৫২ কিলোমিটার রেলপথ রি-মডেলিং হয়েছে মাত্র ৫ কিলোমিটার
রোকন উদ্দিনঃ চাঁদপুর-লাকসাম ৫২ কিলোমিটার রেলপথ গত আড়াই বছরে রি-মডেলিং হয়েছে মাত্র ৫ কিলোমিটার। এক বছরের কাজ কত বছরে শেষ হয় তা এখন দেখার বিষয়। আর যেটুকু কাজ হয়েছে তাতেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে উন্নয়ন কাজ।
চাঁদপুর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর-লাকসাম ৫২ কিলোমিটার রেললাইন নতুনভাবে স্থাপন করার কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের ২৭ মার্চ। এক বছরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা হয়নি। সিডিউলের নির্ধারিত সময় থেকে আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৫ কিলোমিটার। চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ও বলাখালের মধ্যবর্তী ৫ কিলোমিটার রাস্তার কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিংদি রেল নির্মাণ ইঞ্জিনিয়ারিং লিঃ তিন তিন বার অতিরিক্ত সময় নিয়েও কাজ শেষ করতে পারেনি। যদিও প্রতিষ্ঠানটিকে ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে বলে রেল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে যেটুকু পথের কাজ হয়েছে সেখানেও হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। এসব লাইনে শ্লিপার দেয়া হয়েছে নিন্মমানের। আর যে আকারের পাথর দেয়ার কথা সেখানেও কোনো নিয়ম নীতির বালাই নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক’জন পাথর শ্রমিক বলেন, তাদের যেভাবে বলা হচ্ছে সেভাবেই কাজ চলছে, পাথর কি ছোট গেলো না বড় গেলো তা তাদের দেখার বিষয় না। আর রেল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
চাঁদপুর রেলস্টেশনের অফিস সহকারী মো. সোলাইমান বলেন, পাথরের কোয়ালিটি তেমন ভালো মনে হচ্ছে না। আরো একটু ভালো হতে পারতো। কারণ যেসব পাথর দেয়া হচ্ছে এসব পাথর ওভার (অনেক বড়) সাইজ। রেললাইনে সাধারণত ওসব ওভার সাইজ পাথর ব্যবহার করা হয় না।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহান শরীফ বলেন, পাথর লাইনে যাওয়ার আগে স্ক্রেনিং ও ওয়াস করে দেয়ার কথা থাকলেও সেটি করছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পাথর সাইজ দেড় থেকে আড়াই ইঞ্চি হওয়ার কথা থাকলেও ৭০ ভাগ-ই হচ্ছে আনসাইজ পাথর। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ও মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কালিংদি রেল নির্মাণ ইঞ্জিনিয়ারিং লিঃ, ইন্ডিয়ার ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। ২০১৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে।
নির্ধারিত সাইজের ছোট ও বড় পাথরের বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু পাথর ছোট ও বড় আসছে, তবে বড়গুলো ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে, আর ছোটগুলো স্ক্রেনিং করে দেয়া হচ্ছে। অথচ সরজমিনে যে ৫ কিলোমিটার এলাকায় নতুন কাজ হয়েছে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পাথরের ৮০ ভাগ-ই রাবিশ আর বড় পাথর। নির্ধারিত পাথর ২০ ভাগও নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা কামরুজ্জামান টুটুল, বাসিত মিয়াসহ অনেকেই বললেন, নতুন যে পাথর দিয়েছে এমন পাথর রেললাইনে দিতে কখনো দেখিনি। তাছাড়া রাবিশ পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। মনে হয় যেন কেউ দেখার নেই।
বর্তমানে চাঁদপুর-লাকসাম পথে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই চলছে ট্রেন। প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তাদের ইচ্ছার উপর চলছে চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশনগুলোর রি-মডেলিং কাজ। ২শ’ বছর পর এ উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি চাঁদপুরবাসীসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের।