দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা
ডেস্ক রিপোর্টঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশই আছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে। পলেস্তারা খসে যাওয়া ছাদ ও ফেটে যাওয়া দেয়াল নিয়ে সংস্কারের অভাবে অনেক দিনের পুরনো এ সব ভবন ধসে পড়তে পারে যে কোন সময়!বুয়েটের বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলীরা সূর্যসেন, রোকেয়া, জহুরুল হক, ফজলুল হক ও জগন্নাথ হলের কিছু ভবনকে ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এই ভবনগুলো ভূমিকম্প বা মাঝারি মানের কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভেঙে পড়তে পারে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, সূর্যসেন, হাজী মুহাম্মদ মহসীন, জহুরুল হক ও শহীদুল্লাহ হল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এই হলগুলোতে নানা স্থানে ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে গিয়ে ভেতরের লোহার রড বের হয়ে গেছে।উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর জগন্নাথ হলের একটি ভবন ধসে ৩৯ জন শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘটে।শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র শাহিন এহসান লিমন বলেন, “হলের লাইব্রেরিতে বসে পড়ালেখা করাও বিপদজনক, প্রায়ই প্লাস্টার খসে পড়ে।”তিনি আরও জানান, যদিও ভবনটি সংস্কার করা হচ্ছে, তবু শিক্ষার্থীরা ভীতির মধ্যেই বসবাস করছেন।হাজী মুহম্মদ মহসীন হলের প্রধান ভবনেও বেশ কিছু ফাটল দেখা গেছে। গতবছর এই ভবনে টেলিভিশন দেখার সময় পলেস্তারা খসে আহত হয় কয়েকজন ছাত্র।হলের প্রভোস্ট আলী আক্কাস বলেন, “ভবনটি পুরনো হয়েছে বলে মাঝে মধ্যে ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে। তবে সংস্কারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে।”কিছুদিন আগে জহুরুল হক হলের এক অংশের ছাদ ভেঙে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস–চ্যান্সেলর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভবন সংস্কারের নির্দেশ দেন। সে বিষয়ে এখনও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।শিক্ষার্থীরা জানান, হলের কোনও অংশ ভেঙ্গে পড়লে সাময়িকভাবে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়, স্থায়ী সংস্কারের কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। ফলে পুরো ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণই থেকে যায়।প্রায় ১৬ মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো সংস্কার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ও তার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু হয়নি।বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর তিন বছরের এক সংস্কার প্রকল্প শুরু করার জন্য অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছেন।
এর আগে ২০১৩ সালের মে মাসে মন্ত্রণালয় সূর্যসেন, হাজী মুহাম্মদ মহসীন, জহুরুল হক ও শহীদুল্লাহ হল সংস্কারের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এ বছর জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় এই টাকার অনুমোদন দেয় ও এর সঙ্গে আরও ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান জীবন কুমার মিশ্র বলেন, বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংস্কার প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, প্রকল্পের খসড়াও তৈরি করা হয়েছে।ভাইস চ্যান্সেলর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, “সংস্কারকাজ শুরু হতে যাচ্ছে। প্রশাসনিক জটিলতা ও সীমাবদ্ধতা থাকায় সব হলের সংস্কারকাজ দ্রুত শেষ করে ফেলা যাবে না, কিছুটা সময় লাগবে।”