পারস্পরিক সহযোগিতা ও বিশ্বাসের মানসিকতা থাকলে কোন পদই খারাপ না
রোকন উদ্দিনঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি পদই যেন কাল হয়ে দাড়িয়েছে। পদটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার গুরুত্বপূর্ন হলেও ভিসি হওয়ার মোহে কাটে এ পদের কর্তাদের। আর এই পদটির কারণে বারবার বাধাগ্রস্থ হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম।
বর্তমানেও ক্যাম্পাস অচলের পেছনে এই পদটির ভূমিকা কম ছিল না। ক্ষমতার পাশাপাশি নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে নানা সময়ে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে এ পদে অধিষ্ঠিতরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি পদের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন ইবির সিনিয়র শিক্ষকরা।
জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিউট অনুযায়ী প্রো-ভিসি পদ থাকলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে শূণ্য ছিল এ পদটি। ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিনকে প্রো-ভিসি হিসেবে প্রথম নিয়োগ দেয়া হয়। প্রো-ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলেও তিনি নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কর্তাব্যক্তি মনে করতেন।
বিগত সময়ের পত্র-পত্রিকা ও অধিকাংশ শিক্ষক সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে চরম দূর্নীতি ও আত্মীয়করণ করে তৎকালীন ভিসি ও প্রো-ভিসি। সে সময় তারা ৮টি বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে ৬৩ জনকে নিয়োগ দিয়ে পত্র-পত্রিকার শিরনাম হয়।
তবে দূর্নীতির এ দৌড়ে ভিসিকে টপকে প্রো-ভিসিই এগিয়ে ছিলেন বলে জানা গেছে।
কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন- বহিরাগতদের দিয়ে শিক্ষকদের উপর দুই দফায় হামলা, ভিসির বাসভবনে বোমা হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, বিভিন্ন অফিসে ভাংচুরসহ নানা অপকর্মের পরোক্ষ ইন্দন জুগিয়েছিলেন তৎকালীন প্রো-ভিসি ড. কামাল উদ্দিন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, শিক্ষকদের উপর দফায় দফায় হামলা প্রতিবাদ ও দূর্ণীতিবাঁজ ভিসি প্রো-ভিসির পদত্যাগের দাবিতে ২০১২ শেষ দিকে থেকে ২০১৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দীর্ঘ ৭ মাস অচল থাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়। সেমসয় প্রো-ভিসি পদ থেকে ভিসি পদে আসীন হওয়ার মোহে নোংরা রাজনীতিতে মেতে ওঠে তৎকালীন প্রো-ভিসি। আর তখন থেকে কাল হয় এই পদটি।
সাম্প্রতি পুলিশ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষের জের ধরে ১৫দিনের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ‘শিবিরের মিছিলের প্রতিবাদে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে। মিছিল থেকে নেতাকর্মীরা ভিসি, প্রো-ভিসির গাড়ীতে হামলা চালায়। এসময় পুলিশ বাধা দিলে ছাত্রলীগ পুলিশের উপর চড়াও হয়। এতে পুলিশ-ছাত্রলীগের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে।
কতিপয় শিক্ষক-কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন- ‘ছাত্রলীগ-পুলিশ সংঘর্ষে ফয়দা লুটতে বর্তমান প্রো-ভিসি ছাত্রলীগের একাংশ ও বহিরাগতদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করার পায়তারা চালাচ্ছেন। এছাড়া প্রো-ভিসি নানা ভাবে ভিসিকে ফান্দে ফেলে ভিসি পদ দখলের চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
আর এই আন্দোলনকারী ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক সজিবুল ইসলাম সজিব বহিরাগতদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র যোগান দিচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যাম, ফেসবুকসহ বিভিন্ন জনের মোবাইলে তার অস্ত্রবাজীর ছবি পাওয়া যাচ্ছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় ক্যাম্পাস বন্ধের পর আগামী ৯ সেপ্টেম্বর খোলার কথা থাকলেও প্রশাসনিক কর্তাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কারণে তাতেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এসব কারণেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি পদটি কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. রুহুল কে এম সালেহ বলেন-‘ক্যাম্পাস পরিচালনায় প্রো-ভিসি পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সেদিক বিবেচনায় সরকার দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পদ সৃষ্টি করেছেন। পারস্পরিক সহযোগিতা ও বিশ্বাসের মানসিকতা থাকলে কোন পদই খারাপ না।’
জিয়া পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. শহীদুল ইসলাম নূূরী বলেন- ‘প্রো-ভিসি পদের প্রয়োজনীয়তা আছে। তবে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতা দখলে যে চর্চা শুরু হয়েছে তাতে এই পদটি অত্যন্ত গুরুত্ববাহী। এই পদের কর্তার জন্য প্রশাসনিক কর্মকান্ডে ভিসিকে সহায়তা করার মানসিকতা থাকা জরুরী।’
সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এম আলাউদ্দিন বলেন- ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রো-ভিসি আমি পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় প্রো-ভিসি পদের গুরুত্ব অনেক। কিন্তু আমি দেখেছি ভিসিকে বেকায়দায় ফেলে সেই পদ দখলের নেশায় কিভাবে মত্ত্ব ছিল আমার সময়ের প্রো-ভিসি।’