বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের দেশব্যাপী বিক্ষোভ বুধবার
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিচারপতিদের অভিশংসন আইনের প্রতিবাদে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১০ সেপ্টেম্বর বুধবার সারাদেশে জেলা-উপজেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল। একই দাবিতে ১১ সেপ্টেম্বর একই কর্মসূচি পালিত হবে ঢাকা মহানগরে।নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।তিনি বলেন, ‘বর্তমান অবৈধ সরকার জনগণকে শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তা প্রদানের বদলে দেশে অপশাসন, কুশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, অপহরণ, গুম আর হত্যালীলায় মেতে উঠেছে। মানুষ এখন অতিষ্ঠ।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘৫ জানুয়ারির বিতর্কিত ও প্রহসনের নির্বাচনের পর জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একের পর এক গণবিরোধী আইন ও নীতি প্রণয়ন করছে সরকার। এর মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নের মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকেও হরণ করার আয়োজন প্রায় সম্পন্ন হতে চলেছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘এ সব করার উদ্দেশই হচ্ছে জোর করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারীদের কুশাসন ও অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে কেউ যেন কথা বলার সাহস কিংবা সুযোগ না পায়।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অতীতে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। বর্তমানেও গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠানকে গলাটিপে মেরে ফেলা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ—শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ পুরোপুরি আলাদা আলাদা ক্ষেত্র। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর যদি শাসন বিভাগের কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়, তাহলে একটি রাষ্ট্র অস্তিত্বের হুমকিতে পড়বে। ক্ষমতাসীনরা দেশের মঙ্গল চায় না বলেই গণবিরোধী সকল কালাকানুন তৈরি করে নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনির্বাচিত আগন্তকদের দ্বারা গঠিত বর্তমান জাতীয় সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না বলেই এই সংসদের হাতে বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা দেওয়া হলে বিচার বিভাগের ক্ষমতা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন অবৈধ সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। ক্ষমতা দখলকারী সরকার আজীবন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে রাখার অভিলাষে এবং ক্ষমতা হারানোর ভয় থেকেই বিচারালয়ে নিজের পছন্দমতো লোক বসিয়ে বিচারকার্য নিজেদের অনুকূলে ও বিরোধী দলসহ জনগণের প্রতিকূলে নিতেই বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা বর্তমান অবৈধ জাতীয় সংসদের ওপর অর্পণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, ‘বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যস্ত হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কিছুই থাকবে না। এটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এবং জনগণ সরকারের এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ২০ দলীয় ঐক্যজোটের নেতাকর্মীরা জোটের নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যস্ত করার কুটিল চক্রান্ত রুখে দেবে ইনশাল্লাহ।’
নজরুল ইসলাম খান ঘোষণা করেন, গণবিরোধী এ উদ্যোগের প্রতিবাদে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর বুধবার সারাদেশে জেলা ও মহানগরে ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল হবে।
একই ইস্যুতে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার শুধু ঢাকা মহানগরীতে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এ সময় ২০ দলের মহাসচিবদের মধ্যে জামায়াতের ডা. রিদওয়ান উল্লাহ শাহেদী, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিশের অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের, জাগপার লুৎফর রহমান, কল্যাণ পার্টির এমএম আমিনুল ইসলাম, এনডিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়াসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।