সিরিজ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ অধিনায়ক
স্পোর্টস ডেস্কঃ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সোমবার শুরু হওয়া দ্বিতীয় টেস্ট যখন মাঠে গড়াবে তখন মুশফিকুর রহিম এবং হাবিবুল বাশার একই কাতারে অবস্থান করবেন। বাংলাদেশের এই দুই অধিনায়ক ১৮টি করে টেস্ট ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন (জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টসহ)। বাশারকে সোমবারই ছুঁয়ে ফেলবেন তিনি। রবিবার সকাল থেকেই দাঁতে দাঁত চেপে অনুশীলন করেছেন মুশফিকরা। আর অনুশীলন পর্ব শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন অধিনায়ক মুশফিক।
খুলনায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টেই সিরিজ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এখানেই সিরিজ জিততে চাই। যে পরিকল্পনা করেছি তা যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন করতে চাই।’
টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১০তম। তবে জিম্বাবুয়ে যখন বেশ কিছুদিন নিজেদের টেস্ট খেলা থেকে বিরত রেখেছিল তখনই শুধু র্যাঙ্কিংয়ের ৯-এ উঠেছিল বাংলাদেশ। এবার সুযোগ থাকছে জিম্বাবুয়েকে টপকে র্যাঙ্কিংয়ের উপরে ওঠার। এই বিষয়ে মুশফিকুর রহিম বলেছেন, ‘চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই আছে। প্রতিটা ম্যাচ জয়ের জন্যই খেলব। প্রথম টেস্ট আমরা জিতেছি। দ্বিতীয় টেস্টেও সবাই পারফর্ম করার জন্য মুখিয়ে আছে। বোলিং-ফিল্ডিং-ব্যাটিং ৩টা বিভাগে আমরা যেন ভাল করতে পারি সেভাবেই কাজ করছি। আমার মনে হয়, আমরা যদি এই ৩টা বিভাগে ভাল করি তবে রেজাল্ট আসবে। আর রেজাল্ট আসলে র্যাঙ্কিংয়ে অবশ্যই উন্নতি সম্ভব।’
প্রথম টেস্টে ব্যাটসম্যানরা বাজে কিছু শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন, এ ক্ষেত্রে কোন জায়গাগুলোতে কাজ করেছেন আপনারা? এমন প্রশ্নে মুশফিক বলেছেন, ‘যে কোনো টেস্টেই একটা দুইটা বাজে আউট থাকতেই পারে। এটা যে কোনো বড় দলেই হয়ে থাকে। আমাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় ৫-৬ জন ব্যাটসম্যান খুব দ্রুত আউট হয়ে যায়। এটা আতঙ্কের। আমার মনে হয়, মনোযোগে একটু সমস্যা রয়েছে। আমরা সে জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি।’
প্রথম টেস্টে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের খুব ভালভাবেই ভুগিয়েছে বাংলাদেশের স্পিনাররা, এবারও তেমন পরিকল্পনা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘জিম্বাবুয়ে কোন সহজ প্রতিপক্ষ নয়। শেষ ইনিংসে ১০০ রানে যেভাবে ফাইট দিয়েছে, যদিও আমাদের ব্যাটসম্যানদের কিছু ভুল ছিল। ওরাও জানে আমাদের বোলিং অ্যাটাক কেমন, কে কি রকম বোলিং করে, কোন পরিকল্পনায় বল করে। আমরাও জানি ওদের ব্যাটসম্যানরা কোথায় কে রান করে। আমরা চেষ্টা করব যেভাবে পরিকল্পনা করব ঠিক যেন সেভাবেই তা বাস্তবায়ন করতে পারি।’
দলে কোনো পরির্বতন হচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে মুশফিক বলেছেন, ‘খুব বেশি পরিবর্তন যে হবে তা নয়। কাল টস অবধি দেখব। আমাদের টিম কম্বিনেশন অনেক ভাল। যদিও প্রথম টেস্টে অনেকে পারফর্ম করতে পারেনি। তারা যদি সুযোগ পায় তবে এই টেস্টে ভাল করবে।’
জিম্বাবুয়ের স্পিন আক্রমণ নিয়ে কতটুকু শঙ্কিত এমন প্রশ্নে মুশফিক বলেছেন, ‘খুলনা এবং চট্টগ্রামের সঙ্গে তুলনা করলে মিরপুরের উইকেট একেবারে আলাদা। খুব বেশি বাউন্স পায় না এমন উইকেটে। মিরপুরের উইকেটে যে বাড়তি বাউন্স ছিল আমার মনে হয় না এখানে তা হবে। আমাদের পেসাররা যে খারাপ করেছে তা নয়। দ্রুত দুটি ইনিংসে যে ব্রেকথ্রো দেওয়ার দরকার ছিল তা করতে পেরেছে পেসাররা। স্কিল ওয়াইজ আমাদের যে পরিকল্পনা ছিল তা সফল হয়েছে। আশা করব দ্বিতীয় টেস্টে পেস বোলাররা একই কাজ করবে। আর স্পিনাররা তাদের কাজ অব্যাহত রাখবে।’
স্পিন বোলিংয়ে বেশ কিছু দুর্বলতা দেখা গেছে এমন প্রশ্নে দ্বিমত পোষণ করেছেন টেস্ট অধিনায়ক মুশফিক। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের স্পিনের সঙ্গে ওদের স্পিনের অনেক পার্থক্য রয়েছে। কারণ আমাদের স্পিনাররা অনেক অভিজ্ঞ। সাকিবের মতো বিশ্বখ্যাত বোলার আছে। তাইজুলের মতো বোলার রয়েছেন। দুই টেস্টে দুইবার ৫ উইকেট নিয়েছে। জুবায়ের খুব ভাল ফর্মে আছে। ওদের স্পিনাররা অনেক অনভিজ্ঞ। তা প্রথম টেস্টিই দেখা গেছে।’
দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে পারেন এনামুল হক বিজয়। পরিষ্কার করে কিছু না বললেও এই ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ‘বিজয়ের খেলার সুযোগ আছে। কারণ শেষ টেস্টেই বলেছিলাম আরেকটা ব্যাটসম্যান খেললে ভাল হয়। আশা করছি সে খেলবে। সে যদি খেলে তাহলে মিডল অর্ডারেই খেলবে। ওপেনিংয়ে জুটি ঠিক আছে। আশা করি, তামিম ও শামসুর রহমান এই টেস্টে ভাল খেলবে। শেষ টেস্টে খারাপ করেছে কিন্তু তারা বেশ ফর্মে রয়েছে। ওটা নিয়ে শঙ্কিত নই। আর বিজয় যদি সুযোগ পায় তাহলে সেও ভাল খেলার চেষ্টা করবে।’
খুলনায় দ্বিতীয় টেস্টেই সিরিজ নিশ্চিত করতে চান কিনা এমন প্রশ্নে মুশফিক বলেছেন, ‘আমরা যে ধরনের দল এ বছর সে ধরনের ফল পাইনি। অনেক ম্যাচ ছিল যেখানে জয় পাওয়ার কথা কিন্তু আমরা হেরে গেছি। সেদিক থেকে বলব, খুলনা টেস্টে সেই সুযোগ আছে। এখন আমাদের প্রতিটি ম্যাচ জয়ের জন্য সুযোগ তৈরি করতে হবে। আর সেগুলো হাতছাড়া করা যাবে না। এই টেস্টটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রত্যেকটি ম্যাচ জিততে চাই। আসলে সিরিজটি যেন এখানেই জেতা যায় সে চেষ্টাই করব আমরা।’
আপনি ৬ নাম্বারে ব্যাটিং করছেন, দ্বিতীয় টেস্টে নিজের ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন নিয়ে ভাবছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘হ্যাঁ, ৫ নাম্বারে ব্যাটিং করা যায়। আমি একবার ৫ নাম্বারে ব্যাটিং করেছিলম। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। আমার আগে যে পাঁচ ব্যাটসম্যান আছে তারা যথেষ্ট ভাল। ওরা ভাল একটা শুরু এনে দিলে পরে নেমেও আমি ভাল করার চেষ্টা করব।’