বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, December 22, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » অশ্লীলতা, যৌনকর্ম ও নেশার রাজ্যে পরিণত হয়েছে টিএসসি

অশ্লীলতা, যৌনকর্ম ও নেশার রাজ্যে পরিণত হয়েছে টিএসসি 

রোকন উদ্দিনঃ  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র কেন্দ্রে (টিএসসি) এখন অবৈধ সংগঠনের ছড়াছড়ির কারণে পুরো এলাকা এখন অশ্লীলতা, যৌনকর্ম ও নেশার রাজ্যে পরিণত হয়েছে।ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় ইতিমধ্যেই বাহারি নামের নানা সংগঠনের অবৈধ দখলে চলে গেছে পুরো ভবনটি। অনুমতি ছাড়াই টিএসসির বিভিন্ন রুম দখল করে সরকার সমর্থক বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা তাদের অবৈধ কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।অনুসন্ধানে জানা যায়, পুরো টিএসসিতে মাত্র ৯টি সংগঠনের অনুমোদন থাকলেও বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক সংগঠন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের নাম নিয়ে পেশী শক্তি খাটিয়ে আসন গেড়ে বসেছে এসব সংগঠন। এমনকি ওসব কক্ষকে কেন্দ্র করেই রাতে মাদক সেবনেরও আড্ডা বাড়ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।tsc

ছবি (মোঃ জাফর ইকবাল)

দাপ্তরিক সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, অনুমতি ছাড়াই টিএসসিতে যেসব সংগঠন কার্যক্রম পরিচালনা করছে এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-  স্লোগান ’৭১, প্রভাতফেরী, দৃষ্টিপাত নাট্যদল, বৈকুণ্ঠ আবৃত্তি একাডেমি, স্পন্দন একাত্তর, স্রোত আবৃত্তি একাডেমী, বৈঠকী সঙ্গীত আসর, নন্দন কানন, দৃষ্টি, মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চাকেন্দ্র, উদ্ভাসন, সংবৃতা আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশকেন্দ্র, কণ্ঠসুর কর্নার, স্বরচিত ইত্যাদি।এছাড়া প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে আরো কিছু সংগঠন বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে যেসব সংগঠন টিএসসিতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেগুলো হচ্ছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, জয়ধ্বনি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দাবা ক্লাব, রোভার স্কাউট, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফি সোসাইটি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি টুরিস্ট সোসাইটি, বাঁধন ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফিল্ম সোসাইটি।খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, প্রতিনিয়তই টিএসসির অবৈধ সংগঠনের ওই রুমগুলোতে মাদক সেবন চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হল রাত সাড়ে ৯টায় বন্ধ হয়ে গেলেও রাতভর মেয়েরা অবস্থান করেন ওই কক্ষগুলোতে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী না বহিরাগত তা জানে না কর্তৃপক্ষ।জানা যায়, ২০টির মতো সংগঠন ভিসির কাছে আবেদন করেছে। কিন্তু আবেদন অনুমোদনের আগেই তারা রুম দখল করে নিয়েছে।সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে ২৫টি সংগঠন পরিচালনা করছে সরকারদলীয় লোকজন। অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন রুম দখল করে চালাচ্ছেন তাদের অবৈধ বাণিজ্য। বেশির ভাগেরই ছাত্রত্ব নেই। বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের দিয়ে চলছে এসব সংগঠনের কার্যক্রম।জানা যায়, অনেক সংগঠনের জন্ম হয় সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনের রাতে। কারো অনুমতির তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন সংগঠনের অফিসের তালা ভেঙে রুম দখল করা হয়েছে।যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আর মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙিয়ে টিকে আছে অনেক সংগঠন। স্লোগান ’৭১ নামে একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের। এছাড়া প্রভাতফেরি, স্পন্দন ৭১ সহ বিভিন্ন সংগঠনের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। কক্ষ দখল করে বিভিন্ন সংগঠনের কাছে ভাড়া দিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।এদিকে পার্শ্ববর্তী দোকান ডাসের মালিক নিজেকে যুবলীগ পরিচয় দিয়ে টিএসসির একটি কক্ষ দখল করে সেখানেই দোকানের সামগ্রিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। বিখ্যাত ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের নাম করে প্রতারণায় নেমেছে বেশ কিছু সংগঠন।এসবের মধ্যে রয়েছে উদ্ভাসন, দৃষ্টিপাত নাট্যদল, কণ্ঠসুর কর্নার, বৈকুণ্ঠ আবৃত্তি একাডেমী, স্্েরাত অবৃত্তি একাডেমী, বৈঠকী সঙ্গীত আসর, নন্দন কানন, দৃষ্টি, সংবৃতা আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশকেন্দ্র, স্বরচিত ।এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাদকের নিরাপদ জোন হিসেবে গড়ে উঠেছে টিএসসি। রাজনৈতিক প্রভাবে গজিয়ে ওঠা এসব সংগঠনের অফিসেই চলে মাদকের কার্যক্রম। টয়লেটে ময়লার ঝুড়ির মধ্যে প্রায় প্রতিদিন সকালেই পাওয়া যায় অসংখ্য ফেনসিডিলের বোতল। টয়লেটের পাইপ আটকানো থাকে ফেনসিডিলের বোতলে। রাতে অনুষ্ঠানের নামে টিএসসিতে চলে মাদকের আসর। পুলিশি ভয় নেই বলে টিএসসি থেকেই এখন নিয়ন্ত্রিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদক সরবরাহের কাজ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রবেশের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা থাকে এসব ভুতুড়ে রুমে। দরজা জানালা আটকানো থাকে সবসময়।এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিনিয়তই ছাত্ররা বিভিন্ন রুমে মদ ও ফেনসিডিল খায়। মাঝে মধ্যে অনেক রাতে টিএসসি সুইমিংপুলের পাশে বসেও মদ পান করেন তারা। প্রশিক্ষণের নামে ছাত্রীদের যৌন হয়রানিরও অভিযোগ আছে অনেকের নামে। টিএসসির বিভিন্ন রুমের দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত একাধিক কর্মচারী বলেন, টিএসসির বিভিন্ন রুমে অশ্লীল কর্মকান্ড হয়। আমরা তাদের কিছু বলতে পারি না।এছাড়াও টিএসসির পশ্চিম অংশে অবস্থিত একমাত্র লেকের পুরো জায়গাই এখন ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ। দীর্ঘদিন যাবৎ পরিষ্কার না করায় এ অংশটি এখন অনেকটাই পরিত্যক্ত।বহিরাগত জাতীয় ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এখানে। সন্ধ্যার পর বহিরাগত প্রেমিক প্রেমিকাদের অবৈধ মেলামেশাও চলে এ স্থানটিতে। এটাকে কেন্দ্র করেই মাদক সিন্ডিকেটের বড় একটি অংশ আড্ডা জমায়।স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র নাজমুল খান বলেন, বহিরাগতদের আড্ডায় দিন দিন বাজারকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে টিএসসি। বিশেষত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারে ব্যাপক জনাকীর্ণ থাকায় পুরো এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।তিনি জানান, বর্তমানে টিএসসিতে শুধু বহিরাগতদের আড্ডাই নয়, অশ্লীল কার্যক্রমও সম্পন্ন হয়ে থাকে এখানে। তবে এসব ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি থাকলে সমস্যাগুলো থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব বলে সে জানায়।এ বিষয়ে টিএসসির পরিচালক আলমগীর হোসেন জানান, অনুমোদন না পাওয়া সংগঠনগুলো নিয়ে বারবার আলোচনা করা হচ্ছে। শিগগিরই এ বিষয়ে ফল পাওয়া যাবে।তিনি বলেন, টিএসসির সামনের ব্যানার পোস্টার নিয়ে অনেক সমস্যা হচ্ছে। রাজনৈতিক কারণে এগুলো বেশি হয়ে থাকে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হবে।তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন রুমে কার্যক্রম নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। মাঝে মাঝেই ফেনসিডিলের বোতল পাওয়া যায়। ফেনসিডিলের পরিত্যক্ত বোতলগুলো টয়লেটে ফেলায় পাইপ বন্ধ হয়ে যায়। টয়লেটে ঝুড়ি রাখা হয়েছে, এরপরও এ অবস্থার উন্নতি হয়নি। তবে সামগ্রিকভাবে পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

 

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone