ঘুম ভেঙেই দেখি ঢাকায়!
মোঃ রাজিব হোসেন, ঢাকা : হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে যায়। ঘড়িতে তখন বাজে ৩টা ২০ মিনিট। চোখ খুলে বাইরে তাকিয়ে দেখি গাবতলী বাস টার্মিনালের ভেতরে আমরা অনেকেই বাসের মধ্যে বসে আছি। কিছুক্ষণের জন্য বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে এত তাড়াতাড়ি ঢাকায় এসে পৌঁছেছি। ভেবেছিলাম ঈদের ছুটি কাটিয়ে অধিকাংশ মানুষ শুক্রবার রওনা দেবে, তাই রাস্তায় জ্যাম হতে পারে। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। এমনটাই জানাচ্ছিলেন রাজশাহী থেকে আসা মোহাম্মদ ফুয়াদ নামের এক যাত্রী। পবিত্র ঈদুল আজহা ও পূজার ছুটি কাটিয়ে কোনো রকম দুর্ভোগ ছাড়াই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীতে ফিরছে নগরবাসী। গত দু-তিন দিনের থেকে শনিবার অবশ্য যাত্রীর সংখ্যা অনেকটা বেশি ছিল।
শনিবার সকালে গাবতলী ও টেকনিক্যাল বাস কাউন্টারে গিয়ে এসব চিত্র দেখা গেছে। শুক্রবার রাত ৮ থেকে ১২ পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে তীব্র যানযট ছিল। তবে যেসব যাত্রী রাজশাহী কিংবা রংপুর বিভাগের জেলাগুলো থেকে এদিন রাত সাড়ে ৯টা কিংবা ১০টার গাড়িতে ওঠেন তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এসে যানযট পাননি। ফলে খুব দ্রুত ঢাকায় পৌঁছাতে পারেন। মোহাম্মদ ফুয়াদ নামের ওই যাত্রী বলেন, ‘আমি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। এবারের ঈদে খুব বেশি ছুটি পাইনি। তাই কাজের জন্য প্রিয়জনদের ছেড়ে আসতে হয়েছে। রাজশাহী থেকে শুক্রবার রাত ৯টায় ঊষা পরিবহণের একটি বাসে যাত্রা শুরু করি। রাস্তায় কোনো জ্যাম না থাকায় খুব অল্প সময়ে ঢাকা এসে পৌঁছাতে পেরেছি।’ এবারের ঈদ কেমন কেটেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে গত ২ তারিখ সন্ধ্যায় রওনা হয়েছিলাম। যাওয়ার সময় খুব ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল। বাসের কোনো টিকিট না পাওয়ায় লোকাল বাসে ভেঙে ভেঙে যেতে হয়েছিল আমাকে। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পেরে সেই কষ্ট আর মনে নেই। সবার সঙ্গে ঈদ কাটানোর জন্য এই কষ্ট কিছুই না।’ তিনি বলেন, ‘আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী সবার সঙ্গে অনেক আনন্দ করেছি। যে আনন্দ ঢাকায় বসে কখনোই উপভোগ করা যেত না। তবে যাওয়ার মতো আসার সময় খুব একটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। তাই খুব ভালো লাগছে।’ জানা যায়, ভোররাত থেকেই একের পর এক বাস গাবতলীসহ অন্যান্য কাউন্টারে আসা শুরু করে। তাই যাত্রীরা কাউন্টারেই সকালের জন্য অপেক্ষা করা শুরু করে। ঊষা পরিবহণের এক চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘অন্যান্য ঈদের মতো এবার এখন পর্যন্ত যাত্রীদের তেমন চাপ দেখা যায়নি। তা ছাড়া রাস্তায় কোনো জ্যাম নেই।’ সেখানে গিয়ে জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ফেরির সংখ্যা কম থাকায় অতিরিক্ত বাস পারাপার করতে হিমশিম খাচ্ছে ফেরি কর্তৃপক্ষ। এদিকে গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকার নিরাপত্তাও জোরদার ছিল। সবখানে ডিএমপি ও জেলা পুলিশের পোশাক পরিহিত সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।