ভারতীয়দের জামাই আদরে মুগ্ধ হাফিজ
ক্রীড়া ডেস্ক : ঘরোয়া পোশাকটাই যা শুধু গায়ে নেই। নইলে হায়দরাবাদে সমগ্র পাক-পরিবারের তাকে ‘কর্তা’ বললে বোধহয় এতটুকু অতিশয়োক্তি হয় না।টিম লাহোর শহর দেখবে। কিন্তু দেখাবেন কে? শোয়েব মালিক, আবার কে?টিম লাহোর রাতে বাইরে ডিনার করবে। বিরিয়ানি খাবে। কিন্তু খাওয়াবেন কে? শোয়েব মালিক, আবার কে?সানিয়া মির্জা টোকিওতে খেলছেন। মিডিয়ার আজই যথাযথ ‘কোট’ লাগবে। কিন্তু দেবেন কে? শোয়েব মালিক, আবার কে?বিড়ম্বনা বটে! হায়দরাবাদ ঘুরতে আসেননি, কাউকে ঘুরিয়ে দেখাতেও আসেননি। হোবার্ট হারিকেনের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতে খেলতে এসেছেন।কিন্তু লাহৌর টিমের ‘বড়দা’-র দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। শনিবার বিকেলে টিম হাফিজকে নিয়ে বেরোতে হচ্ছে। রাতে বাড়িতে ডিনার পার্টি দিতে হচ্ছে। আবার ভারতের জামাই বলে স্ত্রী সানিয়ার সঙ্গে বিয়ের দিনটার কথা এখন কতটা মনে পড়ে, তার উত্তরও দিতে হচ্ছে।
শোয়েব মালিক একটু যেন বিরক্ত। অসন্তুষ্ট। কথা বলছেন কেটে কেটে। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নয়। মোহাম্মদ হাফিজ আবার উত্তেজিত। না, বিরক্ত নন। মিডিয়ার সামনে বরং খোলামেলা। হাফিজ উত্তেজিত ভারতকে দেখে, ভারতীয়দের সমর্থন দেখে।দু’জনেই প্রাক্তন পাকিস্তান অধিনায়ক। দু’জনেই ভারতে এর আগে এসেছেন, খেলেছেন। কিন্তু এ বারের ভারত-দর্শন তাদের কাছে ভিন্ন থেকে গেল।শোয়েব মালিক আবিষ্কার করলেন তার ক্রিকেট, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতে তার টিম কেমন করবে, কেউ তাতে বিন্দুমাত্র আগ্রহী নয়। মিডিয়া অনেক বেশি আগ্রহী তার পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবনের কাহিনি শুনতে।মোহাম্মদ হাফিজ আবিষ্কার করলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রিকেট-শৈত্যর প্রাচীর তৈরি করে দুই দেশের মানুষকেই আদতে অমর্যাদা করা হচ্ছে। ক্রিকেট বিশ্বকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শনিবার দুপুরে শোয়েব মালিকের মুখটা বেশ রাগী-রাগীই দেখাচ্ছিল। হায়দরাবাদ কতটা আলাদা তার কাছে জিজ্ঞেস করায় বলে দিলেন, ‘শুধু হায়দরাবাদ কেন? গোটা ভারতই আমার কাছে প্রিয়। গোটা ভারত থেকেই আমি ভালবাসা পেয়ে থাকি।’ কিন্তু হায়দরাবাদ-কন্যার সঙ্গেই তো আপনার বিয়ে হয়েছে। হায়দরাবাদেই হয়েছে। আলাদা অনুভূতি থাকবে না? ‘থাকবে না কেন? কিন্তু সানিয়ার সঙ্গে বিয়ের পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে। আপনারা যতটা সানিয়াকে ভালবাসেন, আমরাও ভালোবাসি, পাকিস্তানও তা-ই করছে। ও আজ টোকিওয়। ভারতের মতো গোটা পাকিস্তানও ওর সাফল্য চাইছে, ওকে সমর্থন করছে। সানিয়া কোনো টুর্নামেন্টে নামলে আমি যেমন প্রার্থনা করি, আমার পরিবার যেমন প্রার্থনা করে, তেমন গোটা পাকিস্তানও করে। ও যতটা আপনাদের, ততটা আমাদেরও। আর আমি এ বার এসেছি ক্রিকেট খেলতে। টিমকে টুর্নামেন্ট জেতাতে।’ এমনটাই সোজাসুজি বলে দিলেন মালিক। যেন বুঝিয়ে দিলেন ভারত-পাকিস্তানের দুই ক্রীড়াবিদের বিবাহ নিয়ে মিডিয়ার বাড়াবাড়ি রকমের আগ্রহে তার এখন ‘যন্ত্রণা’ হয়।ঠিক যেমন হাফিজের যন্ত্রণা হয় দুই দেশের সমর্থকদের কথা ভাবলে। ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ দেখতে না পাওয়া নিয়ে তাদের আক্ষেপ দেখলে। ‘দু’বছর আগে যখন এসেছিলাম খেলতে, মনে হল এ বার ঠিক হয়ে যাবে। আবার দু’দেশের মধ্যে ক্রিকেট হবে,’ এ দিন দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন সেরে বেরিয়ে ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পথে বলছিলেন হাফিজ।
ঠিকই। ২৬/১১-র পর দু’দেশের ক্রিকেট-রাজপথ খুলেও আবার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হাফিজ যার অর্থ খুঁজে পান না। ‘আমি এখানে খেলে দেখেছি, পাকিস্তান কতটা সমর্থন পায়। আমার কাছে ভারত আর পাকিস্তানের সমর্থনে কোনো ফারাক নেই। ভালো ক্রিকেটকে সম্মান করতে জানে ভারত। সেটা পাকিস্তানিরা খেললেও।দুই দেশের মধ্যে ক্রিকেট বন্ধ করে আসলে দু’দেশের সমর্থকদের অমর্যাদা করা হচ্ছে। গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে বঞ্চিত করা হচ্ছে,’ বলতে বলতে প্রায় ফুঁসছিলেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক। শুনলে মনে হবে দুই সাবেক পাক অধিনায়কের এ বারের ভারত-দর্শন ভিন্ন হলেও কোথাও গিয়ে একটা মিল থেকে গেল। কোথাও গিয়ে দু’টোই যেন কিছুটা বিয়োগান্ত। ভারত-সফর থেকে গোলাপের পাপড়ি থাকল যেমন, তেমনই কাঁটাও থাকল।
সূত্র : আনন্দবাজার