সীমান্তের ৩৩ পথে ঢুকছে ইয়াবা!
কাজী আমিনুল হাসানঃ মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পথে বাংলাদেশে আসছে সর্বনাশা নেশার ট্যাবলেট ইয়াবা। বিশেষ করে কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির প্রায় ৩৩টি সীমান্ত পথ দিয়ে এগুলো দেশে ঢুকছে।পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও পার্বত্য অঞ্চলের সড়ক-উপসড়ক এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের সমুদ্রপথ। মিয়ানমারের মাফিয়া চক্র দেশীয় শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি পাচার করছে। দেশীয় চোরাচালানী ও প্রভাবশালীরা নিত্যনতুন কৌশলে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে।বিভিন্ন সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশে ইয়াবার এতো বেশি চাহিদা যে মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে ২৭টি কারখানা গড়ে উঠেছে
এ সুযোগে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হচ্ছে নকল ইয়াবা ট্যাবলেট।মিয়ানমারের এসব কারখানায় উৎপাদিত বেশিরভাগ ইয়াবা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, হ্নীলা, জালিয়াপাড়া, নজির পাড়া, নয়াপাড়া, মৌলভীপাড়া, হোয়াইকং, আলিহালী, নাইট্যাং পাড়া, উখিয়ার পালংখালী, বালুখালী, উলুবনিয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, তুমরু ও ঘুমধুমসহ বিভিন্ন সীমান্ত পথে দেশে ঢুকছে।সড়ক পথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থানের কারণে চোরাচালানকারীরা রুট পরিবর্তন করে ইয়াবা পাচার করছে। বর্তমানে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে সাগর পথ। সাগর ও নদী পথে ইয়াবার চালান যাচ্ছে চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া সড়ক পথেও কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লা হয়ে ঢাকাসহ অন্যান্যস্থানে চলে যাচ্ছে ইয়াবা।পুলিশ জানায়, নীল, লালসহ বিভিন্ন রংয়ের ২শ’টি ট্যাবলেট প্যাকেটজাত করে পাচার করা হয়। সীমান্ত ও কক্সবাজার এলাকায় প্রতি পিস ট্যাবলেটের দাম ১৮০-২০০ টাকা। চট্টগ্রামে এটির দাম ৫শ’ টাকা পর্যন্ত হয়। ইয়াবা পাচারের নেতৃত্বে রয়েছে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষসহ দেশীয় মাদকচক্র ও ব্যবসায়ীরা। আর এ ব্যবসার নেপথ্যে জড়িত রয়েছেন প্রভাবশালীরা।ইয়াবা পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে যুবসমাজ ও অভাবী নারী-পুরুষকে। পাচারকারীরা কখনো যাত্রীবেশে, কখনো ভিক্ষুক-প্রতিবন্ধী সেজে ইয়াবা পাচার করছে। কক্সবাজার থেকে প্রাইভেট গাড়ি, মাইক্রোবাস, দূরপাল্লার বাস, এ্যাম্বুলেন্স ও মালবাহী ট্রাকের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে ইয়াবা।
সূত্র মতে, সড়ক পথে কক্সবাজারের উখিয়া থেকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ১৮টি চেকপোস্ট রয়েছে। আর সাগর পথে রয়েছে কোষ্টগার্ড। এসব চেক পোস্টে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তীক্ষদৃষ্টি থাকার পরও পাচারকারীরা কৌশল পাল্টে ইয়াবা পাচার করছে।
প্রতিদিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে হাজার হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট। মাসে সীমান্ত দিয়ে শত কোটি টাকার ইয়াবা চালান দেশে ঢুকছে এবং হুন্ডির মাধ্যমে ইয়াবা বিক্রির কোটি কোটি টাকা মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ইতিমধ্যে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও মিয়ানমার কেন্দ্রিক শতাধিক হুন্ডিচক্রের সন্ধান পেয়েছে।
লোহাগাড়া থানা সূত্র জানায়, গত ৬ মাসে এ উপজেলায় ২ লক্ষাধিক পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও শতাধিক পাচারকারীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতদের অধিকাংশ রোহিঙ্গাসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, লোহাগাড়া ও অন্যান্য এলাকার নারী-পুরুষ।
এ ব্যাপারে স্থানীয় থানার এসআই সোলাইমান জানান, সোর্সের মাধ্যমে উপজেলার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে ইয়াবা ট্যাবলেট বহনকারীদের ধরা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ইয়াবার ছোট চালান ধরা পড়লেও নেপথ্যে থাকা চোরাচালানকারী ও প্রভাবশালীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
লোহাগাড়া থানার ওসি মো. শাহজাহান পিপিএম জানান, চোরাচালানকারীরা এখন নিরাপদ রুট হিসেবে বেশি ব্যবহার করছে সাগর পথ। তারা টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা নাগরিক, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের নারী-পুরুষকে ব্যবহার করছে। তবে আটক পাচারকারীদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, ইয়াবা নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য। দীর্ঘদিন এটি সেবনে ক্যান্সারসহ নানা মারাত্মক রোগ হয়।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শরফরাজ খান চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ইয়াবায় ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ‘এমফিটামিন’ (Amphitamine) রয়েছে। এটি সেবনে ব্রেইন ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার জানান, ইয়াবার সাথে কোন আপস নেই। এটি পাচার রোধে জেলার সবকটি থানাকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।