শান্তিতে নোবেল পেলেন পাকিস্তানি কিশোরী মালালা ও ভারতের কৈলাস
ডেস্ক রিপোর্ট : শিশু ও তরুণদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবদান রাখায় ১৭ বছর বয়সী পাকিস্তানি কিশোরী মালালা ইউসুফজাই এবং ভারতের শিশু অধিকার কর্মী কৈলাস সত্যার্থী এবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
নরওয়ের নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান থরবিয়ন জাগল্যান্ড শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য যৌথভাবে তাদের নাম ঘোষণা করেন। নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে শান্তি পুরস্কার পেলেন ১৭ বছর বয়সী মালালা। কয়েক বছর আগে তিনি তালেবানদের হামলার শিকার হন। সুস্থ হওয়ার পরও তিনি পাকিস্তানে নারীশিক্ষার উন্নয়নে কাজ চালিয়ে যান।
মালালা ইউসুফজাই হলেন পাকিস্তানে জন্ম নেয়া তৃতীয় নোবেলজয়ী এবং এ পুরস্কার পাওয়া ৪৭তম নারী। আর কৈলাস সত্যার্থীর আগে সাতজন ভারতীয় নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, শিশু-কিশোর ও তরুণদের ওপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই এবং সব শিশুর জন্য শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ এ দুজনকে শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।নরওয়ের নোবেল কমিটির প্রধান থরবিয়ন জাগল্যান্ড বলেন, একজন হিন্দু, অন্যজন মুসলমান। একদিকে একজন ভারতীয়, অন্যদিকে একজন পাকিস্তানি। একই লক্ষ্য নিয়ে, শিক্ষার অধিকারের দাবিতে এবং উগ্রবাদের বিরুদ্ধে তাঁরা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন, যা নোবেল কমিটির কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে।’ নারী ও শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে কাজ করার কারণে পাকিস্তানের তালেবান জঙ্গিগোষ্ঠীর চক্ষুশূলে পরিণত হন মালালা। ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় তালেবানের এক জঙ্গি তার মাথায় গুলি করে। তবে সৌভাগ্যক্রমে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরে আসেন মালালা।
তালেবানদের হামলার শিকার হওয়ার পর আলোচনায় আসেন মালালা। এরপর থেকেই তিনি নারী শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করছেন। অন্যদিকে কৈলাসের বয়স ৬০। বলা হয়ে থাকে তিনি মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ অনুসরণ করে চলেন। তিনি শিশু অধিকার নিয়ে শান্তিপূর্ণ অনেক প্রতিবাদ বিক্ষোভ কর্মসূচি সফল করেছেন। গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছেন। তার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে, ‘বাচপান বাঁচাও’ আন্দোলন।
নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, শিক্ষা পাওয়ার অধিকার সব শিশুরই আছে। তারা আর্থিক শোষণের শিকার হতে পারে না। তৃতীয় বিশ্বের ৬০ ভাগ মানুষের বয়স ২৫ বছরের কম। তাই শিশু ও তরুণদের উন্নয়নে কাজ করতে হবে, তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। এটা শান্তিপূর্ণ বিশ্বের উন্নয়নের পূর্বশর্ত।
গত বছরও নোবেল পুরস্কারের মনোনয়নে নাম ছিল মালালার। সেবার নোবেল না পেলেও জাতিসংঘ মানবাধিকার পুরস্কার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘শাখারভ’ মানবাধিকার পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি সম্মাননা পান এই পাকিস্তানি কিশোরী। কৈলাস সত্যার্থী তার নোবেল পুরস্কারকে উৎসর্গ করেছেন সেই শিশুদের জন্য, দারিদ্র্যের কারণে যাদের দাসত্বের জীবন কাটাতে হচ্ছে। নোবেল জয়ের খবরে সিএনএন-আইবিএনকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, যে শিশুরা আজো দাসত্বের জীবন কাটাচ্ছে, শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছে, অথবা পাচারের শিকার হচ্ছে-এই সম্মান তাদের সবার জন্য।
মালালার তার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, নোবেল পাওয়া খবর শুনে তিনি অভিভূত এবং একজন পাকিস্তানী হিসেবে এজন্য গর্বিত। যখন পুরস্কার ঘোষণা হয়, তখন তিনি রসায়ন ক্লাসে ছিলেন।কৈলাস সম্পর্কে নোবেল কমিটির মূল্যায়ন, তিনি গান্ধীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে শিশুশ্রম বন্ধের দাবিতে এবং আর্থিক লাভের জন্য শিশুদের ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলন চালিয়ে আসছেন অসম সাহসের সঙ্গে। শিশু অধিকার নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনভেনশনেও তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। মালালা সম্পর্কে নোবেল কমিটি বলেছে, বয়সে তরুণ হলেও গত কয়েক বছর ধরে তিনি নারী শিক্ষার অধিকার আদায়ে লড়াই চালিয়ে আসছেন। শিশু ও তরুণদের সামনে তিনি এই নজির গড়েছেন, যে নিজেদের অবস্থার উন্নয়নের চেষ্টায় তারাও অবদান রাখতে পারে। আর এই লড়াই তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে থেকে। পুরস্কার হিসেবে একটি করে সোনার মেডেল ও ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (১২ লাখ ৫০ হাজার ডলার) পাবেন মালালা ও কৈলাস। আগামী ১০ ডিসেম্বর অসলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।