সন্ত্রাস, সহিংসতা বিশ্বশান্তি ও প্রবৃদ্ধির পথে প্রধান অন্তরায়ঃ প্রধানমন্ত্রী
ডেস্ক রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব রকম সন্ত্রাস, সহিংসতা ও চরম পন্থার ব্যাপারে তার সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছেন, এ ধরনের সমস্যা বিশ্বশান্তি ও প্রবৃদ্ধির পথে প্রধান অন্তরায়।বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, তার সরকার সব ধরনের সন্ত্রাস ও সহিংসতার নিন্দা করে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার ইতালির মিলানে দশম আসেম শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী দিনে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যকার সংলাপ ও সহযোগিতাভিত্তিক এবং আসেমের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ শীর্ষক ‘রিট্রিট সেশনে’ ভাষণকালে এ কথা বলেন।বাসস জানিয়েছে, শেখ হাসিনা তার ভাষণে গত বছর বাংলাদেশের অগ্রগতি ও ধর্মনিরপেক্ষ নীতি ধ্বংস করতে সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি গ্রুপগুলোর বর্বর কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।প্রধানমন্ত্রী কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কোনো ব্যক্তি বা গ্রুপকে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে না-দেওয়ার তার সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তিনি সন্ত্রাস ও চরম পন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি কৌশল প্রণয়ন করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।সম্প্রতি গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি নৃশংসতার উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আবারও এ গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।শেখ হাসিনা কম কার্বন নির্গমন ও জলবায়ু-সহনশীলতা উন্নয়নের প্রতি তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির সম্মুখীন দেশগুলোর পক্ষ থেকে ব্যাপক হারে কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর প্রতি তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অঙ্গীকার পূরণের আহ্বান জানান।এ প্রসঙ্গে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, বাংলাদেশ কখনো উন্নয়নশীল বিশ্বে গড় মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের মাত্রা অতিক্রম করবে না।শেখ হাসিনা অঙ্গীকার পূরণে উন্নত বিশ্বের প্রতিশ্রুতি ও উদ্যোগের মধ্যে বিশাল ব্যবধানে ঢাকার উদ্বেগ প্রকাশ করেন।২০১২ ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত রিও+২০ শীর্ষক জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে উন্নত দেশগুলোর দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চেয়ে তিনি বলেন, সবার জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরির একটি স্বপ্ন ভাগাভাগি করতে তখন দেশগুলো একমত হয়েছিল।তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও দেশের উন্নয়ন বাজেট থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য বরাদ্দ দিতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের লাখ লাখ মানুষের জীবন ও সম্পদ এখনো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অব্যাহত ক্ষতির সম্মুখীন।তিনি আরো বলেন, ‘বারবার প্রবল বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ততা আমাদের উপকূলীয় জনজীবনকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর সবই জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের ফসল।’এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বসম্প্রদায়কে জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজনের ব্যয় এখনকার চেয়ে অনেক বেশি বাড়াতে হবে।শেখ হাসিনা বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য ‘অভিযোজন’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।তিনি বলেন, অভিযোজন থেকে বাংলাদেশ অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ জলবায়ু সহনীয় করতে অন্যদের সঙ্গে এ অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে প্রস্তুত রয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির সম্মুখীন দেশগুলোর অভিযোজন, প্রযুক্তি উন্নয়ন ও স্থানান্তর, সক্ষমতা অর্জন, কর্মপরিকল্পনার স্বচ্ছতা ও সমর্থনে ব্যাপক হারে এবং দ্রুত অর্থায়ন করা জরুরি।জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।তিনি বলেন, পাশাপাশি তার সরকার ৩২ লাখ ‘সোলার হোম সিস্টেম’ স্থাপন করেছে এবং দেশব্যাপী ১৫ লাখেরও বেশি রান্নার উন্নত মানের চুলা প্রদান করেছে। এ ছাড়া লবণাক্ততা-সহনীয় বিভিন্ন ধরনের শস্য উদ্ভাবন করেছে।প্রধানমন্ত্রী গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির সম্মুখীন দেশগুলোর পক্ষ থেকে উন্নত দেশগুলোর প্রতি তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও প্রচেষ্টা জোরদারে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন।