আমার জীবন গেলেও আমি শান্তি পেতাম:প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১০ বছর আগে এই ২১ আগস্ট যে হামলা হয়েছিল এমন বর্বর হামলা কখনো দেখিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন একের পর এক বোমা পড়তে লাগল। এখনো অনেক নেতা-কর্মীর গায়ে গ্রেনেডের স্পিøন্টার লেগে আছে। দিনের পর দিন তারা এই কষ্ট নিয়ে বেড়াচ্ছে। এতোগুলো মানুষের জীবন রক্ষা পেয়ে আমার জীবন গেলেও আমি শান্তি পেতাম।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সেই দিনের কথা ভুলতে পারব না। চোখের পলকেই সব উলট-পালট হয়ে গেলো। আল্লাহর ইচ্ছায়ই আমি বেচে গেছি। হয়তবা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই আল্লাহর রহমত ছিল।
তিনি বলেন, এরপর তখনকার বিএনপি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় নি। বরং হামলার অনেক আলামত মুছে ফেলা হল। তখন আরো অভিযোগ করা হয়েছে আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে নিজেই হামলা করেছি। আহতদের নিয়ে সংসদে আলোচনাই করতে দেয় নি বিএনপি। এই ষড়যন্ত্রের জন্য যে বিএনপি-জামায়াত জড়িত তা নিশ্চিত। যার বহু তথ্য আমাদের কাছে আছে।
তিনি বলেন, একাত্তরের পরাজিত দোসররাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। হত্যা করার পর বাংলাদেশের নামও পরিবর্তন করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের পদদলিত করে রাখাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। বাংলাদেশকে আফগানিস্তান করতে চেয়েছিল বিএনপি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের আমলেই দেশের মানুষ শান্তিতে ছিল। আর বিএনপি দেশে গুম-খুন, হত্যা চালিয়েছে। মানুষ মেরে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমাদের বহু নেতার জনসভায় হামলা করেছে। সারা দেশে একের পর এক সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
তিনি বলেন, তৎকালীন সরকারের মদদ না থাকলে জঙ্গিরা ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা করতে পারতো না। এবারের নির্বাচনের আগেও মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। এটাই তাদের কাজ। তারা আন্দোলনের নামে মানুষকে হত্যা করে দেশে এক অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। একটা খুনি পরিবার এদেশের মানুষকে হত্যা করে লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করতে চেয়েছিল।
তাই যারা স্বার্থ ছাড়া কিছুই বুঝে না এ দেশের মানুষকে তাদের বয়কট করতে হবে। এই খুনি পরিবার থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হবে।
এর আগে বিকেল সোয়া ৫টায় শেখ হাসিনা সেখানে নির্মিত অস্থায়ী বেদীতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সবশেষে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের নেতারা নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া পাঠ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি বিরোধী’ সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার বক্তব্য শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক প্রাণঘাতী গ্রেনেড। এরপর শেখ হাসিনার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণও করা হয়।
ভয়াবহ ওই হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ অনেক নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হন আরও কয়েকশ মানুষ। আইভী পরে হাসপাতালে মারা যান।