কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার
মোরশেদ ইকবালঃ অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বিষয়ে আবারো কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সাধারণ ক্ষমার আওতায় সুযোগ গ্রহণ করে জরিমানা দিয়ে দেশে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। এ হিসেব অনুযায়ি সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে বা গ্রেফতার হয়ে জানুয়ারিতে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসতে হবে কয়েক লাখ বাংলাদেশিকে।আবার মালয়েশিয়ায় সরকারি পদ্ধতিতে চালু হওয়া জিটুজি পদ্ধতিও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় গতি পাচ্ছে না।
জিটুজি-কে অকার্যকর করতে তৎপর দালালরাও। এমন পরিস্থিতিতে আজ সোমবার মালয়েশিয়ায় শুরু হচ্ছে জনশক্তিবিষয়ক দুদেশে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক। দুদিনের এ বৈঠকে বাংলাদেশের দাবি থাকবে জিটুজির গতি ও পরিধি বাড়ানো এবং অবৈধদের মধ্যে যারা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত আছেন তাদের বৈধ করে নেওয়ার।জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৫ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মালয়েশিয়া সরকারের ৬-পি কর্মসূচির আওতায় দুই লাখ ৬৮ হাজার ৮৮৩ জন অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী বৈধতা লাভের সুযোগ পান। তবে তখন অনেক কর্মী দালালদের অর্থ দিয়েও বৈধ হতে পারেননি। প্রায় লক্ষাধিক বাংলাদেশি থেকে যান অবৈধ হিসেবে। এ ছাড়া পর্যটন ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে থেকে যাওয়া, জাহাজে করে অবৈধভাবে থেকে যাওয়াদের সংখ্যাও ক্রমেই বাড়তে থাকে। এসব প্রক্রিয়ায় কয়েক লাখ বাংলাদেশি বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবৈধ হয়ে আছেন। তাদের অবস্থাও করুণ। কাজ পাচ্ছেন না। আবার স্বল্প মজুরির কাজ পেলেও করতে হচ্ছে পালিয়ে। বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়িয়ে তাদের বৈধ করার চেষ্টা করলেও মালয়েশীয় সরকার এখনো কোনো আশ্বাস দেয়নি। এর ওপর অবৈধদের কোনো ধরনের কাগজপত্র নেই। তাই তারা বাংলাদেশি, নাকি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা, তাও বোঝা যাচ্ছে না। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, রিক্রুটিং এজেন্টদের প্রতারণার কারণে ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রাখে মালয়েশিয়া। ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর জিটুজি পদ্ধতিতে লোক পাঠানোর চুক্তি হওয়ার পর বন্ধ শ্রমবাজার ফের চালু হয়। মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে চাকরি ও বেতনের নিশ্চয়তা নিয়ে সরকারিভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু জিটুজির গতি অত্যন্ত শ্লথ। এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচ হাজার কর্মী এ প্রক্রিয়ায় পাঠানো সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে, দালালরা কম বেতনে কর্মী সরবরাহ করায় জিটুজি পদ্ধতির বাইরে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্টের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কোম্পানি আগ্রহী। এতে কর্মীদের কাছ থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ দালালদের হাতে চলে যায়। তাই দালালরা মালয়েশিয়ার নিয়োগকারীদের ম্যানেজ করে স্টুডেন্ট বা ভিজিট ভিসা অথবা পেশাজীবীর নামে অর্ধেকের চেয়েও কম বেতনে কর্মী পাঠানো অব্যাহত রেখেছে। ফলে আগে যে কারণে শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেই একই পরিস্থিতি আবারও দেখা দিতে পারে। এদিকে, বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে মালয়েশিয়া জিটুজি পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ করে না। নিয়োগকারীরা ভারত, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করছে। বিশেষ করে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ব্যাপকভাবে দখলে নিচ্ছে নেপাল। শুধু বনায়ন খাতে অন্য কোনো দেশের কর্মীরা আসতে চায় না বিধায় এ খাতে বাংলাদেশিদের পাঠানো সম্ভব হয়েছে। যদিও অন্য খাতে শ্রমিক নেওয়ার কথা মালয়েশিয়া বলেছে কিন্তু কোনো চাহিদাপত্র দেওয়া হয়নি। ফলে বাংলাদেশ থেকে জিটুজি পদ্ধতি শ্লথই থেকে যায়। অন্যদিকে মালয়েশিয়া সেবা খাত থেকে বিদেশি কর্মীদের সরিয়ে পর্যায়ক্রমে নিজ দেশের লোকদের নিযুক্ত করার দীর্ঘমেয়াদি নিয়ম চালু করতে যাচ্ছে। এ নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে জনশক্তি-সংক্রান্ত ইস্যুতে যে ধরনের সমস্যা হচ্ছে, সেগুলো দেখাশোনা করার জন্য কারিগরি পর্যায়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ কার্যকর রয়েছে। এ কমিটিই আজ সোমবার ও আগামীকাল মঙ্গলবার কুয়ালালামপুরে বৈঠকে বসবে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব খোন্দকার শওকত হোসেন জানান, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে চেষ্টা থাকবে অবৈধ ইস্যু সমাধানের। যারা কাজে যুক্ত আছেন তাদের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। আলোচনা হবে জিটুজির গতি বাড়ানোর বিষয়েও। অবশ্য আগামী জুনের মধ্যে আরো ২০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠানো সম্ভব হবে বলে আশা হচ্ছে। এর মধ্যে সারওয়াক প্রদেশে যাবেন ১২ হাজার। তাদের বেতন নিয়ে আলাদা চুক্তির বিষয়েও কথা হবে। বনায়নের বাইরে নতুন খাত খুলে দেওয়ার কথা মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে। তাই অন্য খাতে কর্মী প্রেরণের বিষয়গুলোও উঠবে বৈঠকে। নারী কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে হাউস ম্যানেজার পদে নিয়োগের বিষয়ও বৈঠকে চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।