মাদকাসক্ত স্বামী অভিনেত্রী টুনির মৃত্যুর কারণ
বিনোদন ডেস্কঃ প্রয়াত জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের নাটক এইসব দিনরাত্রীর শিশু চরিত্র টুনির রূপদানকারী অভিনেত্রী নায়ার সুলতানা লোপার মৃত্যুর কারণ তার মাদকাসক্ত স্বামী। তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতের মাতাল স্বামী আলী আমিন। একে নিয়ে আতঙ্কেই ছিলেন লোপা ও তার স্বজনরা।লোপার করুণ মৃত্যুতে তার মা রাজিয়া সুলতানা এ অভিযোগ করেছেনগুলশান থানায় হত্যা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, প্রাথমিক তদন্তে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই হত্যা মামলা গ্রহণের পর ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড কি না তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে পুলিশ।এদিকে লোপার দুই শিশু সন্তান এখন তার নানীর কাছেই আছে। স্বজনরা জানিয়েছেন, মা হারা এ দুই শিশু সারাক্ষণই মায়ের জন্য কেঁদে অস্থির।নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক এইসব দিনরাত্রী-তে শিশুচরিত্র টুনিই হলেন এই লোপা। ওই নাটকে অসুস্থতার কারণে মৃত্যু হয় টুনির। সেই ঘটনাটি দাগ কেটেছিল লাখো দর্শকের মনে। নাটকের সেই টুনির (লোপা) বাস্তবেও করুণ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত বৃহস্পতিবার।গুলশান থানা পুলিশ ১ নম্বর সেকশনের ১২৩ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাসার সি/৩ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে তার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
ফ্যানের সঙ্গে গলায় কাপড় পেঁচানো অবস্থায় থাকলেও মৃতদেহের পা বিছানার ওপর লেগে ছিল। ঘটনার পরই নিহতের স্বজনরা দাবি করেন, মাদকাসক্ত স্বামী আলী আমিন এর জন্য দায়ী। এটি আত্মহত্যা নয়, লোপাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।ওই দিন গুলশান থানায় আলী আমিনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন লোপার মা রাজিয়া সুলতানা। পুলিশ আমিনকে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। তবে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর না করে আসামিকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।বাদী রাজিয়া সুলতানা তার অভিযোগে বলেন, ২০০০ সালে বিয়ের পর থেকে আমিন লোপার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতো। নির্যাতনের প্রধান কারণ ছিল মাদকাসক্তি। পরিবারের মান-সম্মানের কথা ভেবে লোপা স্বামীর সব নির্যাতনই সহ্য করেছেন।রাজিয়া সুলতার দাবি, ‘বৃহস্পতিবারও আমার মেয়েকে পিটিয়ে মুখে বিষ ঢেলে হত্যার পর ঝুলিয়ে রখেছে আমিন। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আসাদুজ্জামান বাংলামেইলকে বলেন, ‘বাদীর সব অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখছি। আগে নির্যাতনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে হয়ত ঘটনার দিন কী ঘটেছিল তা জানা যেত। ময়নাতদন্তে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা, নাকি হত্যা করা হয়েছে তা জানা যাবে।’লোপার স্বজনরা জানিয়েছেন, শ্বশুরের পরিবারের আশ্রয়েই ছিলেন আলী আমিন। তিনি লোপার বাবার মালিকানাধীন বেঙ্গল তোয়ালে ইন্ডাট্রিজে চাকরি করতেন। গুলশানের যে ফ্ল্যাটে তারা থাকতেন সেটিও লোপার নামে তার বাবা কিনে দিয়েছেন।ঘটনার পর সে ফ্ল্যাটে তালা ঝুলছে। লোপার মায়ের কাছেই আছে তার দুই সন্তান আনহা আমিন (৯) ও আজারী আমিন (৬)। মায়ের মৃত্যুর পর তারা ভেঙে পড়েছে। সারাক্ষণই কান্না করছে।পারিবারিক সূত্র জানায়,মেয়েদের সান্ত্বনা দিতে শুক্রবার আদালতে আমিনকে দেখতে যান শাশুড়ি রাজিয়া। মায়ের মৃত্যু আর বাবার হাজতবাসে দুই শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন উৎকণ্ঠায় তিনি।এদিকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর আমিন পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, ঝগড়া করে ফাঁস দিয়েছেন লোপা। অথচ ঘটনার সময় আমিন বাসায়ই ছিলেন না।