রক্রিয়ার চাহিদার উপর নির্ভর করে।
প্রাপ্তিস্থান : বাজারে বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এয়ারকন্ডিশনার পাওয়া যায়। এর মধ্যে জাপানী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডায়কিন, মিটসুবিসি, তশিবা, আমেরিকান প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ট্রেন, ক্যারিয়ার, ইয়র্ক, মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একসন এবং চায়নিজ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গ্রী, মিডিয়া, চিগো উলেখযোগ্য। দেশীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসিও পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মার্কেট, গুলশান, ধানমন্ডি, উত্তরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের শো-রুমে এয়ারকন্ডিশনার পাওয়া যায়।