গাজায় চলছে আনন্দ উদযাপন
ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কঃ দুই হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি এবং অর্ধশতাধিক ইসরায়েলির মৃত্যুর পর মঙ্গলবার দুই পক্ষ দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে এরপর থেকে গাজায় চলছে আনন্দ উদযাপন। ৫০ দিনের এ যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের জয় হয়েছে বলে দাবি করে ইরান গাজাবাসীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছে। ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার এক বিবৃতিতে জানায়, বীর ফিলিস্তিনিরা আবারও প্রতিরোধ সংগ্রামের মাধ্যমে বিজয় অর্জনের বীরত্বগাথা সৃষ্টি করেছে এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েলকে নতজানু হতে বাধ্য করেছে। এদিকে মিশরের মধ্যস্থতায় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজার আকাশ এখন শান্ত। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজায় কোনো আক্রমণ চালানো হয়নি।
গাজা থেকেও ইসরায়েলের উদ্দেশে কোনো রকেট ছোঁড়া হয়নি। জাতিসংঘের হিসেবে ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সংকটে ফিলিস্তিনের নিহত ২,১৪৩ জনের মধ্যে ৭০ ভাগই বেসামরিক লোক। আর ইসরায়েলের নিহত হওয়া ৭০ জনের মধ্যে ৬৪ জনই সামরিক বাহিনীর সদস্য। বিশ্বাস হচ্ছে না আমি বেঁচে আছি! কথাটি বলেন গাজার বাসিন্দা ৩২ বছরের মাহা খালেদ। আন্দন্দ উদযাপন করার এক ফাঁকে তিনি বলেন, ‘আমি কখনো চিন্তাও করিনি যে শেষ পর্যন্ত শান্তি আসবে।’ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পর গাজার রাস্তায় নেমে আসেন গাজাবাসীরা। রাস্তায় গাড়ির ভিড় জমে যায়। গাড়ি থেকে উচ্চস্বরে হর্ন বাজানো হয়। নারী, শিশু সহ অনেকেই ‘ভি’ চিহ্ন দেখাতে থাকেন। কী আছে চুক্তিতে? ফিলিস্তিনের প্রধান আলোচক আজম আল-আহমেদ জানিয়েছেন, ‘মিশরের উদ্যোগের মধ্যে গাজার উপর থেকে অবরোধ আংশিকভাবে খুলে দেয়ার বিষয়টি রয়েছে। এর ফলে পণ্য-সামগ্রী সহ খাদ্য সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে পারবে। এছাড়া ওষুধ এবং পানি, বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা মেরামত করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও গাজায় ঢুকতে পারবে। তবে কবে থেকে অবরোধ খুলে দেয়া হবে সেটা এখনো জানা যায়নি। এছাড়া মাছ ধরার জন্য গাজার জেলেদের ‘এখনই’ নৌকা নিয়ে সাগরের ছয় মাইল পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কয়েকদিন পর সীমাটা বাড়িয়ে ১২ মাইল করা হতে পারে। চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার একমাসের মধ্যে আলোচনার জন্য আবারও দুই পক্ষের কায়রোয় মিলিত হবার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইসরায়েলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও একই রকম তথ্য দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বিশ্বের সমর্থন, মুসলিমদের অভিনন্দন ফিলিস্তিনিরা এই চুক্তিকে ‘স্থায়ী’ যুদ্ধবিরতি বলছে। আর ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা একে ‘শর্তহীন ও সময়ের ক্ষেত্রে বাধাহীন’ চুক্তি বলে আখ্যায়িত করেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এই চুক্তির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়ে দুই পক্ষকেই ‘চুক্তির শর্তগুলো পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার’ আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন চুক্তির প্রতি সমর্থন জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন যে, ‘এ চুক্তি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি চূড়ান্ত শান্তি চুক্তির মঞ্চ তৈরি করবে। অপরদিকে গাজা যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বিজয়ে ইরান সরকার আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছে। সেই সাথে বেশির ভাগ মুসলিম দেশই এরকম স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে স্বস্তি প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে জনগণ। সূত্র : রয়টার্স, ডিডব্লিউ