পর্তুগালের ফাতেমা নগরীর আদলে শেরপুরে ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান
শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বারমারী সাধু লিওর খ্রিষ্টান ধর্মপল্লিতে স্থাপন করা হয়েছে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান। দেশি-বিদেশিদের অংশগ্রহণে স্থানটি এখন তীর্থযাত্রীদের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা সবুজ শ্যামলীময় পাহাড়ঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের অপূর্ব লীলাভূমি বারমারী খ্রিষ্ট ধর্মপল্লিতে এ তীর্থস্থানের অবস্থান।
ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের ১৫টি ধর্মপল্লির ও সারা দেশের হাজার হাজার খ্রিষ্ট ভক্তের প্রাণের দাবি ছিল মা মেরিকে ভক্তি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য উপযুক্ত স্থান লাভের। খ্রিষ্টভক্তদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালে পর্তুগালের ফাতেমা নগরীর আদলে ও অনুকরণে এ তীর্থস্থানটি স্থাপন করা হয়। ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের তৎকালীন বিশপ ফ্রান্সিস এ গমেজ বারমারী সাধু লিওর ধর্মপল্লিতে ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান ঘোষণা করেন। এ তীর্থস্থানের প্রায় ২ কিলোমিটার পাহাড়ি টিলায় ক্রুশের পথ ও পাহাড়ের গুহায় স্থাপন করা হয়েছে মা মেরির মূর্তি। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিনব্যাপী বার্ষিক তীর্থ উৎসব পালিত হয়। এ সময় দেশি-বিদেশি হাজার হাজার খ্রিষ্টভক্ত অংশগ্রহণ করেন।
তীর্থ উৎসবে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে মহা খ্রিষ্টযাগ, গীতি আলেখ্য, আলোর মিছিল, নিশি জাগরণ, নিরাময় অনুষ্ঠান, পাপ স্বীকার, জীবন্ত ক্রুশের পথসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান। খ্রিষ্টভক্তরা নিজেদের পাপমোচনে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর মিছিলে অংশগ্রহণ করে প্রায় ২ কিলোমিটার পাহাড়ি ক্রুশের পথ অতিক্রম শেষে মা মেরির মূর্তির সামনের বিশাল প্যান্ডেলে সমবেত হয়ে ঈশ্বর জননী, খ্রিষ্টভক্তের রানী, স্নেহময়ী মাতা ফাতেমা রানীর কর কমলে ভক্তি শ্রদ্ধা জানান ও তার অকৃপণ সাহায্য প্রার্থনা করে থাকেন এদিন।ধর্মীয় চেতনায় দেশি-বিদেশি হাজার হাজার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর বার্ষিক তীর্থ উৎসব পালিত হওয়ায় বর্তমানে এটি মহাতীর্থ স্থানের রূপ পেতে যাচ্ছে। প্রতিবছর ভিন্ন ভিন্ন মূল সুরের ওপর ভিত্তি করে বার্ষিক তীর্থ উৎসব পালিত হয়ে আসছে।এ ব্যাপারে বারমারী ধর্মপল্লির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ জেংচাম বলেন, ‘এ তীর্থস্থানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পানি সরবরাহের ব্যবস্থা, টয়লেট স্থাপন, প্যান্ডেলের নিচের স্থান ও ক্রুশের পথ পাকাকরণ, তীর্থ যাত্রীদের আবাসন তথা থাকার ব্যবস্থা করা এবং পাহাড়ি ঢলের সময় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা একান্ত জরুরি। আর এসব করতে হলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন।’আদিবাসী সংঘটন ট্রাইভাল ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান লুইস নেংমিনজা বলেন, ‘নালিতাবাড়ীর এ তীর্থস্থানটিতে দিন দিন তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা বেড়েই চলছে।’
সকল আনুষ্ঠানিকতায় সবার সহযোগিতা কামনা করেন নেংমিনজা।