এক প্রাকৃতিক মহৌষধ হলুদ
লাইফস্টাইল ডেস্কঃ হলুদের গুণের শেষ নেই । কী রূপচর্চা, কী রোগ সারাতে- সবকিছুতেই খুব কার্য কর মাটির নিচের এই কন্দটি। হলুদ গাছের আদি উৎস দক্ষিণ এশিয়া হলেও এটি এখন বিশ্বের সর্বত্রই বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশেসহ দক্ষিন এশিয়ায় রান্নার অন্যতম একটি মশলা হলুদ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় তো হলুদ এক মহৌষধ। চীনারা হলুদকে ভাবে একটা হার্বাল পণ্য হিসেবে। রূপের যত্নে যে হলুদ অনন্য সে কথা আমরা জানি। হলুদ এ্যান্টিসেপটিক হিসাবেও কাজ করে।
আর কাঁচা হলুদের ঔষধি ব্যবহার জানা থাকলে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগকেও দূরে সরিয়ে রাখা যায়। এখনসময় পাঠকদের জন্য আজ তুলে ধরা হলো হলুদের এমন কিছু অবাক করা গুণাবলী যা সত্যিই বিষ্ময়কর।
২০০৮ সালে ‘ড্রাগস ইন আর অ্যান্ড ডি’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে হলুদে বিদ্যমান সারকিউমিন এক অসাধারণ দাওয়াই হিসেবে কাজ করে। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত ‘ফাইটোথেরাপি রিসার্চ’ প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, হলুদে থাকা পলিফেলন নামের আরেকটি উপাদান চোখের ‘ক্রনিক অ্যান্টিরিয়ার ইউভেইটিস’ নামক অসুখ সারাতে কর্টিকো-স্টেরয়েডের কাজ করে। এই রোগে চোখে প্রচন্ড জ্বালা আর প্রদাহ হয়। ২০০৩ সালে এক মেডিকেল প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ক্যান্সারজনিত প্রদাহের চিকিৎসাতে হলুদে থাকা এই স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। ২০১১ সালে করা এক গবেষণায় বলা হয়েছে, হলুদে বিদ্যমান সারকিউমিন মানসিক অবসাদ রোধে ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও এই উপাদানটিতে রয়েছে, অ্যাসপিরিনের গুণাবলী। এর প্রয়োগে ভ্যাসকুলার থ্রম্বোসিস আক্রান্ত রোগীর রক্তের ঘনত্বের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ক্যান্সার নিরাময়ে প্রচলিত কেমোথেরাপি চিকিৎসায় ব্যবহৃত অক্স্যালিপ্ল্যাটিনের সাথে হলুদের সারকিউমিনের তুলনা করা হয়। চিকিৎসকরা দাবি করেছেন, কলোরেক্টাল ক্যান্সারের চিকিৎসায় সারকিউমিন প্রয়োগে সফলতা পাওয়া গেছে। ২০০৯ সালের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, ডায়বেটিস রোগের চিকিৎসাতেও সারকিউমিনের প্রয়োগ কার্যকরী। যকৃতে গ্লুকোজের উৎপাদন ঠেকাতে হলুদের এই উপাদান থেকে তৈরি ওষুধ প্রচলিত ডায়াবেটিস রোধকারী মেটমোফিনের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী।
টোটকা চিকিৎসায় হলুদের জুড়ি নেই:
কাটা-ছেড়ায় হলুদ এন্টিসেপ্টিকের কাজ করে। এছাড়া দ্রুত রক্তক্ষরণ বন্ধ করতেও দারুণ কাজ করে। মুখের জ্বালা-পোড়ায় পানিতে হলুদের গুড়া মিশিয়ে কুলকুচি করলে তা উপশম হয়। শরীরে কোন অংশ পুড়ে গেলে পানি দিয়ে হলুদের গুড়ার পেস্ট তৈরি করে লাগালে উপকার পাওয়া যায়। হলুদ ফুলের পেস্ট চর্মরোগ সারাতে মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। হলুদ শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে দেয় না। গা ব্যাথা হলে দুধের সঙ্গে হলুদের রস মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া য়ায়। এছাড়া জয়েন্টের ব্যাথায় হলুদের পেস্ট তৈরি করে প্রলেপ দিলে উপশম হয়।
সর্দি-কাশি সারাতে হলুদ:
সর্দি-কাশি সারাতে হলুদের জুড়ি নেই। কাশি হলে এক টুকরো কাঁচা হলুদ মুখে দিয়ে চুষলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া গরম দুধের সঙ্গে হলুদের রস আর গোলমরিচ গুঁড়া মিশিয়ে পান করলে সর্দি-কাশি দ্রুত আরোগ্য হয়।
অন্ত্রের রোগ সারায় হলুদ:
অন্ত্রের রোগে হলুদ মহৌষধ। অন্ত্রের রোগ থেকে মুক্তি পেতে এক চামচ পরিমাণ কাঁচা হলুদের রস পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন খান। অন্ত্রের রোগ সেরে যাবে। আবার ডায়রিয়া সারাতেও হলুদ অনন্য।
লিভারকে রাখে কর্মক্ষম:
নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় অনেক বেশি। তাই সহজেই রোগ-ব্যাধী আক্রমন করতে পারে না। এটি লিভারের সুস্থতায় কার্যকর বস্তু। তাই নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে জন্ডিসের মতো লিভারজনিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। অনেকে হলুদের রঙের জন্য এটাকে জন্ডিসের কারণ বলে মনে করলেও এটা সম্পূর্ণ একটা ভুল ধারণা বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রমাণিত। উল্টো লিভার ড্যামেজ বা লিভার সিরোসিস হওয়ার পথে দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় হলুদ।
ক্যান্সার প্রতিরোধক:
হলুদের মধ্যে আছে ফিনোলিক যৌগিত কারকিউমিন যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। ঘাতক রোগটি শরীরে সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। হলুদ দিয়ে ফুলকপি রান্না করে খেলে তা গল ব্লাডারের ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে। হলুদ ব্রেস্ট ক্যান্সারকে ফুসফুস পর্যন্ত ছড়িয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
রক্তশূণ্যতা দূর করে:
এটা শৈশবে লিউকোমিয়ার ঝুঁকি কমায়। হলুদ দেহের রক্ত পরিষ্কার করে বলে বিশ্বাস আর্য়ুবেদ শাস্ত্রের। রক্তের ঘাটতি বা রক্তশূন্যতা দেখা দিলে হলুদ বাটা খেলে উপকার পাওয়া যাবে। হলুদ রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। সকালে এক চামচ কাঁচা হলুদের রস ও সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে রক্তশূন্যতা দূর হবে।
ত্বকের বন্ধু হলুদ:
সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে হলুদের জুড়ি নেই। ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকের চিকিৎসা বা ত্বকে অ্যালার্জির প্রকোপ লাঘবে কাঁচা হলুদের রস ভাল কাজ দেয়। এছাড়া হলুদের প্যাক তৈরি করে মুখে ও হাতে-পায়ে লাগানো যায় যা আপনাকে সহজেই করে তুলবে আকর্ষণীয় ও সজীব ত্বকের অধিকারী। রোদে পোড়া দাগ, বয়সের বলিরেখা, ত্বকের ছোপ ছোপ কালো দাগ দূর করতে কাঁচা হলুদের সাথে সামান্য পরিমান শসার রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে রাখুন পনেরো-বিশ মিনিট। কিছুদিনের মাঝেই দাগ দূর হবে। ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়বে। হলুদের সঙ্গে চন্দন মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হয়। ত্বক রোদে পুড়ে গেলে হলুদ গুড়ার সঙ্গে বাদামের চূর্ণ ও টক দই মিশিয়ে লাগালে ত্বক আবার সজিব এবং সতেজ হয়ে ওঠে।