অস্থিরতা নয়, পোশাকশিল্পে সমঝোতাই কাম্য
মান্নান মোহাম্মাদ, ঢাকা: কয়েক মাসের বকেয়া বেতন এবং ঈদের বোনাসের দাবিতে এবার আন্দোলন করতে হলো তোবা গ্রুপের পোশাকশ্রমিকদের। এবার গ্রুপের মালিকানাধীন কয়েকটি পোশাক কারখানার প্রায় ১৫০০ শ্রমিক ঈদুল ফিতরের আগের দিন থেকে অনশনে বসেন। অন্যান্য পোশাকশ্রমিকরা যখন বেতন-ভাতা নিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করছেন, তখন এই দেড় হাজার শ্রমিক তাদের ন্যায্য পাওনার দাবিতে পুলিশি পাহারায় অনাহারে কাটিয়েছেন। এটা অমানবিক হলেও সান্ত্বনার কথা এই যে, তারা শেষ পর্যন্ত দুই মাসের বেতন পেয়েছেন এবং এক মাসের বেতনসহ অন্য বকেয়া কয়েক দিনের মধ্যে পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বকেয়া বেতন, বোনাস বা বিভিন্ন দাবিতে পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলন এ দেশে নতুন নয়।
বলতে গেলে মাঝেমধ্যেই এমন খবর গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়। কখনো কখনো আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়, এতে দেশজুড়ে অরাজক পরিস্থিতিরও সৃষ্টি করে। এ অবস্থা নিরসনে তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয় বটে, কিন্তু দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটিতে দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায় না। এ অস্থিতিশীলতার পেছনে শ্রমিকদের প্রতি অন্যায্য, অনিরাপদ কাজের পরিবেশ, চাকরিগত নিরাপত্তাহীনতা, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি না দেওয়াসহ রয়েছে অনেক কারণ। কয়েক দশক পেরিয়ে এসেও শ্রমিকদের প্রতি এ ধরনের অনিয়ম পোশাকশিল্পের জন্য শুভকর নয়। মালিক ও শ্রমিক মিলে যে শিল্প, সেখানে শ্রমিকদের বঞ্চিত করে শিল্পের উন্নতি হয় না। মালিকদের এই সত্যটা উপলব্ধি করতে হবে। আবার কোনো শ্রমিক সংগঠন বা শ্রমিকদের কাছ থেকে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এ খাতটি নিয়ে অবিবেচনাসূলভ বা হঠকারী কর্মকাণ্ডও মেনে নেওয়া যায় না। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে এ খাত টিকে আছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে। সীমাবদ্ধতা আছে মালিকদেরও। এ খাতের কাঁচামাল দেশে উৎপাদিত হয় না। শুধু সস্তা শ্রমের কারণে ক্রেতারা এ দেশের প্রতি আকৃষ্ট হয়। মুখে যত উচ্চবাচ্য করুক না কেন এই ক্রেতারা একটু বেশি দামে পণ্য নিতে চান না। সব দায় শেষ পর্যন্ত এসে পড়ে মালিকদের কাঁধে। ইচ্ছা থাকলেও অনেক মালিকের পক্ষে বেশি কিছু করারও থাকে না। এ শিল্পে জড়িয়ে আছে ৪৫ লাখ শ্রমিকের ভাগ্য। যার ৯০ ভাগই নারী। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ শিল্পে জড়িত অসংখ্য মানুষের জীবন-জীবিকা। পোশাকশিল্পের অস্থিরতা এতগুলো মানুষের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলবে। দীর্ঘ মেয়াদে এ অবস্থা চলতে থাকলে বিপর্যয় নেমে আসবে অর্থনীতিতে। আন্দোলন করে সারা দেশের কারখানা বন্ধ করে দিয়ে, অরাজকতা চালিয়ে কিছু অর্জন করা যায় না। আবার শ্রমিকদের বঞ্চিত করেও একটি শিল্প বেশি দূর এগোতে পারে না। ন্যায্যতা এবং দায়িত্বশীলতা থাকতে হবে দুই পক্ষেরই।