ঈদুল আজহা ও দুর্গোৎসবে নৌ-নিরাপত্তায় সেনা মোতায়েনের দাবি
তুহিন মজুমদার, ঢাকা: আসন্ন ঈদুল আজহা ও শারদীয় দুর্গোৎসবে নৌ-নিরাপত্তায় সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে দুইটি সামাজিক সংগঠন। একই সঙ্গে যাত্রীবাহী লঞ্চ পিনাক-৬ দুর্ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটিকে প্রশ্নবিদ্ধ ও তদন্ত প্রতিবেদনকে পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে সংগঠন দুইটি। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি-এনসিপিএসআরআর এবং বাংলাদেশ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ-সিসিপিআরবি আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ১২ দফা সুপারিশ উত্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সাংবাদিক আশীষ কুমার দে। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ মনজুরুল আহসান খান ও জল পরিবেশ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক।সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি তুসার রেহমান। এ সময় অন্যদের মধ্যে প্রাক্তন সাংসদ অ্যাডভোকেট তাসনিম রানা, পরিবেশসম্মত বাসযোগ্য ঢাকা বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্যসচিব হাজী মো. শহীদ, পিস মহাসচিব ইফমা হুসেইন, সিসিপিআরবি আরিফুর রহমানসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।মনজুরুল আহসান খান বলেন, মায়ের কোল, শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে খরস্রোতা পদ্মা-মেঘনা কোথায়ও মানুষ আজ নিরাপদ নয়। স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো নিশ্চয়তা নেই। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিকে শয্যাকক্ষে হত্যা আর উত্তাল পদ্মায় লঞ্চ ডুবিয়ে শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ দেড় শতাধিক নিরীহ যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুই এর বড় প্রমাণ। পিনাক-৬ ট্রাজেডিকে তিনি মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয় উল্লেখ করে তদন্ত কমিটি পুনর্গঠনপূর্বক ফের তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের কঠোর শাস্তি এবং আসন্ন ঈদ-পূজায় সকল নৌপথে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবি জানান প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, নৌ পরিবহনখাতে যে অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা চলছে তাতে আসন্ন ঈদ-উল-আজহা ও শারদীয় দুর্গোৎসবে লাখ লাখ নৌযাত্রীর নিরাপদ যাতায়াতের জন্য সেনা ও নৌবাহিনী মোতায়েন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ১২ দফা সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে ১-১০ অক্টোবর পর্যন্ত সকল টার্মিনাল ও ফেরিঘাটে সেনাবাহিনী এবং নৌপথে নৌবাহিনী মোতায়েন করে তাদের হাতে নির্বাহী হাকিমের ক্ষমতা প্রদান।ত্রুটিপূর্ণ ও অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই লঞ্চ চলাচল বন্ধে ২৬ সেপ্টেম্বর-১৬ অক্টোবর পর্যন্ত (ঈদ পূর্ব ১০ ও ঈদ পরবর্তী ১০ দিন) ২১ দিন মাওয়া-কাওড়াকান্দি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াসহ সকল নৌপথে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা এবং এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে টার্মিনাল ও ঘাটসংলগ্ন জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, র্যা ব, আনসার ও কোষ্টগার্ডকে সম্পৃক্তকরণ।দূরপাল্লার বাসের মতো লঞ্চেও আগে টিকেট কেটে পরে যাত্রী ওঠানোর নির্দেশনা জারি এবং নির্দেশ বাস্তবায়নে বিআইডব্লিউটিএ-কে সহায়তা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর পুলিশ ও আনসার প্রশাসনকে সম্পৃক্তকরণ।
২৬ সেপ্টেম্বর-১৬ অক্টোবর এই ২১ দিন গুরুত্বপূর্ণ নৌপথসমূহের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোষ্ট স্থাপন এবং এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে পুলিশ ও আনসার বাহিনীকে অন্তর্ভূক্তকরণ। এই ২১ দিন সব নৌপথে বিকাল ৪টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত বালুবাহী নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং এই আদেশ বাস্তবায়নে সকল নৌপথের জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, র্যা ব, আনসার ও কোষ্টগার্ডকে সম্পৃক্তকরণ।সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযানে লাউড স্পিকারের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে আবহাওয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি ও নৌযানটির ধারণক্ষমতা সম্পর্কে ধারাভাষ্য প্রদান। সকল লঞ্চ টার্মিনাল, লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাটে ২১ দিন সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ঢাকার সদরঘাটসহ উল্লেখযোগ্য টার্মিনালগুলোতে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা স্থাপন।বিআইডব্লিউটিএ ও সমুদ্র পরিবহণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদ ও পূজার ছুটি বাতিল। এমএল পিনাক-৬ দুর্ঘটনার জন্য দৃশ্যমান দায়ী সমুদ্র পরিবহণ অধিদপ্তরের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকার মো. মুঈনউদ্দিন জুলফিকার, পরিদর্শক শফিক আইয়ুব ও বিআইডব্লিউটিএর মাওয়া নদীবন্দর কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।সমালোচনার ভয়ে প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত প্রতিবেদন ফাইলবন্দি না রেখে গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ সর্বসাধরণের বিশ্লেষণের জন্য আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিনাক-৬ এর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও নৌ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রদর্শন। পিনাক-৬ লঞ্চের নিহত ও নিখোঁজ যাত্রীদের প্রতি পরিবারকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার (প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল) থেকে ১০ লাখ টাকা করে সহায়তা প্রদান। গত ৩ মে দুর্ঘটনাকবলিত এমভি শাথীল-১ এর তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাহারপূর্বক বুয়েটসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন।